সাগরিকায় হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর অভিযান

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

ঘরের মাঠে সবশেষ ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হেরেছিল বাংলাদেশ। এরপরের ১৫ সিরিজের তিনটিতে হারলেও কখনো হোয়াইটওয়াশড হননি তামিম-সাকিবরা। এই ধারা অক্ষুণ্ন রাখতে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে আজ জয়ের কোনো বিকল্প নেই তাদের সামনে। সাগরিকায় তামিম-সাকিবদের হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর অভিযান তথা তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে শুরু হবে দুপুর ১২টায়।

ঐচ্ছিক অনুশীলন হলেও গতকাল দলের সঙ্গে নির্ধারিত সময়ে মাঠে আসেন তামিম ইকবাল। তবে ড্রেসিং রুম ছেড়ে বের হলেন ঘণ্টাখানেক পর। প্যাড-আপ করে বের হয়ে ব্যাটিং শুরুর আগে চলে গেলেন সেন্টার উইকেটে। কিউরেটর ও প্রধান কোচ হাথুরুসিংহের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলতে দেখা যায় তাকে। কিছুক্ষণ পর ডেকে নেন সাকিবকে। দুজন মিলে প্রায় ১০ মিনিট কথা বলার পর আসেন দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন ও হাবিবুল বাশার। সবাই মিলে ফের চলে আলোচনা। দূর থেকে বোঝার উপায় নেই কী বিষয়ে মাঠের মাঝে এই বৈঠক। তবে অনুমান করা যায়, আগেই সিরিজ হেরে যাওয়ার পর শেষ ম্যাচের উইকেট যেন নিজেদের মন মতো হয়, সেটি নিয়েই ছিল দীর্ঘ আলোচনা। তা না করেও অবশ্য উপায় নেই বাংলাদেশ দলের। কারণ ঘরের মাঠে প্রায় ৬ বছর সিরিজ হারের পর এবার ৯ বছর পর হোয়াইটওয়াশড হওয়ার শঙ্কায় পড়ে গেছে তারা।

মিরপুরের তুলনায় সাগরিকার উইকেট বরাবরই ব্যাটিংবান্ধব। হোম অব ক্রিকেটে ঘরের ‘সুবিধা’ যতটুকু পায় বাংলাদেশ, চট্টগ্রামে তার দেখা মেলে না তেমন। বরং তুলনামূলক গতিময় উইকেটে প্রতিপক্ষ দলগুলোর মানিয়ে নেয়া হয় সহজ। যার সবশেষ নজির দেখা গেছে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে।

প্রথম দুই ওয়ানডেতে সুযোগ না পাওয়া ইশান কিষান চট্টগ্রামে খেলতে নেমে করেন দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির বিশ্ব রেকর্ড। ভারত পায় বাংলাদেশের মাটিতে ও বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৪০৯ রানের দলীয় সংগ্রহ। একই রকম উইকেট পেলে ইংল্যান্ড কী করতে পারে তা নিয়ে কারো সংশয় থাকার কথা নয়। সেটি মাথায় রেখেই হয়তো কিউরেটরদের কাছে নিজেদের চাহিদা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিচ্ছিল বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। যার আভাস মেলে ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে। দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা রঙ্গনা হেরাথ জানালেন ভারত সিরিজের মতো হবে না সাগরিকার এবারের উইকেট, ‘এই উইকেট ভিন্ন। তাই ভারত সিরিজের মতো আশা করছি না। চেষ্টা করছি উইকেট থেকে দলের জন্য সেরাটা বের করতে। মিরপুরেই তুলনামূলকভাবে স্পিনারদের জন্য বেশি সাহায্য থাকে।’

উইকেটের ভিন্নতা হয়তো ধরতে পেরেছেন সাকিব নিজেও। মিরপুরের মন্থর উইকেটে গড়পড়তা ৭৮ থেকে ৮২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় গতিতে বোলিং করেন বাঁ-হাতি স্পিনার। কিন্তু রোববারের অনুশীলনে নেট সেশনে বলের গতি বাড়াতে দেখা যায় তাকে। একেকটি ডেলিভারির পর মুশফিকুর রহিমের কাছ থেকে গতির ব্যাপারে মত জানতে চাচ্ছিলেন তিনি।

অবশ্য শুধু উইকেটেই যে ভিন্নতা আসন্ন, তা নয়। দর্শক আগ্রহেও পড়েছে ভাটা। একে তো আগের দুই ম্যাচ হেরে শেষ হয়ে গেছে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা। তার ওপর সপ্তাহের মাঝে কর্মদিবসে খেলা হওয়ায় স্টেডিয়ামের কাছে বিটাক মোড় সংলগ্ন টিকিট কাউন্টার দুপুর পর্যন্ত ফাঁকাই দেখা গেছে।

দ্বিপাক্ষিক সিরিজের ম্যাচগুলো যেন একঘেঁয়ে না হয়, দর্শকদের জন্য প্রতি ম্যাচেই থাকে উপভোগের উপকরণ, সেজন্য বিশ্বকাপ সুপার লিগের প্রবর্তন করেছে আইসিসি। তবু বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজের শেষ ম্যাচটিকে ‘উপভোগ্য’ রাখা যায়নি। কারণ এই সিরিজ শুরুর আগেই দুই দলের বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত হয়ে গেছে। শেষ ওয়ানডেটি তাই আক্ষরিক অর্থেই ‘মরা’ ম্যাচ।

প্রথম দুই ম্যাচ অভিন্ন একাদশ নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ। মিরপুরের উইকেট বিবেচনায় দুই স্পিন অলরাউন্ডার সাকিব ও মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে খেলানো হয় তৃতীয় স্পিনার তাইজুল ইসলামকে। পেস আক্রমণে ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ।

শেষ ম্যাচেও একই কম্বিনেশনে খেলবে দল? নাকি বাড়ানো হবে পেসারের সংখ্যা? জানতে চাইলে উত্তরে রহস্য রেখে দেন হেরাথ, ‘সবকিছুই আসলে পরিস্থিতি ও উইকেটের ওপর নির্ভর করে। এখনও ঠিক হয়নি (কোনো কম্বিনেশনে খেলব)। এমনিতে আমাদের দলে সাকিব, মিরাজ ও তাইজুল আছে। আমার মনে হয় তারা ভালো করেছে। তো আমরা তিন পেসার খেলাতে পারি, তিন স্পিনারও খেলতে পারি। আমি নিশ্চিত তারা (টিম ম্যানেজমেন্ট) সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে।’

ম্যাচের আগের দিনের অনুশীলন থেকেও ধারণা পাওয়ার উপায় ছিল না একাদশ সম্পর্কে। ঐচ্ছিক অনুশীলন হওয়ায় টিম হোটেলেই থেকে যান প্রথম দুই ম্যাচে খেলা লিটন দাস, তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ ও আফিফ হোসেন।

স্কোয়াডের বাকি ১০ জনের সবাই পুরো তিন ঘণ্টা ঘাম ঝরান অনুশীলনে। নিয়মিত রুটিনে ব্যাটিং করেন মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা। ঘণ্টাখানেক পর শুরু করলেও নেটে পর্যায়ক্রমে স্পিনার ও পেসারদের বল মোকাবিলা করেন তামিমও। তাদের নেটে বোলিং করে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছেন তাইজুল, হাসান মাহমুদ, ইবাদত হোসেনরা। সাধারণত অনুশীলনের শুরুতে ফুটবল খেললেও ম্যাচের আগের দিন স্কিল ট্রেনিং শেষ করে পরে নিজেদের মধ্যে ফুটবল খেলেন সাকিব-মুশফিকরা। সেখানে ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছাপ। তবে খেলা শেষে হাসিমুখেই ডাগআউটে বসেন সবাই। সেই হাসি এখন শেষ ম্যাচেও থাকবে কি না, সেটিই দেখার।