ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘ভয়ংকর’ আইরিশদের সামনে বাংলাদেশ

‘ভয়ংকর’ আইরিশদের সামনে বাংলাদেশ

ওয়ানডে সংস্করণে বরাবরই সফল বাংলাদেশ, বিশেষ করে ঘরের মাঠে। সেখানে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে স্বাভাবিকভাবেই ফেভারিট বাংলাদেশ দল। কিন্তু তারপরও আইরিশদের দারুণ সমীহ করছেন টাইগাররা। তাদের হালকাভাবে নেওয়ার চিন্তা ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে মনে করেন কোচ চন্ডিকা হাতুরুসিংহে। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ক্রিকেট খেলছে আইরিশরা। গত বছরই ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতে ফিরেছে দলটি। এর আগের বছরে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সিরিজ ড্র করে তারা। ওয়ানডে ক্রিকেটে ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে আয়ারল্যান্ড।

তবে লড়াই যখন ওয়ানডে তখন এগিয়ে রাখতেই হয় বাংলাদেশকে। তার উপর ঘরের মাঠে। ২০১৫ সালের পর ঘরের মাঠে খেলা শেষ ১৪টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজের মধ্যে টাইগাররা জিতেছে ১২টিতে। কেবল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই দুটি সিরিজ হারতে হয় বাংলাদেশকে। আর এই আয়ারল্যান্ডকে ইংল্যান্ডের মতোই সমীহ করছেন বাংলাদেশ দলের কোচ, ‘আয়ারল্যান্ড, (হালকাভাবে নেওয়াটা হবে) খুবই ভয়ংকর। কোনোভাবেই সহজ প্রতিপক্ষ নয়। আমরা আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট দলকে ইংল্যান্ডের মতো করেই সমীহ করছি। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি আপনার মতো করে চিন্তা করাটা কতটা ভুল হবে আমার ক্যারিয়ারের জন্য। আমরা আয়ারল্যান্ডকে মোটেও হালকাভাবে নিচ্ছি না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি তাদের বিপক্ষেও আমাদের মানসিকতা একই। আমরা তাদের সম্মান করছি। সঙ্গে এটাও বলতে চাই আমরা কোনো দলকে ভয় পাই না। যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এটাই আমাদের একমাত্র মন্ত্র। আমরা আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করব। আমরা যখন আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলি তখন যে কোনো দলকেই হারাতে পারি, ’ যোগ করেন হাথুরুসিংহে।

তবে এ সিরিজের জন্য বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার ইঙ্গিত দিয়েছে টাইগাররা। তাতে হারের শঙ্কা থাকছেই। তবে জয় এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা কোন বিষয়টি প্রাধান্য দিবেন জানতে চাইলে এ কোচ বলেন, ‘দুটোই। আমাদের সব সময়ই মূল লক্ষ্য থাকে জয়, আমরা যাদের বিপক্ষেই খেলি।’

নিজেদের দিনে আইরিশরা যে কাউকেই হারাতে পারে বলে মনে করেন হাতুরুসিংহে, ‘কোনো দলই সহজ দল নয় এখনকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। পরিসংখ্যানটা মনে হয় সবাই জানি, তারা ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হারিয়েছে। নিজেদের দিনে যে কোনো দলই যে কাউকে হারাতে পারে। আমরা আমাদের সুযোগগুলো নেব অবশ্যই। সঙ্গে অবশ্যই জিততে চাইবো।’

তবে আইরিশদের সামান্য ছাড় দিলে যে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে তার ইঙ্গিত তারা রেখেছে প্রস্তুতি ম্যাচে। ৫০ ওভারের একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে তারা বিসিবি একাদশকে হারিয়েছে ৭৮ রানের বিশাল ব্যবধানে। বুধবার সিলেটের একাডেমি মাঠে হয়েছিল ম্যাচটি।

২০১৮ সালে টেস্ট অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত স্রেফ ৩টি টেস্ট খেলেছে আয়ারল্যান্ড। সাদা পোশাকের ক্রিকেটের পাশাপাশি এক সফরে তিন সংস্করণে খেলাও তাদের জন্য নতুন বিষয়। বাংলাদেশ সফরে দুটি স্বাদই পেতে চলেছে তারা। এক সফরে তিন সংস্করণের সিরিজের ভিন্ন রকমের চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখে ভালো ক্রিকেট খেলার আশা আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নির। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে শুরু হবে আইরিশদের এবারের বাংলাদেশ সফরের খেলা। এরপর চট্টগ্রামে তিন টি-টোয়েন্টি ও ঢাকায় একমাত্র টেস্ট খেলবে তারা।

এর আগে ভারতের দেরাদুনে গিয়ে ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একই সফরে তিন সংস্করণের ক্রিকেট খেলেছিল আইরিশরা। তবে সেবার সব ম্যাচ হয়েছে একই মাঠে। এবার তিন সংস্করণের দ্বিতীয় সফর হলেও, প্রথমবারের মতো ভিন্ন ভিন্ন মাঠে ম্যাচগুলো খেলবে তারা।

ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে নতুন স্বাদের এই সফরের চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখে ভালো খেলার ব্যাপারে আশাবাদী মন্তব্য করেছেন আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ক বালবার্নি, ‘অবশ্যই এটি আমাদের জন্য ভিন্ন রকম একটি সফর। কিট ব্যাগে (টেস্টের) সাদা প্যাড রাখা আমাদের জন্য ভিন্ন বিষয়। তবে একইভাবে এটি রোমাঞ্চকর। আপনি সবসময়ই বাংলাদেশে আসতে চাইবেন এবং ভালো ক্রিকেটারদের বিপক্ষে নিজেকে পরীক্ষা করতে চাইবেন। ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি তারপর টেস্ট, আমাদের জন্য এটি চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনার এটি করতে হবে। বিশ্বের সব দলই এটি করে আসছে এবং খুব ভালোভাবে করছে। আমাদের এটি দ্রুত শিখতে হবে। এখান থেকে পেছনে হাঁটার কোনো পথ নেই। সংস্করণ যেটাই হোক, আমাদের যত সম্ভব একে অন্যের সামর্থ্যে আস্থা রাখতে হবে। আমি আশাবাদী, সামনের দিনগুলোতে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারব।’

আইরিশদের নতুন চ্যালেঞ্জের প্রথম সিরিজের ভেন্যু সিলেটের মাঠে সবশেষ ওয়ানডে খেলা হয়েছে ২০২০ সালে। এরপর এই মাঠে আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়নি।

তবে সিলেটে নিয়মিতই হয় বিপিএলের খেলা। যার সৌজন্যে গত জানুয়ারিতে খুলনা টাইগার্সের হয়ে এই মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে বালবার্নির। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স দলে ছিলেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্পার। এছাড়া চলতি সফরের দলে থাকা পল স্টার্লিং, জর্জ ডকরেল ও অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইন ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সিলেটের মাঠে খেলেছেন। তাদের অভিজ্ঞতা এবারের সফরে কাজে লাগবে বলে আশাবাদী আইরিশ অধিনায়ক, ‘সাম্প্রতিক সময়ে এখানে (সিলেট) খুব বেশি ওয়ানডে খেলা হয়নি। বিপিএলের সময় আমার এখানে খেলার ভাগ্য হয়েছিল। আমার মনে হয় কার্টিসও খেলেছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার এখানে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছে। এই মাঠ সম্পর্কে আমাদের কিছুটা ধারণা আছে। এমন জায়গায় খেলতে এলে এসব অনেক সাহায্য করে। ওয়ানডে ক্রিকেটে বিষয়টা কিছুটা ভিন্ন। তবে ফ্লাডলাইটের নিচে ব্যাটিং করার জন্য ভালো সময়। শিশিরের প্রভাবসহ আরও কিছু বিষয় থাকবে। দেশের বাইরে খেলতে এলে এগুলো নিত্য ব্যাপার। এমন কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে এবং দলের বাকিদের সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব এসব তথ্য শেয়ার করা নিশ্চিত করতে হবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত