ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড তৃতীয় টি-টোয়েন্টি

ইংল্যান্ডকে বাংলাওয়াশের সুযোগ

ইংল্যান্ডকে বাংলাওয়াশের সুযোগ

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেও ঘরের মাঠ ও ফরম্যাট বিবেচনায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ে চোখ ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু এক ম্যাচ জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি সিরিজ কেমন আশা ছিল সাকিব আল হাসানের দলের? তিন ম্যাচের সিরিজে একটি ম্যাচ জয়ই বাংলাদেশের জন্য হতে পারত তৃপ্তির ব্যাপার। হয়েছে উল্টো, পছন্দের ফরম্যাট ওয়ানডেতে সিরিজ হারা বাংলাদেশ প্রথম দুই টি-টোয়েন্টি জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে। তাদের দৃষ্টি এবার হোয়াইটওয়াশে, পাশাপাশি শেষ ম্যাচে আছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভাবনাও।

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ব শাসন করছে ইংল্যান্ড। গত বছরের অক্টোবরে জিতেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা। ঘরের মাঠ হলেও ইংলিশদের আক্রমণাত্মক ক্রিকেট নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল বাংলাদেশের। সেই দলটি প্রথম দুই ম্যাচ দিয়ে সিরিজ জিতে এখন দৃষ্টি দিচ্ছে বাংলাওয়াশে (হোয়াইটওয়াশ)! আবার ৩-০ তে চোখ দিলেও বেঞ্চের শক্তিও যাচাই করে দেখতে চায় তারা। এমনই জানিয়েছেন জাতীয় দলের নির্বাচক ও সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার।

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিশেষ তেমন সাফল্য নেই। ওয়ানডেতে বড় বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পাশাপাশি হোয়াইটওয়াশ করার অভিজ্ঞতা থাকলেও এই ফরম্যাটে কেবল একবার টেস্ট খেলুড়ে দেশকে সিরিজের সব ম্যাচে হারের স্বাদ দিতে পেরেছে। ২০২০ সালে জিম্বাবুয়েকে ২-০ ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে মিরপুরে আজ ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলে দ্বিতীয়বারের মতো কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ পাবে বাংলাদেশ।

ম্যাচের আগের দিন গতকাল মিরপুরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে হাবিবুল বাশার জানান, এই ম্যাচটি জিততে চান তারা, ধরে রাখতে চান জয়ের ধারা। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই তৃতীয় ম্যাচটা জেতার চিন্তা নিয়েই খেলব। আমরা যে ধরনের খেলা খেলছি, এই প্রক্রিয়াটা যদি ধরে রাখতে পারি, সেটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জিততে পারলে অবশ্যই এর চেয়ে ভালো কিছু হবে না। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল, তাদের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছি। শেষ ম্যাচটা জিতে শেষ করতে পারলে আরও ভালো কিছু হবে। তবে এখনও পর্যন্ত আমি খুবই খুশি, দল যেভাবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাড়া দিচ্ছে।’

স্কোয়াডে থাকা বাংলাদেশের ১২ জন ক্রিকেটার সুযোগ পেয়েছেন প্রথম দুই টি-টোয়েন্টির একাদশে। দুই ম্যাচের একাদশে একটি পরিবর্তন আনা হয়, প্রথম ম্যাচ খেলা শামীম হোসেন পাটোয়ারীর জায়গায় দ্বিতীয় ম্যাচে নেয়া হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে। অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা রেজাউর রহমান রাজা ও স্পিনার তানভীর ইসলামের মতো উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান এখনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। শেষ ম্যাচে তাদের সুযোগ দেওয়ার পক্ষে হাবিবুল বাশার, ‘বেঞ্চটা দেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি রিজার্ভ ক্রিকেটারদের খেলার সুযোগ না দেন, প্রস্তুত হওয়ার সুযোগটা না দেন, কখনো যদি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে মূল খেলোয়াড়রা ইনজুরিতে থাকে, তখন তো কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই (অন্য ক্রিকেটারদের) খেলতে হয়। সেই সুযোগটা দল নেবে ক না, সেই আলোচনা এখনও হয়নি। সেটা করতে পারে। সেটা করলে কোনো সমস্যা নেই।’

পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভাবনা থাকলেও জয়টাই অবশ্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের কাছে। বিসিবির এই নির্বাচকের ভাষায়, ‘মনোযোগ থাকবে জেতার দিকে। অবশ্যই আমরা জিততে চাইব। সেটার মাধ্যমে আমরা যদি (একাদশে) দুই-একটা পরিবর্তন করতে পারি, সেটা দল চাইলে করতে পারে। একটা ভালো দিক আমার কাছে মনে হয়, আমাদের বেঞ্চটা এখন অনেক শক্ত। আমরা যদি কাউকে নিয়েও আসি, শুধু নিয়ে আসার জন্যই হবে না। আমার মনে হয়, যারা আছে এই স্কোয়াডে, সবাই একাদশে খেলার যোগ্যতা রাখে।’

চন্ডিকা হাথুরুসিংহের তুলির আঁচড়ে যেন বদলে গেছে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টির রং। যদিও সবে শুরু, তবে এই শুরুটাই যে হয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ধরাশয়ী করে। চনমনে থেকে আগ্রাসী ক্রিকেট, শরীরি ভাষায় ক্ষীপ্রতা, জস বাটলার-জোফরা আর্চারদের চোখে চোখ রেখে মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো ইঙ্গিত দেয় টি-টোয়েন্টির জাগরণের। এক কথায় তারুণ্যে গড়া সাকিব আল হাসানের এই দল যেন দুর্বার। তাইতো প্রথম ম্যাচের পর পেসার হাসান মাহমুদ এই দলটিকে ‘টি-টোয়েন্টির সেরা দল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে টানা দুই ম্যাচ হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। বড় দলগুলোর বিপক্ষে বাংলাদেশ আগেও সিরিজ জিতেছে, তবে এটি আলাদা। কেন আলাদা? এক কথায় টি-টোয়েন্টি যেভাবে আগ্রাসী মনোভাবে খেলতে হয় সেই প্রতিরূপটা দেখা গেছে সাকিবদের দলে। মরা উইকেট তৈরি করে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ নয় একবারে স্পোর্টিং উইকেটেই এবার বাজিমাত। এর আগে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ, সেবার উইকেট নিয়ে হয়েছে দেশে বিদেশে বিস্তর সমালোচনা।

দুই দলের জন্য সমান সুবিধা; এমন উইকেটে ইংলিশদের ধরাশায়ী করে কর্তাদের ঠোঁটে পরিতৃপ্তির হাসি। নির্বাচক হাবিবুল বাশার গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের সিরিজ জয়ের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে আড়াল করতে পারেননি উচ্ছ্বাস। বাংলাদেশ যেভাবে কর্তৃত্ব দেখিয়ে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছেম সেই ব্র্যান্ডের ক্রিকেটই যেন এতদিন চাওয়া ছিল সাকিবদের কাছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত