ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আজ জেতা হচ্ছে আরেকটা সিরিজ

আজ জেতা হচ্ছে আরেকটা সিরিজ

দিন দশেক আগে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ। টানা দ্বিতীয় সিরিজ জয়ের হাতছানি বাংলাদেশের সামনে। টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়ে আগামীকাল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ম্যাচেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে চায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। শিষ্যদের নিয়ে আত্মবিশ্বাসী স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথের ভাষ্য, ‘প্রথম ম্যাচের জয়টা আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস দেবে। এখন ওদের বিপক্ষে কীভাবে জিততে হয়, সে অভিজ্ঞতা আছে আমাদের। এটা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ দুপুর ২টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি টি স্পোর্টস চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

প্রথম ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হেসে-খেলেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান তুলে বাংলাদেশ। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান টাইগারদের। জবাবে ৩০ দশমিক ৫ ওভারে মাত্র ১৫৫ রানে অলআউট হয় আয়ারল্যান্ড। এতে ১৮৩ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচ জিতে নেয় তামিমণ্ডসাকিবরা। ওয়ানডে ফরম্যাটে রান বিবেচনায় এটিই সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয় বাংলাদেশের। পুরো ম্যাচের মধ্যে শুধুমাত্র প্রথম ১০ ওভারে পেসারদের সুইংকে কাজে লাগিয়ে ভালো অবস্থায় ছিলো আয়ারল্যান্ড। পরবর্তীতে ম্যাচের লাগাম নিয়ে নেয় গত আট বছর ধরে ঘরের মাঠে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করা বাংলাদেশ। এই সময় মাত্র দুটি সিরিজে হারে তারা। দুটি সিরিজ হারই ছিলো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

সাম্প্রতিক ফর্ম এবং শক্তি বিচারে এক ম্যাচ বাকি রেখে সিরিজ জয় নিশ্চিতের পথেই আছে বাংলাদেশ। তবে আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে পর্যাপ্ত বিকল্প তৈরি করতে এই সিরিজে খেলোয়াড়দের ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলানোই মূল লক্ষ্য বাংলাদেশের। প্রথম ওয়ানডেতে অভিষেক ম্যাচে ৯২ রানের ইনিংস খেলে দলের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন তাওহিদ হৃদয়। অভিষেক ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের মালিক বনে যান হৃদয়।

নিজেকে প্রমাণ করার সময় এসেছে আরেক ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলির। প্রতিভাবান খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রমাণের অপেক্ষায় থাকা ইয়াসির এখনো প্রতিভার ঝলক দেখাতে পারেননি। গতকাল বিশ্রাম ছিলো বাংলাদেশ দলের। ছুটিতে নিজের বিশ্ববিদ্যালয় (আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ-এআইইউবি) সমাবর্তনে যোগ দিতে ঢাকায় ফিরেন প্রথম ম্যাচে ৯৩ রান ও ১ উইকেট নেয়া দলের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিবিএ ডিগ্রি গ্রহণ করেন করেন সাকিব।

অন্য দিকে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে লজ্জাজনক হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুড়ে দাঁড়ানোর লক্ষ্য আয়ারল্যান্ডের। দ্বিতীয় ওয়ানডেটি আইরিশদের জন্য ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে রূপ নিয়েছে।

প্রথম ম্যাচের পর আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বলবির্নি বলেছিলেন, ‘ম্যাচের অর্ধেক সময়েও আমরা খুব বেশি হতাশ ছিলাম না। যখন আমরা ব্যাটিং করতে নামি তখনো উইকেট ভালো ছিলো। তারপর আমরা ৪-৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যাই। অভিজ্ঞতার অভাব ছিলো-এটি অজুহাত হিসাবে দাঁড় করাতে চাই না আমরা। তবে তারা ছন্দে ছিলো এবং খুব ভালো খেলেছে। তবে ভালো বিষয় হলো, আমরা সোমবার আরো একটি সুযোগ পাবো। আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। প্রথম ম্যাচের চেয়ে আরো ভালো খেলতে চাই, বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে।’

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ব্যাটিং বন্ধব উইকেটে স্পিনারদের জন্য সহায়তা কম এটা অনুমিতই। বাংলাদেশ তাই নামে তিন পেসার নিয়ে। স্পিনে সাকিব-নাসুম। ব্যাটিংবান্ধব এই পিচে স্পিনারদের শুরুটা ভালো না হলেও দ্রুত মানিয়ে নেন তারা। দুই স্পিনার নেন চার উইকেট। নাসুম ৮ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে ৩ ও সাকিব ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন। এমন উইকেটেও দুজনে জয়ে রাখেন দারুণ অবদান। তাইতো স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ শিষ্যদের এমন পারফরম্যান্সে দারুণ খুশি, ‘হ্যা, অবশ্যই আমি খুশি ও গর্বিত। স্পিনারদের জন্য এটাই তো চ্যালেঞ্জ, তাই না? আমরা কীভাবে সব ধরনের কন্ডিশনে ভালো বোলিং করব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমি খুশি ওরা যেভাবে মানিয়ে নিয়েছে, কন্ডিশন বুঝে বোলিং করেছে।’ ব্যাট হাতে ৯৩ রানের পাশাপাশি সাকিব বল হাতে এনে দেন ব্রেকথ্রু। তাকে নিয়ে হেরাথের ভাষ্য, ‘সাকিব সবসময়ই তার সেরাটা দিয়ে আসছে। সে নিজেকে প্রমাণ করেছে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে। এখন সেই রেকর্ডটা সে ধরেও রাখছে। তাকে নিয়ে আমি খুশিই।’

ইংল্যান্ড সিরিজে চট্টগ্রামের স্পোর্টিং উইকেটে সাফল্য পেয়েছিলেন সাকিবরা। ভারত বিশ্বকাপের আগে এসব উইকেটে স্পিনারদের সাফল্য স্বস্তি দিচ্ছে টিম ম্যানেজম্যান্টকে। ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপের উইকেট সিলেটের মতোই হওয়ার সম্ভবানা বেশি। আইসিসির ইভেন্টে সবার জন্য সুবিধা এমন উইকেট তথা স্পোর্টিং উইকেট দেয়া হয়।

আইরিশদের বিপক্ষে রেকর্ড ১৮৩ রানে জয়ের পর সিলেটে বাংলাদেশ দল গতকাল কাটিয়েছে বিশ্রামে। তবে ইনডোরে করা তামিম ইকবালের অনুশীলনে কোচিং স্টাফরা ছিলেন। সেখানে গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় স্পিনারদের সাফল্য নিয়ে কথা বলেন হেরাথ। যে কোনো কন্ডিশনে প্রস্তুতির কথা জানিয়ে হেরাথ বলেন, ‘হ্যা, আমরা কিন্তু জানি না আমরা কোন ধরনের কন্ডিশন পাব (বিশ্বকাপে)। আমাদের সব কিছুর জন্যই প্রস্তুত হতে হবে। উইকেট বোলারদের সাহায্য করতে পারে, ব্যাটসম্যানদেরও। সব ধরনের উইকেটের জন্যই প্রস্তুতি নিতে হবে।’

তৃতীয়বারের মতো দ্বিপাক্ষিক সিরিজে এবার মুখোমুখি বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড। ২০০৮ সালে তিন ম্যাচের সিরিজে আইরিশদের হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। ২০১০ সালে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করেছিল টাইগাররা। ওই সিরিজের একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিল।

সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১১টি ম্যাচে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড। এরমধ্যে বাংলাদেশের জয় ৮টিতে, আয়ারল্যান্ডের জয় ২টিতে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত