ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কিংসলের কাছে গোল চান কাবরেরা

প্রীতি ম্যাচ : বাংলাদেশ- সিশেলস
কিংসলের কাছে গোল চান কাবরেরা

লাল-সবুজ জার্সিতে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে নাইজেরিয়া থেকে বাংলাদেশি হওয়া এলিটা কিংসলের। শনিবার সিলেট স্টেডিয়ামে সিশেলসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে ৩৩ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারের। এর আগে জাতীয় দলের প্রাথমিক দলে ডাক পেয়েও স্বপ্ন ভাঙার বেদনায় পুড়তে হয়েছিল তাকে। এবার আর বেদনাদায়ক কিছু ঘটেনি, প্রাথমিক দল থেকে চূড়ান্ত দলে জায়গা করে নিয়ে বাংলাদেশের জার্সিতে মাঠে নামার সুখণ্ডস্মৃতি হয়েছে এলিটার। আফ্রিকান দলটির বিপক্ষে বদলি খেলতে নেমে গোলের সুযোগও পেলেন, কিন্তু পারেননি কাজে লাগাতে। কাজী তারিক রায়হানের একমাত্র গোলে জিতেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামার পর ৬১ মিনিটে তার বাঁ পায়ে শটের বল চলে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। ৮৮ মিনিটে জোরালো শট ফিস্ট করে ফেরান গোলরক্ষক।

তার কাছ থেকে পরের ম্যাচে গোল চাইলেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। কাবরেরার চাওয়া পরের ম্যাচে বল যেন যায় জাল্,ে ‘এলিটাকে নিয়ে আমি খুশি, সে কঠোর পরিশ্রম করেছে। সবাই কঠোর পরিশ্রম করেছে। যেভাবে আমরা খেলেছিৃস্ট্রাইকারদের গোল করার প্রয়োজন ছিল, তারা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। কিংসলের খেলায় আরও উন্নতি করতে হবে। তবে এ ম্যাচে সে পরিষ্কার সুযোগ পেয়েছিল। আশা করি, এর পরে সে গোল করবে। এজন্য আমাদেরকে তাকে সমর্থন যোগাতে হবে।’

প্রথমার্ধের শেষ দিকে হেডে জাল খুঁজে নেন তারিক। তাতে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে ৩-১ গোলে হারের ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দিতে পেরেছে বাংলাদেশ।

স্বপ্ন পূরণের আনন্দ ও তার পেছনে যে পরিশ্রমের গল্প আছে গতকাল সেসবই শুনিয়েছেন এলিটা, ‘এটা আমার জন্য ঐতিহাসিক বিষয়। যে অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করার নয়। খুব খুব ভালো লাগছে। বাংলাদেশের হয়ে অবশেষে খেলতে পেরেছি, ঐতিহাসিক দিন আমার এবং আমার পরিবারের জন্য।’

২০২১ সালে প্রাথমিক দলে ডাক পেলেও সেবার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বাংলাদেশের হয়ে খেলার সুযোগ না পেলেও হাল ছাড়েননি কিংসলে, ‘চেষ্টা করে যাওয়া এবং আরও ভালো খেলে যাওয়ার মনোভাবটা ছিল আমার অনুপ্রেরণা। আমি মনে করি, আমি যত বেশি লড়াই করব, মানুষ আমার ভালো করার চেষ্টা তত বেশি দেখবে। তো বাফুফে যখন আমাকে প্রথম দলে ডাকল, আমার মনে হলো যদি আমি ব্যর্থ হই, তাহলে সবকিছু এখানেই শেষ হয়ে যাবে। এ কারণে সব সুযোগ নিমিষেই শেষ হয়ে যেতে পারে ভেবে আমি নিজেকে আরও বেশি পুশ করতে থাকলাম। পরিবারের সবাই খুব পাশে ছিল এবং আমিও ভাবতাম, আমার স্বপ্ন জাতীয় দলে খেলা, দেখি চেষ্টা করে যে সেটা পূরণ করতে পারি কিনা। আজ সেই চেষ্টা করে যাওয়ার প্রতিদান পেলাম।’

সিশেলসের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে গোলের সুবর্ন সুযোগ নষ্ট করেছেন এলিটা। গোল করার আফসোস থাকলেও অভিষেক ম্যাচ জেতায় খুশি তিনি, ‘দলের জয়ে আমার পুরো অবদান ছিল না। বাংলাদেশকে গোল এনে দেওয়ার খুব ভালো সুযোগ পেয়েছিলাম, ব্যবধান দ্বিগুণ করার, কিন্তু সেটা কাজে লাগাতে পারিনি। দল জেতায় আমার আনন্দ আছে, কিন্তু খুবই খুশি হতাম, যদি আমি গোল করতে পারতাম। বিষয়টা তখন আরও আনন্দদায়ক হতো; কেননা, আমরা স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের হয়ে খেলা এবং অভিষেক ম্যাচে গোল করা।’

এলিটা কিংসলের বয়স এখন ৩৩। এই বয়সে এসে শুরু হলো নতুন যাত্রা। ফুটবল পাড়ায় তার ফিটনেস নিয়ে হতো বেশ আলোচনা। তবে সেসব নিয়ে তার নেই কোনো মাথা ব্যাথা। কিভাবে নিজেকে ফিট রাখেন সেই গল্প বললেন কিংসলে, ‘মানুষের এটা জানা দরকার, আমার যে বয়স, সেটা ফুটবলের দিক থেকে দেখতে গেলে যে বিষয়টা গুরুত্ব দিতে হবে, সেটা হচ্ছে, আমি কিভাবে নিজের শরীরটাকে যত্ন নেই, দেখভাল করি। নিজের শরীরটাকে আমি সেভাবেই যত্ন করি, কেননা, আমি জানি, আমি খেলতে চাই। দীর্ঘদিন ধরেই এই যত্ন নিয়ে আসছি। সেটা যদি না করতাম, তাহলে নানা চোটে পড়ে এই বয়সে আমি ফুটবল খেলতে পারতাম না। আমি নিজের চ্যালেঞ্জটা জানি এবং খেলা চালিয়ে যেতে চাই। তাড়াছা দেখ, এখানে কিছু জিনগত বিষয়ও আছে। এই যে আমার মেয়ে (পাশে বসে থাকা শাফিরার দিকে দেখিয়ে) ওর বয়স মাত্র নয় বছর, কিন্তু দেখো ও বেশ লম্বা হয়ে উঠেছে। ওর গড়ন দেখে কী বোঝা যায়, ওর বয়স এত কম! তো যেটা হতে চাই , সেটা হতে আমার মতো মানুষের জন্য অতিরিক্ত একটু চেষ্টা করতে হয় আরকি।’

বাংলাদেশের হয়ে খেলার পেছনে সব কৃতিত্ব কিংসলে দিলেন তার স্ত্রী ও সন্তানকে। তাদের কারণেই আজ এই পর্যন্ত আসতে পেরেছে তিনি, ‘এই দুই জন (তার দুই পাশে বসে ছিলেন স্ত্রী ও সন্তান)। যখন আমার বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলো, তখন এরা জানত না এরা কি করছে, কোথায় যেতে হবে। কিন্তু আমার স্ত্রী ভিন্ন ভিন্ন অফিসে দিনের পর দিন ছোটাছুটি করেছে। এই মন্ত্রণালয় থেকে ওই মন্ত্রণালয় দৌড়াদৌড়ি করেছে। অবশেষে আমি যখন বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেলাম, তখন ওর (স্ত্রী) ইচ্ছা হলো যদি বাফুফে আমাকে বাংলাদেশের হয়ে খেলার সুযোগ দেয়, তাহলে আমি যেন খেলি। যে কারণে আজ আমি এখানে।’

২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে খেলা কিংসলে ২০১২ সালে বিয়ে করেন বাংলাদেশের মেয়ে লিজা জাফরকে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। তা পেয়েও যান ২০২১ সালে। এরপর ফিফা ও এএফসির সম্মতি পাওয়া সংক্রান্ত নানা জটিলাতার বাঁক পেরিয়ে অবশেষে সিশেলসের বিপক্ষে খেললেন তিনি। লাল-সবুজের জার্সি পরতে ছোটাছুটির সেই দিনগুলোর দিকেও পিছু ফিরে দেখলেন ৩৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত