লিটন-রনি-তাসকিন তাণ্ডব

প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

খেলা শুরুর আগে চট্টগ্রামের আকাশ খানিকটা মেঘলা, চারপাশ গুমোট। একটু পর ঠিকই ওঠে ঝড়। তবে প্রকৃতিতে নয়, জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের ২২ গজে! রনি তালুকদার ও লিটন দাস যেন তাণ্ডব বইয়ে দিলেন আইরিশ বোলিংয়ের ওপর দিয়ে। বৃষ্টিতে আয়ারল্যান্ডের লক্ষ্য ছোট হয়ে এলে ৪ উইকেটের বিধ্বংসী স্পেলে বল হাতে জ্বলে উঠলেন তাসকিন আহমেদ, আইরিশদের আশা গুঁড়িয়ে ১ ওভারেই ৩ উইকেট নেন। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি ১৬ রানে। প্রত্যাশিত জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ, তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ২২ রানে হারান স্বাগতিকরা। চট্টগ্রামে গতকাল বাংলাদেশ ১৯.২ ওভারে ৫ উইকটে ২০৭ রান তোলার পর নামে বৃষ্টি। ইনিংস শেষ হয় ওখানেই, আয়ারল্যান্ডের নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ৮ ওভারে ১০৪ রান, ৫ উইকেট হারিয়ে তারা করতে পারে ৮১ রান।

টস হেরে ব্যাটিং পেয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব বলেছিলেন, উইকেটের সম্ভাব্য আচরণের কোনো ধারণা তার নেই, যত বেশি সম্ভব রান তুলতে চান তারা। সে পথে দলকে এগিয়ে নেন ওপেনার লিটন ও রনি, পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশের রেকর্ড রান তুলে শেষ পর্যন্ত ৯১ রানের জুটি গড়েন স্রেফ ৭.১ ওভারে! প্রথম ওভারে লিটনের ছক্কায় শুরু, এরপর তাদের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে এলোমেলো হয়ে যায় আইরিশ বোলিং। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণীতে সাকিব বললেন, এই জুটিই দলকে এগিয়ে নিয়েছে জয়ের পথে, ‘আমরা নিশ্চিত ছিলাম না উইকেটের আচরণ কেমন হবে। তবে যেভাবে দুই ওপেনার খেলেছে, শুরু থেকেই তারা ছিল দারুণ ইতিবাচক, ইন্টেন্ট ছিল ভালো এবং ঠিক এমন কিছুই আমাদের প্রয়োজন ছিল। এই জুটিই আমাদের জন্য ম্যাচের ভিত গড়ে দিয়েছে।’ ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৮ বলে ৬৭ রানের ইনিংস খেলেন ম্যাচসেরা রনি, লিটনের ব্যাট থেকে আসে ২৩ বলে ৪৭। পরে চারে নেমে ২০ বলে ৩০ করেন শামীম, সাকিব অপরাজিত থাকেন ১৩ বলে ২০ রান করে। ১৯.২ ওভারে বাংলাদেশ ২০৭ রান করার পর বৃষ্টিতে শেষ হয়ে যায় ইনিংস। পরে আয়ারল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৮ ওভারে ১০৪। তারা যেতে পারে ৮১ পর্যন্ত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজ থেকে সম্মিলিত অবদান ও দলীয় পারফরম্যান্সের যে নমুনা বাংলাদেশ মেলে ধরছে মাঠে, তা বাড়তি তৃপ্তি দিচ্ছে অধিনায়ককে, ‘আমরা এটাই চাই (সমন্বিত পারফরম্যান্স)। টি-টোয়েন্টিতে দুয়েকজনের পক্ষে সব ম্যাচে অবদান রাখা কঠিন। অলরাউন্ড পারফরম্যান্স প্রয়োজন আমাদের। গত চার ম্যাচ ধরে এটিই করে আসছি।’

৮ ওভারে ১০৪ রানের লক্ষ্য নিয়ে ঝড়ো শুরু করেছিল আয়ারল্যান্ড। নাসুম আহমেদের করা প্রথম ওভার থেকে পল স্টার্লিং-রস অ্যাডেয়ার জুটি নিলেন ১৬ রান। মোস্তাফিজুর রহমানের করা পরের ওভার থেকেও সমান সংখ্যক রান এলে বাংলাদেশ শিবিরে জাগে শঙ্কা। সেই শঙ্কা পরের ওভারে এসেই লাঘব করেন হাসান মাহমুদ। টানা তিনটি ডট দেওয়ার পর দারুণ এক ইয়র্কারে উপড়ে ফেললেন ১৩ রানে থাকা অ্যাডেয়ারের স্টাম্প; ওভারে দিলেন মোটে ৫ রান। পরের ওভারে তাসকিন আহমেদ এসে যেন নিজেকে আরও ওপরে নিয়ে গেলেন। লরকান টাকারের স্টাম্প উপড়ে ওভার শুরু করে পরে টানা দুই বলে ফেরালেন স্টার্লিং ও জর্জ ডকরেলকে। হ্যাটট্রিক না হলেও ৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ওই ওভারেই যেন আয়ারল্যান্ডের আশায় জল ঢেলে দিলেন। হাসানের দ্বিতীয় ওভারে অবশ্য ১৬ রান নিয়ে টাকার জিইয়ে রেখেছিলেন আইরিশদের আশা। তবে এরপর সাকিব আল হাসান এসে দেন মাত্র ৫ রান; সাথে মোস্তাফিজও ষষ্ঠ ওভারে ৭ রান দিলে আইরিশদের সম্ভাবনা কার্যত শেষ হয়ে যায়। তাদের যন্ত্রণা আরো বাড়িয়ে শেষ ওভারের প্রথম বলেই মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত ক্যাচে ১৯ রানে থাকা টেক্টরকে ফিরিয়েছিলেন তাসকিন। অন্য প্রান্তে ২১* রানে গ্যারেথ ডিলেনি টিকে থাকলেও বাংলাদেশ তাই ছিনিয়ে নিয়েছে জয়।