বিশ্বকাপের পর তিন তারকা জার্সিতে আর্জেন্টিনার প্রথমবার মাঠে নামাকে স্মরণীয় করেছে বুয়েন্স এইরেসের মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামের ৮৪ হাজার দর্শক। এখানেই শেষ নয়, দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল কনফেডারেশন তৈরি করে মেসির ভাস্কর্য, যা থাকবে কনমেবলের জাদুঘরে। আর্জেন্টাইন অধিনায়কের এই ভাস্কর্য রাখা হবে পেলে ও ডিয়াগো ম্যারাডোনার ভাস্কর্যের পাশে। শুধু কী তাই, কনমেবল প্রেসিডেন্ট আলেহান্দ্রো দমিনগেজ মেসিকে বিশ্ব ফুটবলের ‘শাসক’ ঘোষণা করেছে। সব মিলিয়ে মাঠ ও মাঠের বাইরে দারুণ সময় কাটছে আর্জেন্টাইন মহাতারকার।
মেসির জন্য সবই ব্যবহার করা হয়ে গেছে, নতুন শব্দ কোথায় পাওয়া যায়! সতীর্থ নিকোলাস গনসালেসের অবস্থা অনেকটা এরকমই। লিওনেল মেসির প্রশংসায় বিশেষণ খুঁজে হয়রান এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড, শেষ পর্যন্ত তার উপলব্ধি, মেসিকে বর্ণনা করার জন্য উপযুক্ত ভাষা আপাতত নেই, তাদের কোচ লিওনেল স্কালোনির মতে, সব প্রশংসাই মেসির প্রাপ্য। ৩৬ বছরের খরা ঘুচিয়ে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক বিশ্বকাপ শেষেও ছুটছেন অপ্রতিরোধ্য গতিতে, প্রতি ম্যাচেই ধরা দিচ্ছে মাইলফলক, নিজেকে তুলে নিচ্ছেন নতুন উচ্চতায়। বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচে গত বৃহস্পতিবার পানামার বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ে দারুণ ফ্রি কিকে গোল করে পৌঁছে যান ক্যারিয়ারে ৮০০ গোলের ঠিকানায়। এরপর বাংলাদেশ সময় গতকাল বুধবার সকালে কুরাসাওয়ের বিপক্ষে ম্যাচে দলের প্রথম গোলটি করে আন্তর্জাতিক ফুটবলে পূর্ণ করেন শততম গোল। শুধু আর্জেন্টিনা নয়, গোটা দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম ফুটবলার হিসেবে মেসি গড়লেন এই কীর্তি। আর ফুটবল ইতিহাসেই পেরেছেন আর মাত্র দুজন- আলি দাইয়ি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। আলী দাই ১৯৯৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খেলে করেছেন ১০৯ গোল, আর রোনালদো পর্তুগালের হয়ে ১৯৮ ম্যাচে করেছেন ১২২ গোল। মেসি মাইলফলক ছুঁয়েই থামেননি, পরে আরো দুই গোলে পূর্ণ করেন হ্যাটট্রিক। সব মিলে আর্জেন্টিনার জার্সিতে ১৭৪ ম্যাচে মেসির গোল এখন ১০২টি। আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসির অভিষেক ২০০৫ সালে, প্রথম গোল করেন ষষ্ঠ ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। ৫০তম গোল পান ২০১৬ সালে বলিভিয়ার বিপক্ষে। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে সেই ম্যাচটা ছিল মেসির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ১০৭তম। বয়স যত বেড়েছে গোলের ক্ষুধাও বেড়েছে তত। তাই পরের ৬৭ ম্যাচে মেসির গোল ৫২টি। সাতবারের ব্যালন ডি’অর বিজয়ী মেসি দেশের হয়ে গোল করে যাচ্ছেন নিয়মিত। ক্যারিয়ার শেষে তার গোলসংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই দেখার বিষয়।
কুরাসাওয়ের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচটা স্রেফ উপলক্ষ্য যেন, সবই আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ সাফল্য উদযাপনের আয়োজন! পানামা ও কুরাসাওয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দুটিতে দেখা গেছে আনন্দ, উল্লাস আর আবেগের জোয়ার। আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি তাতে কোনো সমস্যাও দেখছেন না। তার মতে, বিশ্বকাপ জয়ের উৎসব চলতেই থাকবে এবং সেটিই উচিত।