মিরাজের নায়ক হয়ে ফেরা

মেহেদি হাসান মিরাজ ৪-০-১২-৪, ১৬ বলে ২০ রান

প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

গত বিশ্বকাপে স্রেফ একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া মেহেদি হাসান মিরাজ টি-টোয়েন্টি একাদশে ফিরেই হয়ে উঠলেন জয়ের নায়ক। স্পিন সহায়ক উইকেটে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৪ ওভারে ১২ রানে তার শিকার ৪ উইকেট। কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। পরে রান তাড়ায় পাঁচে নেমে খেলেন ২ ছক্কায় ১৬ বলে ২০ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। তবে শান্তর ইনিংসটি না হলে মিরাজের এই পারফরম্যান্সও যেত পারত বিফলে। আগের ম্যাচে ঝড়ো ফিফটি করা ব্যাটসম্যান এবার ব্যাটিং প্রতিকূল উইকেটে ম্যাচ পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে ৪৭ বলে খেলেন ৪৬ রানের অপরাজিত ইনিংস।

ওয়ানডে ও টেস্ট ফরম্যাটে নিয়মিত হলেও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে একাদশে তো দূরে থাক দলেও জায়গা পাকা নয় মেহেদি হাসান মিরাজের। অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে ছিলেন তিনি, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন ডানহাতি এই স্পিন অলরাউন্ডার। সিডনিতে ৩ ওভারে ৩২ রান দিয়ে তিনি ছিলেন উইকেটশূন্য। বিশ্বকাপের আগে নিউ জিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে দুটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেও ২ ওভারের বেশি বোলিং পাননি। সেখানে অবশ্য পারফরম্যান্স খারাপ ছিল না। তবে জায়গা নিয়মিত করতে পারেননি।

তার মনে হয়েছে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে জাতীয় দলের হয়ে বহুদিন পরে খেললেন। কারণ তিনি সংক্ষিপ্ত সংস্করণে অনিয়মিত। ২০১৭ সালে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হলেও জাতীয় দলের জার্সি পরা হয়েছে ২০বার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফিরেই ম্যাচ সেরার পারফরম্যান্স করা মিরাজ জানান, শুরুতে নিজের দায়িত্ব নিয়ে বিভ্রান্ত ছিলেন তিনি, ‘আমি খুবই খুশি। অনেক দিন পরে জাতীয় দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেললাম, সেজন্য নিজের দায়িত্ব নিয়ে বিভ্রান্ত ছিলাম। কিন্তু অধিনায়ক ও টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। বল হাতে কেবল ভালো জায়গায় বোলিং করার চেষ্টা করেছি। ব্যাট হাতে স্ট্রাইক রোটেট করে খেলতে চেয়েছি। খারাপ বল পেলে মারতে চেয়েছি।’

ম্যাচ শেষে মিরাজের প্রশংসা করেছেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব। তার মতে, ম্যাচ কঠিন হয়ে যাওয়ায় নার্ভ ধরে রেখে খেলতে হতো। নাজমুল শান্ত, তৌহিদ হৃদয়রা যেটা করতে পেরেছেন। মেহেদি মিরাজ প্রথম ম্যাচে না খেললেও এই ম্যাচে অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছেন।

বাংলাদেশ টেস্ট ও ওয়ানডে দলে এখন অপরিহার্য নাম মিরাজ, বিশেষ করে দেশের মাঠে। এবার তার পারফরম্যান্সে ইঙ্গিত, টি-টোয়েন্টি দলেও তাকে বিবেচনা করতে হবে গুরুত্ব দিয়ে। টি-টোয়েন্টি একাদশে ফেরার ম্যাচটি রাঙালেন তিনি ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ একটিই পরিবর্তন আনে আগের ম্যাচ থেকে। শামীম হোসেনের জায়গায় ফেরানো হয় মিরাজকে। এই পরিবর্তনই হয়ে ওঠে ‘মাস্টারস্ট্রোক।’ ৪ ওভারে ১২ রান দিয়ে এই অফ স্পিনার নেন ৪ উইকেট। ইংল্যান্ড গুটিয়ে যায় ১১৭ রানে।

ম্যাচের আগে বাংলাদেশের হয়ে ১৯ টি-টোয়েন্টি খেলে তার উইকেট ছিল ৮টি। গত সেপ্টেম্বরে আরব আমিরাতের বিপক্ষে একটি ম্যাচের ৩ উইকেট বাদ দিলে পরিসংখ্যান হয়ে যায় আরও নাজুক। সেই মিরাজ ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ভোগালেন লাইন-লেংথ, ফ্লাইট আর টার্নে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তো বটেই, ২০ ওভারের ক্রিকেটে ১১৫ ম্যাচের ক্যারিয়ারে মিরাজের সেরা বোলিং এটিই।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একাদশে মিরাজের জায়গা পাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা নিশ্চিতভাবেই উইকেটের। সহায়ক উইকেট পেয়ে কাজে লাগান দারুণ বোলিংয়ে। অধিনায়ক সাকিব মিরাজকে আক্রমণে আনেন নবম ওভারে, ষষ্ঠ বোলার হিসেবে। তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে তিনি ধরেন জোড়া শিকার, দুটিই স্টাম্পিং। চতুর্থ ওভারের শেষ বলে ক্রিস জর্ডানকে ফিরিয়ে পূরণ করেন চার উইকেট।

বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে অফ স্পিনে এর চেয়ে ভালো বোলিং আছে আর কেবল একটিই। গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০ রানে ৫ উইকেট নেন মোসাদ্দেক হোসেন।