সমন্বয়ের অভাব নিয়েই যুব গেমস শেষ

প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এম.এ. বাকী

‘ডিজিটাল বাংলাদেশের’ পর প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য এবার ‘স্মার্ট দেশ’ গড়ে তোলার। পুরো পৃথিবীই এখন চলছে ডিজিটালের ওপর। সেই দিক দিয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ)। বিওএ এখনো এনালগ যুগেই রয়ে গেছে। ভবিষ্যৎ খেলোয়াড় তৈরির জন্য বিওএ ২০১৮ সালে শুরু করেছে যুব গেমস। শেখ কামাল দ্বিতীয় যুব গেমসের চূড়ান্ত পর্ব ২৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে আজ শেষ হচ্ছে। কিন্তু দুখের বিষয় বিওএ নিজেদের ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করাতে পারেনি। গেমসে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দিয়েছে হাতে লিখে। পৃথিবীর কোন দেশে এখন আর হাতে লিখে কার্ড দেয়া হয় না। এই বিষয়ে কথা হয় অ্যাক্রিডিটেশন কমিটির চেয়ারম্যান ও বিওএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং আর্চারি ফেডারেশনের সভাপতি লে. জে. (অব.) মো. মইনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার নামের বানানই ভুল করেছে। কাকে বলব? দেখুন গেমস উপলক্ষ্যে স্টিয়ারিং কমিটি রয়েছে। তাদের কাজ হলো প্রতিটি সাব-কমিটির চেয়ারম্যাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সভা করা। জানেন, দুঃখের বিষয় একটি সভাও করেনি। কোথায় সমস্যা রয়েছে তা কাকে বলব? কথা শোনার কেউ নেই। মইনুল অভিমান করেই আরো বলেন, বিওএতে একজনই আছেন যিনি সব কিছু করতে চান। কাউকে পাত্তাও দেন না। গেমস চালাতে হলে সবার সম্বন্বয় প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেটা দেখতে পারছি না। খেলোয়াড় ও কর্তাদের জন্য যে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেয়া হয়েছে তা আরো অবাক করার মতো। প্রতিটি ফেডারেশনে ব্লাঙ্ক কার্ড দিয়ে দেয়া হয়েছে। ফেডারেশন সেই কার্ডে নাম হাতে লিখে দিয়েছে। তবে বিওএতে যেন দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার কেউ নেই। কারণ, কার্ডের মধ্যে ‘ফেডারেশন’ বানানই ভুল করেছে। বিওএ লিখেছে ‘ফেডারশন’। কতটা দায়িত্ব অবহেলা করেছে কমিটিতে থাকা কর্তারা। আরেকটি সূত্র জানায়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিআইপিতে বসা অতিথিদের কাছে দেয়া হয়েছিল একটি করে সুভেনির। কিন্তু সেই সুভেনিরে মারাত্মক ভুল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বাণী অনেক পেছনে ছাপা হয়েছে। এটা নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিল ভিআইপিতে বসা অতিথিরা। কারোই চোখ এড়ায়নি এই ভুলটি। বিষয়টি টের পেয়ে বিওএ তরিগড়ি করে সবার কাছ থেকে বইটি নিয়ে যায়। এবং বিওএ বলেছে সংশোধন করে পরে দেয়া হবে। সূত্র জানায়, এই ভুলটি আসলে হয়েছে বইটি বান্ডিংয়ের সময়ে। প্রশ্ন উঠেছে যারা এই কমিটির দায়িত্বে আছেন তাদের কাজ কি ছিল? অথচ অনেকে কমিটিতে থাকার জন্য তারাই লবিং করে থাকেন।

যুব গেমস উপলক্ষ্যে একটি শক্তিমালী মিডিয়া কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির ওপরই নির্ভর করে গেমসের সাফল্য। কিন্তু মিডিয়া কমিটি প্রতিনিয়তই ভুল প্রেস রিলিজ পাঠাচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিসপ্লে করেছে ‘ভারতেশ্বরী হোমস’। কিন্তু আগের দিন প্রেস রিলিজ পাঠিয়েছিল ডিসপ্লে করবে ‘ভারতীয় হোমস’। মিডিয়া কমিটি ঠিক ভাবে তথ্য না জেনেই প্রেস রিলিজ পাঠাচ্ছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশে ‘মিডিয়া কমিটিতে বিতর্কিত ব্যক্তি’ এই শিরোনামে নিউজ ছাপা হলে তাকে দেয়া হয়নি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কভার করার কার্ড। শুধু তাই নয়, মিডিয়া কমিটিতে রাখা হয়েছে একজন ল্যাপটপ চোরকেও। ২০১০ সালে চীনের গুয়াংজুতে অনুষ্ঠিত হয়েছে এশিয়ান গেমস। গেমসটি কভার করতে গিয়েছিলেন বাসসের সিনিয়র সহ-সম্পাদক (সাব এডিটর) স্বপন বসু। ওই দিনটি ছিল ২৫ নভেম্বর-২০১০ সাল বৃহস্পতিবার। স্বপন বসু যে ল্যাপটপ চুরি করেছিলেন, তা নিয়ে ‘দৈনিক জনকন্ঠ’ ও দেশের শীর্ষস্থানীয় অন লাইন নিউজ পেপার ‘বাংলানিউজ২৪ ডট কম’ এ ২৫ নভেম্বর নিউজ ছাপা হয়েছিল। স্বপন চীনের এক সাংবাদিকের ল্যাপটপ চুরি করেছিলেন। সিসিটিভি ভিডিও দেখে শনাক্ত করা হয় স্বপন বসুকে। স্বপনের কারণে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অন্য সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার হয়েছিল। স্বপন বসু প্রথমে অস্বীকার করলে নিরাপত্তাকর্মীরা সিসিটিভির ফুটেজ দেখালে এবং আইনি ব্যবস্থার নেয়ার কথা বললে তিনি স্বীকার করেন ল্যাপটপ চুরির কথা। পরে দেড় হাজার ডলার জরিমানা দিয়ে বেচেঁ যান স্বপন বসু। সেই ল্যাপটপ চোরকেই মিডিয়া কমিটিতে মূল দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এখানেই তার অপকর্ম শেষ হয়নি। ২০২১ সালের ২৮-৩১ অক্টোবর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘বঙ্গবন্ধু ৫ম সাউথ এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্স’ প্রতিযোগিতা। সেই আসরের মিডিয়ার দায়িত্ব নিয়ে সাংবাদিকদের গিফটগুলো না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। সূত্র জানায় আরেকজনকে শেখ কামাল যুব গেমসে কাজ করার জন্য নেয়া হয়েছে, যে কিনা সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে ধরা পড়েছে। বলা যায় মিডিয়া কমিটিতে বিতর্ক জড়িয়ে পড়েছে। এদিকে মিডিয়া কমিটিতে যারা কাজ করছে তারা যুব গেমসের জন্য হোয়াটঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছে। কিন্তু তারা তাদের পছন্দমত সাংবাদিকদেরই রেখেছে। ফলে অনেকেই তথ্য পাচ্ছে না বলে জানা যায়। বিওএতে চলছে একক রাজত্ব। অভিযোগে জানা গেছে মিডিয়া এন্ড পাবলিসিটি কমিটিতে থাকা চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিবের মধ্যে চলছে ঠান্ডা লড়াই। কথা প্রসঙ্গে সদস্য সচিব সিরাজউদ্দিন মো. আলমগীর বলেন, আমি সভা ডাকবো। অথচ আমিই জানি না সভা বা কোনো অনুষ্ঠান হলে। এভাবে কাজ করা মুশকিল। উদাহরণ টেনে আলমগীর বলেন, যুব গেমস উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে ২২ ফেব্রুয়ারি। সেখানে সদস্য সচিবকে জানানোই হয়নি। তাই সেদিন সংবাদ সম্মেলনে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। সব কাজ চেয়ারম্যানই করেন। কাউকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেন না। শেখ কামাল যুব গেমসকে ঘিরে বিওএ একটি সাংগঠনিক কমিটি, স্টিয়ারিং কমিটি ও ১৩টি উপ কমিটি গঠন করা হয়েছে।