ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিশ্বকাপের আগে ‘ডেথ বোলিং’ ভাবনা

বিশ্বকাপের আগে ‘ডেথ বোলিং’ ভাবনা

টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়ানডে; যে সংস্করণই হোক, ডেথ বোলিংয়ে ভালো করতে না পারায় বহু ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ। পুরো ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে শেষ কয়েক ওভারে মোমেন্টাম ঘুরিয়ে নিয়েছে প্রতিপক্ষরা। শেষ দিকে চড়াও হয়ে মুরালিধরনের মতো ব্যাটাররা বাংলাদেশের হাতের মুঠো থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছেন। তাই ডেথ বোলিং নিয়ে আলাদা করে ভাবতেই হচ্ছে টাইগারদের।

এইতো গত বছরই এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হারের পর আক্ষেপ করে সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, ‘ডেথ বোলিংয়ে আমাদের উন্নতি করতে হবে। এর জন্য মাশুল দিতে হয়, আমরা ডেথ বোলিংয়ে ভালো না।’ চলতি বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হবে এবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। আসরটি ভারতের মাটিতে হলেও আইসিসি ইভেন্ট হওয়ায় স্পোর্টিং উইকেটেই হবে খেলা। তাই টাইগার বোলারদের দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা। যেখানে দেশের মাটিতে সাধারণত স্পিন সহায়ক উইকেটেই খেলে আসছে তারা।

এবার আয়ারল্যান্ড সিরিজে চিত্রটা অনেকটাই বদলেছে। উইকেট হয়েছে ব্যাটিংবান্ধব। স্পিনারদের জন্য আলাদা করে কিছু নেই। সুবিধা পাচ্ছেন পেসার-স্পিনার সবাই। ব্যাটাররা তো বটেই। ভারতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে এমন উইকেট তৈরি করা হয়েছে বলে জানালেন বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড। কারণ এ ধরণের উইকেটে মানিয়ে নিতে পারলে ভারতে উইকেট যেমনই হোক তা নিয়ে ভাবতে হবে না তাসকিন-মোস্তাফিজদের।

আর উপমহাদেশের উইকেটে বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে টাইগারদের এই পেস বোলিং কোচের। ২০১১ সালে ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার যৌথ আয়োজনে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সদস্য ছিলেন তিনি। ভারত-পাকিস্তানে খেলেছেন দ্বিপাক্ষিক সিরিজও। তাই অন্যান্য সিরিজের চেয়ে বিশ্বকাপে কেমন উইকেট থাকবে সে পার্থক্যটা জানেন তিনি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই এ কোচ বললেন, ‘আমি এখানে ২০১১ সালে ওডিআই বিশ্বকাপ খেলেছি এবং আমি আপনাকে বলতে পারি যে উইকেটে খুব বেশি স্পিন করবে না। তাই বিশ্বকাপে আমাদের উইকেটে খেলতে হবে সেখানে বল স্কিড করবে, তাই আপনাকে মানসিকতা বা দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে না এবং এটি এখানে যেমন আছে তেমনই থাকবে। উইকেটে এখানে যেমন আছে তেমন হবে তাহলে আপনি যেখানে খেলবেন সেটা বিবেচ্য বিষয় হবে না। ভালো উইকেটে অনেক উচ্চ স্কোর হয় তাই আমি মনে করি এখানে আমরা যা করেছি তা নিতে হবে এবং ক্লেমসফোর্ড, আফগানিস্তান এবং এশিয়া কাপে থেকেও। পাকিস্তানে উইকেট একেবারেই গুলির মতো হতে চলেছে তাই আমরা জানি আমরা কোথায় আছি। এটা বিশ্বকাপে খুব সূক্ষ্ম ব্যবধানে নেমে আসবে এবং আমি ডেথ বোলিংয়ের দক্ষতার কথা বলছি।’

এছাড়া ভারত ও পাকিস্তানের মাটিতে বল রিভার্স করার বিষয়টিও রয়েছে তার ভাবনায়, ‘এটা (ডেথ বোলিং) আসলে মূল বিষয় হতে যাচ্ছে। বল ভারতে রিভার্স করবে, এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই এবং পাকিস্তানেও রিভার্স করবে। নেটে ব্যাটিং ও বোলিং অনুশীলনে আমরা এটা নিয়েই কাজ করছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা এবং যা নেই তা নিয়েও। তাই আমরা প্রস্তুত হতে চাই আমাদের সামনে পরবর্তী সময়ে যা আসবে এবং এটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।’

রিভার্স সুইং করানোর জন্য তাই পুরনো বলে অনুশীলন করার দিকেও নজর দিচ্ছেন টাইগাররা। ডোনাল্ডের ভাষায়, ‘পুরানো বল খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আমাদের এমন একদল ছেলের প্রয়োজন যাদের ওপর আপনি নির্ভর করতে পারেন। সেখানে দক্ষ হতে হলে আপনার হাসান, এবাদত বা শরিফুলদের প্রয়োজন।’

যেভাবে ধারাবাহিক ব্যাটিংয়ে উন্নতি হচ্ছে তাতে ৪০০ রান করা বাংলাদেশের পক্ষে অসম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ, ‘অবশ্যই ৪০০ রান সম্ভব। প্রথম ম্যাচে দুজন ৯০ রান করে আউট হয়েছে। পরের ম্যাচে দুজন ৭০ করেছে। মুশফিক ইনিংসটাকে বড় করেছে, ১০০ করেছে। আমরা ওই জুটিগুলোকে আরও গভীরে নিতে চাই। আয়ারল্যান্ডকে শেষ ১০ ওভারে নিতে চাই ৭ অথবা ৬ উইকেট হাতে রেখে। যেন আমরা আরও বেশি রান নিতে পারি। আমরা ওই জুটিগুলো আরও লম্বা করতে পারব। আমাদের ওই জুটিগুলো আরও বড় করতে হবে, ম্যাচটাকে আরও গভীরে নিতে হবে।’ নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের সামনে। বড় দলগুলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বড় রান করছে। সেই রান তাড়া করে জিতছে আরেক দল। লিটন, সাকিব, মুশফিকরা ছুটছে সেই পথেই। গত বছর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ২০ ম্যাচে বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করেছে ১২ বার। যেখানে সর্বনিম্ন রান ১৯২, সর্বোচ্চ ৩৪৯। আগে ব্যাটিং করে পাঁচটিতে করেছে তিন’শর বেশি রান। ২৫০ পেরিয়েছে তিনবার। ২০০ থেকে ২৫০ রানের পুঁজি পেয়েছে দুটিতে এবং ২০০’র নিচে আছে দুটিতে। বড় রান করলে বোলারদের আত্মবিশ্বাসও থাকে তুঙ্গে। তখন নিজেদের পরিকল্পনা আরো ভালোভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। ডোনাল্ড যেন সেই কথাটাই বললেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত