ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইউরোপের সাথে ব্যবধান জানল মেয়েরা

ইউরোপের সাথে ব্যবধান জানল মেয়েরা

ইউরোপের সাথে দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলের পার্থক্য কী হতে পারে, সেটা গতকাল জানা হয়ে গেছে বাংলাদেশের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের। ২০১০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সময় লাল-সবুজ মহিলা জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গতকালই প্রথম কোনো ইউরোপিয়ান দলের বিপক্ষে রণকৌশল সাজাতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু তার শুরুটা ভালো হয়নি, কমলাপুর স্টেডিয়ামে রাশিয়ার কাছে তার দল হেরেছে ৩-০ গোলে। উয়েফা অ্যাসিস্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে এসে সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবলের শিরোপা জয় মিশনের শুরুটা ভালো হলো রুশকন্যাদের। ভুটানের বিপক্ষে ৮-১ গোলে জয় দিয়ে আসর শুরু করা বাংলাদেশ আগামীকাল মুখোমুখি হবে ভারতের। সেদিন রাশিয়ার প্রতিপক্ষ ভুটান।

ম্যাচে রাশিয়াই এগিয়ে থাকবে, তা জানাই ছিল বাংলাদেশের। তবে প্রথম ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে ৮-১ গোলের জয়ে দুর্দান্ত শুরু করা লাল সবুজের মেয়েদের আত্মবিশ্বাসও ছিল তুঙ্গে। ধোপে টেকেনি সেই আত্মবিশ্বাস। কোচ গোলাম রব্বানীও আশাবাদি ছিলেন ভালো কিছুই করার। তবে ইউরোপের ফুটবলের সঙ্গে তাদের পার্থক্যতা বুঝলেন। ইউরোপিয়ান ফুটবলের সামনে কিছুটা অসহায় ছিলেন রুমা-কাননরা। প্রতিপক্ষের আক্রমণ সামলাতে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছে তাদের। তাই যেনো অপরিচিত বাংলাদেশ দলকে দেখা গেল মাঠে। এশিয়ার ক্লাবগুলোর সঙ্গে দাপুটে ফুটবল খেলা ছোটন শিষ্যরা বেশ কয়েকবার গোল করার মতো ভালো সুযোগ তৈরি করেছিল। তাই হারলেও দলের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। ম্যাচের আগেই বলেছিলেন ফল নিয়ে চিন্তিত নন তিনি। ম্যাচে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে চান এবং এই ম্যাচ থেকে অভিজ্ঞতা নিতে চান। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ছোটন বলেন, ‘আগেই বলেছি, আমরা এই প্রথম ইউরোপিয়ান একটা দলের বিপক্ষে খেলতে যাচ্ছি, মেয়েরা এখান থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। অভিজ্ঞতায় এগিয়ে। শারীরিকভাবে তারা এগিয়ে, টেকনিক্যালিও ভালো, আমি মনে করি এগুলোই আজকের ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।’ ম্যাচের শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে মেয়েরা। ছোটন বলেন, ‘আমাদের শুরুটা হয়েছিল বাজে ভাবে। আস্তে আস্তে মেয়েরা খেলায় ফিরেছে, যত সময় গেছে, মেয়েরা ভালো খেলছে। চাপের কারণে মেয়েদের শুরুটা এরকম হয়েছিল, বিরতির সময় তাদের আমরা বিষয়টি বলেছিলাম, এরপর তারা ভালো করেছে।’ এই ম্যাচের ফলে মেয়েদের আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বেড়ে যাবে বলে মনে করেন ছোটন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এ ম্যাচটি বিরাট সহায়ক হবে সামনের এএফসি ও সাফের ম্যাচগুলোর জন্য।’ আরও বেশি সময় এক সঙ্গে খেলতে পারলে ফল আরো ভালো হতে পারতো বলে মনে করেন বাংলাদেশের কোচ, ‘তারা (রাশিয়া) যে লেভেলে ক্লাবে খেলেছে, টেকনিক্যাল বিষয়গুলো বুঝেছে, সেখানে এই মেয়েরা এক বছর ধরে শিখছে। যদি এরাও পাঁচণ্ডছয় বছর শিখত, তাহলে রাশিয়ার বিপক্ষে ভালো লড়াই করতে পারত।’

পুরো ম্যাচে রাশিয়ার বিপক্ষে দারুণ খেলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা, বেশ কিছু গোলের সুযোগও তৈরি করেছিলেন। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের প্রশংসা করলেন রাশিয়ার কোচ এলিনা মেদভেদ। ম্যাচে শেষে এলিনা বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন ম্যাচটা কঠিন ছিল। আমাদের কিছু পরিকল্পনা ছিল, যার সবগুলো প্রয়োগ করতে পারিনি। কিন্তু জিতেছি এবং আমরা খুশি। টেকটিক্যাল ও টেকনিক্যাল প্রস্তুতিতে ভিন্নতা ছিল, বাংলাদেশ কোচ দুই দিকেই তার মতো করে ছক কষেছিল।’ বাংলাদেশের উইং এবং মিডফিল্ডের খেলোয়াড়রা বেশ শক্তিশালী বলে মনে করেন রাশিয়ার কোচ, ‘বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেষ্টা করেছে, সেরাটা দিয়েছে, রাইট উইং এবং মিডফিল্ডার বেশ ছোটাছুটি করেছে আমাদের পরিকল্পনা ভেস্তে দেয়া জন্য, তার খেলার আমি খুশি।’ বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি রাশিয়া। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার সাথে সাথেই মাটিতে বসে পরেন রাশিয়ার খেলোয়াড়রা। কমলাপুরের টার্ফ নিয়ে বরাবর অভিযোগ থাকে বিদেশি দলগুলোর। রাশিয়ার ক্ষেত্রের এর ব্যতিক্রম হয়নি। টার্ফ মান নিয়ে সন্তুষ্ট নন রাশিয়ার কোচ এলিনা।

শক্তিশালী রাশিয়ার বিপক্ষে ভুটানের ম্যাচের একাদশ থেকে দুই পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজান বাংলাদেশ কোচ। সুলতানা আক্তার ও পূজা দাসের পরিবর্তে ডিফেন্ডার কানন আক্তার ও ভুটান ম্যাচে জোড়া গোল করা থুইনু মারমাকে নামানো হয়। ম্যাচের ফল ৩-০ হলেও আধিপত্য ছিল রাশিয়ার। তাই দীর্ঘদেহী ও শারীরিকভাবে শক্তিশালী রাশিয়ার কাছে পাত্তাও পায়নি ছোটন শিষ্যরা। ষষ্ঠ মিনিটেই এগিয়ে যায় রাশিয়া। প্রায় মাঝমাঠ থেকে বাংলাদেশের বক্সে বল ফেলেন ভাসিলিসা আভদিয়েঙ্কো। বক্সে ছিল রাশিয়ান অধিনায়ক এলেনা গোলিক। বাংলাদেশের দুই ডিফেন্ডারকে সহজেই হার মানিয়ে প্লেসিং শটে বল জালে জড়ায় রাশিয়ান অধিনায়ক। বাংলাদেশের বিপদ বাড়তে পারত ৩৩ মিনিটে। বক্সের ভেতর বিপজ্জনক জায়গা থেকে অ্যানাস্থেশিয়া কারাতেভার শট ঠেকিয়ে দেন অর্পিতা বিশ্বাস। ৪৩ মিনিটে সুযোগ আসে বাংলাদেশের সামনে কিন্তু রাশিয়ার গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারেনি সুরভী আকন্দ প্রীতি। ম্যাচে এই একটি পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশ। তবে ২ মিনিট বাদেই ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় রাশিয়া। জোড়া গোল পূরণ করে এলেনা গোলিক। আন্না শাকারোভার বাড়ানো পাসে দূরের পোস্টে আলতো ছোঁয়ায় লক্ষ্যভেদ করে রাশিয়ার অধিনায়ক। ৬২ মিনিটে তিন গোলে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। রাশিয়ার ব্যবধান বাড়ায় আনাসতাসিয়া কারাতায়েভা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত