ইংল্যান্ড সিরিজ দিয়েই নবযুগ শুরু

প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

ইংল্যান্ড সিরিজ শেষ হতে না হতেই আরেকটি পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে নামবে জাতীয় ক্রিকেট দল। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে এসেছে আয়ারল্যান্ড দল। ইতোমধ্যে সিলেটে বিসিবি একাদশের সঙ্গে এক প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে কার্টিস ক্যাম্ফারের দল। আগামীকাল শুরু ওয়ানডে সিরিজ। এই সিরিজকে সামনে রেখে সিলেটে পাড়ি জমিয়েছে বাংলাদেশ, আইরিশদের বিপক্ষে লড়বে বাংলাওয়াশের সুখস্মৃতি নিয়ে। গতকাল সকাল এগারোটার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এক ফ্লাইটে করে সিলেটে পৌঁছায় টিম টাইগার্স। সে বহরে আট ক্রিকেটারসহ কোচিং স্টাফ ও ম্যাচ অফিশিয়ালরা সিলেটে পৌঁছান। এই বহরে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল যোগ দেননি। বাকিরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান দলের সঙ্গে যোগ দেবেন আরও পরে। সিলেট পৌঁছে কয়েকজন ক্রিকেটার ঐচ্ছিক অনুশীলন করেছেন। দলের সঙ্গে ছিলেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগামী শনিবার সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

সবকিছু মিলিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তারুণ্যে গড়া সাকিব আল হাসানের দল ছিল দুর্বার। মিরপুরে এর আগেও বহুবার বড় দলগুলোকে হারানোর উৎসবে মেতেছিল লাল সবুজের দল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় এই আর এমন কি? এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে। বুঝে হোক না বুঝে অনেকেই আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার বিষয়বস্তু বানিয়ে ফেলেছেন।

অন্য অনেক জয় থেকে, অনেক সিরিজ থেকে এই জয় বাংলাদেশের টি- টোয়েন্টির ধূসর ইতিহাসে রঙিন হয়ে থাকবে। চনমনে থেকে আগ্রাসী ক্রিকেট, ভয়ডরহীন মনোভাব, হার না মানা মানসিকতা সবকিছুই দেখা গেছে বাইশ গজে। দলের নবীনতম সদস্য থেকে শুরু করে দেড়যুগ ধরে খেলা ক্রিকেটার, এই সিরিজেই দ্বিতীয় মেয়াদে যোগ দেওয়া কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে সবাই যেন ছিলেন একই সূত্রে গাঁথা।

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের আক্ষেপ ছিল ঝিমিয়ে পড়া মানসিকতা নিয়ে। যাদের ব্যাটে রানের ফুলঝুরি, বোলিংয়ে উইকেটের মিছিল তারা যেন খেই হারিয়ে ফেলতেন। আগ্রাসী মনোভাব তো দূরের বিষয়। অধিনায়ক বদলেছে, প্রধান কোচকে বিশ্রাম দিয়ে উড়িয়ে আনা হয়েছিল টি-টোয়েন্টির জন্য বিশেষজ্ঞ কোচ; কিন্তু বদলায়নি ২২ গজের পারফরম্যান্স। এবার সেটি দেখা মেলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে স্পোর্টিং উইকেটে।

এই সিরিজ যেন টি-টোয়েন্টিতে নবযুগের ইঙ্গিত। ক্রিকেটারদের অ্যাপ্রোচের ভিন্নতাই বলে দিচ্ছে তা। যেমনটা বলছেন বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি খেলে বেড়ানো অধিনায়ক সাকিব, ‘আমরা কোনো সিরিজের সাথেই কোনো সিরিজের তুলনা করতে চাই না। প্রতিটা ম্যাচই জেতা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যেভাবে খেলে জিতেছি আমার কাছে মনে হয় এটা একটা সময় আমরা খুব একটা করিনি। সেদিক থেকে আমার কাছে মনে হয় আমরা পুরো দলই সন্তুষ্ট।’

জাতীয় নির্বাচক হাবিবুল বাশারও বলেছেন। সাকিবদের ব্র্যান্ড অব ক্রিকেটে তার ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি, ‘সাফল্য যে আগে ছিল না, তা নয়। তবে যেভাবে টি- টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি, এই সিরিজে কিছুটা হলেও পেরেছি। সিরিজের ফল ২-০ হয়ে গেছে। আমরা সিরিজ জিতে গেছি। তবে যেটা বেশি তৃপ্তিদায়ক ছিল, টি-টোয়েন্টি সংস্করণে যেভাবে আমরা খেলতে চাই, তার কিছুটা হলেও এই সিরিজে এখন পর্যন্ত প্রকাশ করতে পেরেছি।’ এই সিরিজে দুই দলের মধ্যে সর্বোচ্চ রান নাজমুল হোসেন শান্তর (১৪৪), সর্বোচ্চ উইকেট যৌথভাবে মেহেদি হাসান মিরাজ-তাসকিন আহমেদ (৪), সর্বোচ্চ ডিসমিসাল লিটন দাশের (৫) এবং সর্বোচ্চ ক্যাচও শান্তর (৪)।

দেশের মাঠে খেলা মানেই যেন স্পিন উইকেট। বিপিএলের পর এবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মরা উইকেটের ধারা থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। তবুও কিছুটা সহায়তা ছিল স্পিনারদের। এমন উইকেটে পেসার তাসকিন-মোস্তাফিজ-হাসান মাহমুদ যেভাবে বোলিং করে গেছেন- অতুলনীয়। ডেথ ওভারে কৃপণ বোলিং, ব্রেক থ্রু এনে দিয়ে ম্যাচের নাটাই নিজেদের হাতে নিয়ে আসা; সর্বোচ্চটুকুই দিয়েছেন এই ত্রয়ী। মোস্তাফিজ ৫.৫৮ ইকোনোমিতে উইকেট নিয়েছেন ৩টি, তাসকিন ৭.৩৩ ইকোনমিতে উইকেট নিয়েছেন ৪টি। আর হাসান ৬.৫০ ইকোনোমিতে রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ইংল্যান্ডের পেসারদের মধ্যে একমাত্র জোফরা আর্চার দারুণ বোলিং করেছেন, ৪ উইকেট নিয়েছেন ৬.৬৩ ইকোনমিতে।