সাকিবের মতো হতে পারবেন মিরাজ?

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সব অলরাউন্ডারের মতো একটা জায়গায় সাকিব আলাদা একটি দলেই থাকেন। বেশির ভাগ অলরাউন্ডার ব্যাটিং প্রধান বা বোলিং প্রধান অলরাউন্ডার। ‘জেনুইন’ অলরাউন্ডার ইতিহাসেই খুব একটা নেই। সাকিব সেই বিরলদের একজন, ব্যাটিং-বোলিংয়ের যে কোনো একটি দিয়েই তিনি দলে জায়গা করে নিতে পারেন এবং দুটিতেই সেরাদের একজন। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে মেহেদি হাসান মিরাজও ছিলেন জেনুইন অলরাউন্ডার। চার-পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতেন, অফ স্পিনেও ছিলেন বিশেষজ্ঞ বোলার। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাবে বল হাতে চমকপ্রদ পারফরম্যান্সের পর তিনি হয়ে ওঠেন মূলত বোলার। পরে ব্যাটিংয়েও টুকটাক অবদান রাখতে শুরু করেন। তবে অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার শুরু গত বছর দুয়েকে। ব্যাট হাতে মিরাজ এখন সব সংস্করণেই অনেক কার্যকর ও ধারাবাহিক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও তাকে অলরাউন্ডার বলা যায়। জেনুইন অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার ছাপও আছে পারফরম্যান্সে। মিরাজও সেই স্বপ্ন দেখেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৩-০তে অবিস্মরণীয় জয়ের পরদিন একটি প্রতিষ্ঠানের পণ্যদূত হওয়ার আয়োজনে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলে তার কাছে প্রশ্ন ছুটে গেল, সাকিবের মতো হওয়ার বিশ্বাস আছে কি না। তার অকপট উত্তর, ‘বিশ্বাস না করলে তো যেতে পারব না। অবশ্যই বিশ্বাস করি।’ সাকিবকে প্রেরণা মেনেই সেই পথে ছুটে হয়ে উঠতে চান দলের জন্য আরও কার্যকর একজন, ‘দলে অলরাউন্ডার যত থাকবে, দলের অবস্থা তত ভালো থাকবে। দলের সমন্বয় করাটা অনেক ভালো হয়। সাকিব ভাই তো আমরা জানি, বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার এখন, সবসময়ই ছিল। তাকে দেখেই আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি এবং যখন আমরা চোখের সামনে বিশ্বমানের ক্রিকেটার দেখি, তখন অবশ্যই আমাদেরও চাহিদাটা থাকে যে, আমরাও একদিন হব।’

ক্রিকেটার হিসেবে মিরাজ যেমন স্বপ্নাতুর হয়ে সামনে তাকিয়ে, বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের জন্যও তেমন নতুন আশার রসদ বয়ে এনেছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের অভাবনীয় সাফল্য। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভুগতে থাকা দলটিই এবার চমকপ্রদ পারফরম্যান্সে হোয়াইটওয়াশ করেছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। ২০ ওভারের ক্রিকেটে নতুন দিনের যে হাতছানি, সেটি অনুসরণ করেই দল এগোবে বলে বিশ্বাস মিরাজের, আমরা কিন্তু ওয়ানডেতে অনেক দিন ধরেই অনেক ভালো ক্রিকেটে খেলে আসছি। সবাই বলে, আমরা টি-টোয়েন্টিতে অত ভালো দল নই বা টেস্টে আমরা ভালো করতে পারি না। আমি মনে করি, এটা শুরু হয়েছে আমাদের। টি-টোয়েন্টিতে ভালো ক্রিকেট খেলে সিরিজ জয় করেছি ও হোয়াইটওয়াশ করেছি। ছোট ছোট যে জিনিসগুলো, দলের ভেতর অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার এসেছে। যারা অনেক সাহসী, মেধাবী। তারা যদি এই প্রতিভাটা মাঠে কাজে লাগাতে পারে, তাহলে ভালো করবে। সবাই যেভাবে কঠোর পরিশ্রম করছে ও অনুশীলন করছে, এটা আমাদের দলকে অনেক ওপরে নিয়ে যাবে।’

শেষ টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ পাননি মিরাজ, বল হাতে খুব ভালো করেননি। তারপরও বাংলাদেশের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তার। জস বাটলার যখন দারুণ খেলছিলেন, তখন মিরাজের অসাধারণ ফিল্ডিং ও সরাসরি থ্রোয়ে ৪০ রানে রান আউট হন ইংলিশ অধিনায়ক। ম্যাচের পর ইংল্যান্ডের কোচ ম্যাথু মট সেই রান আউটকেই বলেছিলেন টার্নিং পয়েন্ট। মিরাজ নিজে অবশ্য একার কৃতিত্ব না নিয়ে বললেন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অন্যদের অবদানের কথা, প্রত্যেকটা মোমেন্টামই কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

যে সংস্করণে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো খেলে, সেই ওয়ানডে সিরিজে তারা এবার ইংল্যান্ডের কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরে গেছে। প্রথম ওয়ানডেতে ২০৯ রানের পুঁজি নিয়েও ইংলিশদের বাগে পেয়েছিলেন মিরাজরা, তবে ১১৪ রানের অসাধারণ অপরাজিত ইনিংস সেদিন দলকে জিতিয়ে দেন দাভিদ মালান।

টি-টোয়েন্টি জয়ের পর ওয়ানডে নিয়ে আক্ষেপ করলেন মিরাজ। স্বীকার করে নিলেন পরিকল্পনায় কিছু ভুলের কথাও। এই সাফল্যের পথ ধরেই এখন এগোতে চান মিরাজ। পথে যদিও প্রতিবন্ধকতা আসবে, হোঁচট খেতে হবে। প্রতিনিয়ত নিজেদের সমৃদ্ধ করে সব বাধা জয় করতে চান তিনি।