দুর্দান্ত একটি বছর কাটিয়েছেন বলেও মনে করেন ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাব জেতা আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসি। বর্ষসেরার পুরস্কারটি নিলেন। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন অপলক। এরপর কথা শুরু করতেই শুরু করতালি। ক্ষণিক বিরতি দিয়ে, স্মিত হেসে মেসি শান্ত সুরে ব্যক্ত করলেন অনুভূতি। সেখানে আবারও প্রকাশ পেল বছরের পর বছর তাড়া করে ফেরা স্বপ্ন পূরণের উচ্ছ্বাস। প্যারিসে গত সোমবার ‘দ্য বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ডস’ অনুষ্ঠানে পুরস্কারটির বিজয়ী হিসেবে মেসির নাম ঘোষণা করা হয়।
এ নিয়ে সপ্তমবার ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি পেলেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। বিশ্ব সেরার মঞ্চে দেশের ৩৬ বছরের শিরোপা খরা ঘুচিয়ে বর্ষসেরা ফুটবলার হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন মেসিই। কাতার বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্য পারফর্ম করা কিলিয়ান এমবাপের সম্ভাবনাও দেখছিলেন অনেকে। তাকে এবং আরেক ফরাসি তারকা করিম বেনজেমাকে হারিয়ে ২০২২ সালের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি ‘দা বেস্ট ফিফা মেন’স প্লেয়ার অ্যাওয়ার্ড’ জিতলেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা।
অনুভূতি জানাতে এসেও তার কণ্ঠে ভর করল আবেগ। কৃতজ্ঞতা জানান, স্বপ্ন পূরণের অভিযানে পাশে পাওয়া সতীর্থদের। ‘ওয়াও, অকল্পনীয়। দুর্দান্ত একটি বছর কাটিয়েছি ও এখানে থাকতে পারা এবং এই পুরস্কার জেতা আমার জন্য সম্মানের। সতীর্থদের ছাড়া এখানে থাকতে পারতাম না আমি। দীর্ঘদিন ধরে যে স্বপ্নটি দেখেছি, সেটা অবশেষে পূরণ করতে পেরেছি। খুব কম মানুষেই এটা পূরণ করতে পারে এবং স্বপ্নটা পূরণ করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।’ ‘সবশেষ এই সুন্দর মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষা করে থাকা পরিবার এবং আর্জেন্টিনার মানুষদেরকে ধন্যবাদ জানাতেই চাই এবং এই স্মৃতি আজীবন মনে থাকবে আমার।’
বিভিন্ন নামে ১৯৯১ সাল থেকে বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার দিয়ে আসছে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থাটি। শুরু থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ‘ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অব দা ইয়ার’ নামের পুরস্কারটি একবার জেতেন মেসি, ২০০৯ সালে। সেই থেকে শুরু সেরার মঞ্চে এই মহাতারকার আধিপত্যের। পরের ছয় বছর ফরাসি ম্যাগাজিন ‘ফ্রান্স ফুটবল’ আর ফিফা মিলে দেয় ফিফা ব্যালন ডি’র। এই পুরস্কারটি মেসি জেতেন ২০১০, ২০১১, ২০১২ ও ২০১৫ সালে। এরপর বর্তমানের ‘দ্য বেস্ট’ নাম দেয় ফিফা, ২০১৯ সালের পর যা এবার আবারও জিতলেন তিনি। সেরার লড়াইয়ে ২০২১ সালে ৮ অগাস্ট থেকে ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিবেচিত সময়ে ক্লাব ফুটবলে আহামরি কিছু যদিও করতে পারেননি মেসি। দীর্ঘ দিনের ঠিকানা বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দেয়ার পর দলটির হয়ে প্রথম মৌসুম তার ভালো না কাটেনি। ২০২২-২৩ মৌসুমের শুরু থেকেই অবশ্য সেখানে আলো ছড়াতে শুরু করেন তিনি। একের পর এক করতে থাকেন গোল ও অ্যাসিস্ট। তবে পুরুষ ফুটবল জাতীয় দলের কোচ ও অধিনায়ক, সাংবাদিক এবং ফিফার ওয়েবসাইটে দেয়া ফুটবলপ্রেমীদের ভোটে ফের ‘দা বেস্ট মেন’স প্লেয়ার’ হওয়ার পেছনে যে জাতীয় দলে তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সই মূল ভূমিকা রেখেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আরও বিশেষ করে বললে, কাতার বিশ্বকাপে যে চোখধাঁধানো পারফরম্যান্সে দেশকে বসিয়েছেন সেরার আসনে।
বিশ্বকাপ অভিযান শুরুর ম্যাচে গোলের দেখা পান মেসি। সৌদি আরবের বিপক্ষে যদিও ওই ম্যাচে অঘটনের শিকার হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়ার শঙ্কা জাগে আর্জেন্টিনার। পরের সব ম্যাচ তাদের জন্য হয়ে ওঠে নকআউটের লড়াই। সেই কোণঠাসা অবস্থা থেকেই মেসি ও আর্জেন্টিনার স্বপ্নের পথে যাত্রার শুরু। পরের ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষেও অনেকটা সময় আর্জেন্টিনার পারফরম্যান্স ছিল ভীষণ সাদামাটা। দুর্দান্ত এক গোলে দলকে পথ দেখান মেসি। পুরো বিশ্বকাপে একমাত্র গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষেই জালের দেখা পাননি তিনি। ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে করেন জোড়া গোল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭ গোল ও ৩টি অ্যাসিস্ট করেন মেসি। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে নেন ৩৫ বছর বয়সি তারকা।
টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফিফার বর্ষসেরা নারী ফুটবলারের পুরস্কার জিতলেন আলেক্সিয়া পুতেয়াস। ইংলিশ ফুটবলার বেথ মিড ও যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালেক্স মর্গ্যানকে হারিয়ে পুরস্কারটি জিতলেন বার্সেলোনার স্প্যানিশ মিডফিল্ডার পুতেয়াস। ২০২১ ও ২০২২ সালের ব্যালন ডি’অরও জিতেছেন ২৯ বছর বয়সি এই ফুটবলার।