ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘স্বাধীনতা’ পেয়ে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন

প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ
‘স্বাধীনতা’ পেয়ে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন

রনি তালুকদারের লেগ স্টাম্প ভেঙে গেলো। আদিল রশিদের আরেকটি গুগলি। নাজমুল হোসেন শান্তর বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউর আবেদন। আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন। তবে শান্ত মাথা ঠান্ডা রেখে রিভিউ নেন এবং আল্ট্রাএজে ব্যাট ও গ্লাভসে বল লাগতে দেখা যায়, জীবন পান শান্ত। এবারও মাথা ঠাণ্ডা রাখেন, জীবন পেয়ে তা কাজে লাগান শতভাগ। অন্য প্রান্তে লিটন দাস আউট হলে কিছুটা চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। যদিও নির্ভার ছিলেন শান্ত। দ্রুত ২ উইকেট হারালেও তার প্রভাব পড়েনি পরে আসা ব্যাটসম্যানদের খেলায়। পাওয়ার প্লের শেষ ওভার তৌহিদ হৃদয় টানা দুটি ছয় মেরে শেষ করেন। পরের ওভারে মার্ক উডকে প্রথম চার বলে ৪টি বাউন্ডারি মারেন শান্ত, ছয় বলে ২৪, ম্যাচ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে যায় বাংলাদেশের হাতে।

ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সাকিব বলেছেন, সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে। নিজের ক্যাচ মিস ও বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং নিয়েও কথা বলেন সাকিব। বাটলার যখন ১৯ রানে, নাসুমের বলে সহজ ক্যাচ মিস করেন সাকিব। ‘জীবন’ পেয়ে বাটলার হাসান মাহমুদের বলে আউট হওয়ার আগে ৪২ বলে খেলেছেন ৬৭ রানের ইনিংস। এ নিয়ে ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণীতে সাকিব বলেছেন, ‘আমরা নিজেদের পরিকল্পনায় অটল ছিলাম। শুধু আমার ক্যাচ ড্রপটি ছাড়া সবাই খুব ভালো ফিল্ডিং করেছে।’ ম্যাচটি বাংলাদেশ যেভাবে খেলেছে, তা নিয়ে খুশি সাকিব, ‘আমরা যে মনোভাব নিয়ে ম্যাচটি খেলেছি, তা ছিল অসাধারণ।’ ইংল্যান্ড ১০ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ৮০ রান তুলে ফেলার পরও কেউ ঘাবড়ে যায়নি বলেও উল্লেখ করেন সাকিব।

মাত্র ২৭ বলে টানা দ্বিতীয় ও টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে সব মিলিয়ে তৃতীয় ফিফটি স্পর্শ করেন শান্ত। তার আগ্রাসন থামে ইংলিশ পেসার মার্ক উডের গতিময় বলে। কী শট খেলবেন তা নিয়ে দোটানায় থেকে ৫১ রান করে স্টাম্প হারান তিনি। ৩০ বল মোকাবিলায় তার ব্যাট থেকে আসে ৮ চার। সিঙ্গেল-ডাবল নেয়াতেও দারুণ চটপটে ছিলেন শান্ত। উডের ওপরই সবচেয়ে বেশি চড়াও হয়েছিলেন শান্ত। ইনিংসের সপ্তম ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে আসা এই ডানহাতি পেসারকে কচুকাটা করেন তিনি। ওই ওভারের প্রথম চার বলেই বাউন্ডারি আনেন তিনি। সব মিলিয়ে ওই ওভারে আসে ১৭ রান। তাদের গড়ে দেয়া জয়ের ভিতে দাঁড়িয়ে দারুণ ফিনিশিং হয় সাকিব আল হাসান ও আফিফ হোসেনের ব্যাটে। ১২ বল হাতে রেখে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন এই দুজন।

ম্যাচসেরার পুরস্কার প্রত্যাশিতভাবে পেয়েছেন শান্ত। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে তিনি কৃতিত্ব দিয়েছেন হৃদয়কে, ‘তৌহিদ ভালো ব্যাট করেছিল। আমি শুধু বল দেখে শট খেলেছি। দুই উইকেট হারিয়ে খুব বেশি বিচলিত হইনি। বোলারদের বল ছিল অসাধারণ। বিশেষ করে হাসান ও তাসকিন। রনি ও লিটনও ভালো ম্যাচ গড়ে দিয়েছে, টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে শুরুটা আসল।’ শান্ত জানালেন দলের অবস্থা এখন খুব ভালো। সামনের ম্যাচগুলো নিয়ে বড় আশার কথা জানানো পাশাপাশি প্রক্রিয়া ঠিক রাখার দিকে জোর দিলেন তিনি, ‘এখন যে অবস্থায় আছি, এখান থেকে সিরিজ জেতা উচিত। কিন্তু এখনও আমাদের নির্দিষ্ট দিনে ভালো খেলতে হবে। প্রথম (টি-টোয়েন্টি) ম্যাচ জিততে পেরেছি, এটা অবশ্যই দলকে অনেক আত্মবিশ্বাস দেবে। তবে আমরা যখন দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে যাব, নতুন করে শুরু করতে হবে। এই ম্যাচটা জেতার পর আমাদের দলের প্রেরণা বা চিন্তা-ভাবনায় অনেক পরিবর্তন আসবে।’

আগের দিন প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এসে জানিয়েছিলেন, সবাইকে স্বাভাবিক খেলার স্বাধীনতা দিয়েছেন তিনি। ব্যর্থতার কথা না ভেবে বিপিএলে যে যেভাবে খেলেছে, সেভাবেই খেলার বার্তা দিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডকে প্রথম ম্যাচে হারিয়ে আসার পর নাজমুল হোসেন শান্তর কণ্ঠেও একই সুর। ফুরুফুরে মেজাজে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পেছনে অবাধ স্বাধীনতা পাওয়ার কথা জানালেন তিনি।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে নিয়ে থাকলেও টি-টোয়েন্টি নিয়ে খুব একটা আশা ছিল না স্বাগতিকদের। ওয়ানডে সিরিজ হারার পর নতুন আদলের টি-টোয়েন্টি দল কীভাবে রিয়েক্ট করে তা দেখার অপেক্ষা ছিল। সবাইকে চমকে দিয়ে বৃহস্পতিবার প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ।

সফরকারীদের ১৫৬ রান তাড়ায় নেমে রয়েসয়ে খেলার পথে না গিয়ে শুরু থেকে আক্রমণাত্মক মানসিকতায় নামেন ব্যাটাররা। রনি তালুকদারের ঝড়ো শুরু টেনে উত্তাল হয়ে উঠে শান্তর ব্যাট। ২৯ বলে ৫১ রানের ইনিংসে বাংলাদেশের ম্যাচ জেতানোর নায়ক তিনি। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে শান্ত জানান, তাদের শরীরি ভাষা বদলে দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টের দেয়া স্বাধীনতা, ‘এই সিরিজের একটাই বার্তা ছিল, ব্যাটসম্যানরা যে যেভাবে স্বাভাবিক খেলা খেলে, ওভাবেই খেলবে। একদম ফ্রিডম নিয়ে খেলবে।’

গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পরামর্শক শ্রীধরণ শ্রীরাম দলে দেখতে চেয়েছিলেন ‘ইন্টেন্ট’, খুঁজছিলেন ‘ইমপ্যাক্ট’ পারফরম্যান্স। কিন্তু দুয়েকটি ম্যাচ ছাড়া সেটা সেভাবে দেখা যায়নি। দারুণ ছন্দে থাকা বাঁ-হাতি শান্ত জানালেন, স্বাধীনভাবে খেলার লাইসেন্স পেয়ে যাওয়ায় সবই তাদের ধীরে ধীরে উন্নতি হবে, ‘ইমপ্যাক্ট-ইন্টেন্ট যেটা বললেন ওটা তো বলার পর দিনই করা সম্ভব না। এটার জন্য একটা সময়ের প্রয়োজন। আর অনেক সময় উইকেট, পরিস্থিতি একেক সময় একেক রকম থাকে। সবাই এমন (আগ্রাসী) খেলারই চেষ্টা করে। কিন্তু আমার মনে হয় এখন ব্যাটাররা অনেক ফ্রিডম নিয়ে খেলছে। ইমপ্যাক্ট দেখবেন আস্তে আস্তে আরো ভালো জায়গায় যাচ্ছে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত