ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অন্ধকার থেকে আবারো জাতীয় দলে রবিউল

অন্ধকার থেকে আবারো জাতীয় দলে রবিউল

২০১৮ সালে ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব রবিউল হাসানের। জাতীয় দলে জায়গা পেয়েই কম্বোডিয়া ও লাওসের বিপক্ষে জাল কাঁপিয়ে নিজেকে চেনান। ভুটানের বিপক্ষেও ছিল গোলের ধারাবাহিকতা। দুই বছর যেতে না যেতেই অধঃপতন শুরু। একটু একটু করে মিলিয়ে যেতে শুরু করেন। ফুটবল থেকে দূরে সরে গিয়ে ‘অন্য জগৎ’ বেছে নেন। সেই ভুল বুঝতে পেরে এই মৌসুমে ঘরোয়া ফুটবলে ঠিকঠাক ফিরেছেনই। এমনকি দুই বছর পর আবারও লাল-সবুজ দলে জায়গা করে নিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন টাঙ্গাইল থেকে উঠে আসা মিডফিল্ডার।

পাইওনিয়ার ফুটবল লিগে আক্কু একাডেমির হয়ে রবিউলের ক্যারিয়ার শুরু। এরপর দিলকুশার হয়ে তৃতীয় বিভাগে খেলেছেন। প্রিমিয়ার লিগে আরামবাগে দুই মৌসুম কাটানোর পর ২০১৮ সালে ইংলিশ কোচ জেমি ডের দৃষ্টি কাড়েন। তার অধীনে ১৩ ম্যাচে তিন গোল করে দেশের সম্ভাবনাময়ী এক মিডফিল্ডারের আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর কী থেকে কী হয়ে গেলো! ফুটবলে মনোযোগ কম দিয়ে ‘অন্য জগৎ’কে বেছে নিয়ে ক্যারিয়ার ধ্বংসের পথে নিয়ে যান। অনিয়মিত হয়ে পড়া রবিউল বসুন্ধরা কিংস, মোহামেডান ও চট্টগ্রাম আবাহনীতে নাম লিখিয়ে কোথাও থিতু হতে পারেননি। উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়া তরুণ মিডফিল্ডারকে কিছুতেই সঠিক পথে আনা যায়নি। এই মৌসুমে হঠাৎ ভোজবাজির মতো সবকিছু পাল্টে গেলো। উচ্ছৃঙ্খল জীবনকে বিদায় করে আবারও সুসময়ের সন্ধানে। পুলিশ এফসির হয়ে নিয়মিত মাঠে পারফর্ম করে যাচ্ছেন রবিউল।

প্রিমিয়ার লিগে প্রথম পর্বে দুটি গোলও আছে। আছে তিনটি অ্যাসিস্টও। তাই তো স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার দৃষ্টি কেড়ে লাল-সবুজ দলে জায়গা করে নিয়েছেন। রবিউল উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলেছেন, ‘নতুন করে জাতীয় দলে ডাক পেয়েছি। এতে অনেক খুশি। এত দিন পরিশ্রম করে গেছি। মাঠে নতুন রূপে ফেরার চেষ্টা করেছি। তার ফল পেয়েছি। এখন যে করেই হোক মাঠের একাদশে জায়গা করে নেয়ার চেষ্টা করব।’ জাতীয় দল কিংবা ক্লাব ফুটবলে অনিয়মিত কিংবা জীবনের সেই অন্ধকার সময়টাকে ভুলে যেতে চাইছেন ২৪ বছর বয়সি ফুটবলার, ‘আমি আর পেছনে ফিরে তাকাতে চাই না। মাঝের সেই সময়টুকু আমার জীবনে কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। এই সময়ে দেখেছি আমার পাশে অনেকেই ছিল না। সবাইকে আমার জন্য কটু কথা শুনতে হয়েছে, সহ্য করতে হয়েছে। এই অবস্থা দেখে তখনই ঠিক করেছি একসময় আমাকে ভালো হয়ে যেতে হবে। আবারও ফিরতে হবে মাঠে, জাতীয় দলে। সেই পণ থেকেই এখন নতুন করে সুযোগ পেয়েছি।’

নতুন রূপে ফেরার পেছনে দুজনের অবদান কম নয়। স্ত্রী তামান্না ইয়াসমিন তিথি ও বড় ভাই মাহবুব হাসান সুমন সবসময় ছায়া হয়েছিলেন। রবিউলের যখন ৫ বছর, তখন মা মারা যান। তাই ক্যারিয়ারের খারাপ সময়ে মায়ের অভাব বেশ অনুভব করেছেন তিনি, ‘আসলে মা বেঁচে থাকলে আমার এতটা অধঃপতন হতো না। তারপরেও এখন আমি আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়ে গেছি। খেলার সময় ক্লাবের রুম থেকে বের হই না। কোনো খারাপ অভ্যাস নেই। নিয়মিত নামাজ পড়ি। অনুশীলন করি। শুধু ফুটবল নিয়েই থাকি। আমি চাই না সেই খারাপ অভ্যাস আবার ফিরে আসুক। ফুটবলটাকে আঁকড়ে ধরে শুধু সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’

রবিউল নতুন করে ফেরায় তার সাবেক কোচ জেমি ডেও খুশি, ‘রবিউল প্রতিভাবান খেলোয়াড়। আমি ওকে জাতীয় দলে নিয়েছিলাম। এবার ঘরোয়া ফুটবলে ও নিয়মিত। ফিটনেসও ভালো। নতুন করে ডাক পেয়েছে। আসলেই ব্রিলিয়ান্ট!’ রবিউল নিজের ভুল বুঝতে পেরে আবারও স্বমহিমায় ফিরতে চাইছেন। এর জন্য ধন্যবাদ পেতেই পারেন!

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত