বাংলাওয়াশ নাকি আরো কিছু

প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

পরপর দুই বিশ্বকাপে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর টি-টোয়েন্টিতে আরো একবার নতুন শুরুর ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ, এবার পথচলার শুরুটা হয়েছে দারুণ। প্রথম সিরিজেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৩-০ তে হারিয়েছে তারা। আইরিশদের বিপক্ষেও সিরিজ জয় নিশ্চিতের পর অপেক্ষা এখন একই ফলের। সাফল্যে মোড়ানো এক সিরিজ শেষের পথে। একটি সিরিজ থেকে যতটা ব্যক্তিগত ও দলগত অর্জন সম্ভব, তার প্রায় সবটাই করে দেখিয়েছে সাকিবের দল। এবার জিতলে ৩-০ ব্যবধানে বাংলাদেশ মিশন পূরণ হবে। তার সঙ্গে কি আরও কিছু রেকর্ডও যোগ করবে টাইগাররা? যেমন ছন্দে আছে দল, নতুন কিছু ঘটা অসম্ভব নয় একেবারেই।

ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি, একের পর এক দাপুটে জয়, ব্যক্তিগত আর দলীয় নানা অর্জন- সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রেকর্ডময় পথচলায় পিষ্ট আয়ারল্যান্ড। কোনো লড়াই করা বা প্রতিরোধ গড়তে পারছে না সফরকারীরা। মাঠের লড়াইয়ে তবু তৃপ্তির ঢেকুর তোলার কোনো সুযোগ দেখছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে আজ দুপুর ২টায় শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে একাদশে পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়ে রাখলেন তিনি। তবে ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় দলগুলিকে অনুসরণ করে প্রতিপক্ষকে পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়ে ৩-০ ব্যবধানের জয় দেখতে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। এই দুই ম্যাচে সাকিবদের দাপুটে ক্রিকেটের সামনে টিকতে পারেনি প্রতিপক্ষ। দুই ম্যাচের কোনো পর্যায়েই জয়ের সম্ভাবনা সেভাবে কখনোই জাগাতে পারেনি আইরিশরা। টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে সিলেটে ওয়ানডে সিরিজেও আয়ারল্যান্ডের অবস্থা ছিল তথৈবচ। ২-০ ব্যবধানের সিরিজ জয়ে দুটি ম্যাচ বাংলাদেশ জিতে ১৮৩ রান ও ১০ উইকেটে। বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া আরেক ওয়ানডেতে রেকর্ড ৩৪৯ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচেও আইরিশরা পারতেন না, এটা বলে দেওয়ায় ঝুঁকি খুব একটা নেই।

ওয়ানডে সিরিজের পরপর দুই ম্যাচে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি সিরিজে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার টানা দুই ম্যাচে স্পর্শ করে ২০০। প্রতিপক্ষকে এরকম বিধ্বস্ত করে এক ম্যাচ বাকি রেখে সিরিজ জয়ের পর শেষ ম্যাচে কিছুটা গাছাড়া ভাব আসা খুব অস্বাভাবিক নয়। ক্রিকেটে এমন কিছু দেখা গেছে অনেকবারই। তবে উন্নতির নেশায় ছুটে চলা বাংলাদেশ দলে কোনো রকম ছাড় দেওয়ার মানসিকতা দেখতে চান না অধিনায়ক সাকিব, ‘যদি ভালো দল হয়ে উঠতে হয়, অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ড যেমন, তারা ২-০তে এগিয়ে থাকলে সবসময়ই ৩-০ ব্যবধানে জিততে চায়। আমরা সেটিই চেষ্টা করব। তবে টি-টোয়েন্টি খেলাটাই এমন, যে কেউ জিততে পারে। সংক্ষিপ্ত সংস্করণ এটি, একজন-দুজনই খেলা বদলে দিতে পারে। আত্মতুষ্টির তাই জায়গা নেই।’

সিরিজ জয়ের পর শেষ ম্যাচে অবশ্য কিছুটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়ে দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবে তাতে জয়ের তাড়নায় কোনো কমতি থাকবে না, সেটিও তিনি নিশ্চিত করে দিলেন- ‘আমরা হয়তো দুয়েকজনকে বদল করতে পারি, অন্যদের খেলিয়ে দেখতে পারি। তবে তারাও একই রকম ক্ষুধার্ত থাকবে বাংলাদেশের জন্য রান করতে বা উইকেট নিতে।’

দুই সিরিজের এই পাঁচটি ম্যাচই খেলেছেন রনি। তার সঙ্গে লিটন দাসের ঝড়ো উদ্বোধনী জুটিতে প্রায় প্রতিটি ম্যাচে দারুণ শুরু পেয়েছে বাংলাদেশ। সেই পথ ধরে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন পরের ব্যাটসম্যানরা। বোলাররাও দাপুটে পারফরম্যান্সে প্রতিনিয়তই যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছেন নিজেদের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম ফিফটি করেন রনি। ৩৮ বলে ৬৭ রানের ইনিংসের সৌজন্যে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। দ্বিতীয় ম্যাচেও উজ্জ্বল তার ব্যাট। রেকর্ড ১২৪ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ার পথে খেলেন ২৩ বলে ৪৪ রানের ইনিংস। জাতীয় দলে নতুন অধ্যায়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন রনি প্রায় ৮ বছর পর। তার জন্য বলা যায় সবকিছুই নতুন। তবে একজনকে তিনি দেখছেন পুরনো রূপেই। এক যুগ আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে যার সঙ্গে খেলেছেন, সেই সাকিব আল হাসানকে তিনি এখন পেয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে। এই অলরাউন্ডারের মানসিকতায় বরাবরের সেই আগ্রাসী রূপটাই এখনও দেখছেন তিনি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টির আগের দিন চট্টগ্রামে গতকাল গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রনি বলেন, দলের মধ্যে দাপুটে মনোভাবে আগুন জ্বেলে দিয়েছেন সাকিবই, ‘সিাকিব ভাইয়ের সঙ্গে আবাহনীতে খেলেছি প্রায় ১২ বছর আগে। তখন একই ইনটেন্ট, একই মনমানসিকতা উনার ভেতরে ছিল। উনি সবসময় ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করেন, ডমিনেট করার চেষ্টা করেন। উনার যে ডমিনেটিং চিন্তাভাবনা, সেটা দলের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন যে, আমরা খেলব, বাঘের মতো খেলব। আমরা ডমিনেট করার চেষ্টা করব। আমাদের ভয়ডর থাকবে না, আমরা সবসময় ইতিবাচক মানসিকতা নিয়েই মাঠে যাব। হতে পারে কখনও আমরা ব্যর্থ হব, আবার সফল হব। তবে যদি আমরা এই জিনিসটা ধরে রাখতে পারি, এটা ধারণ করে চললে আমাদের সাফল্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এটা কোচণ্ডঅধিনায়কের চিন্তাভাবনা একই।’

টি-টোয়েন্টির দুই ম্যাচ হারের আগে ওয়ানডে সিরিজেও ন্যূনতম লড়াই করতে পারেনি আয়ারল্যান্ড। বৃষ্টিতে এক ম্যাচ ভেসে যাওয়ায় তাদের হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ। বাকি দুই ম্যাচে স্রেফ উড়ে গেছে আইরিশরা। টি-টোয়েন্টিতেও তাদের পারফরম্যান্স যাচ্ছেতাই। রনি অবশ্য সেখানে আইরিশদের ব্যর্থতার চেয়ে নিজেদের কৃতিত্বই দেখছেন বেশি, ‘আমরা ভালো খেলছি। আমাদের দল ভালো খেলছে, ব্যাটসম্যানরা ভালো খেলছে, বোলাররা ভালো খেলছে, দলগতভাবে আমরা ভালো খেলছি।’ প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড হলেও অন্য যে কোনো বড় দলের সঙ্গে খেলার মতো মনোভাবই এই বাংলাদেশ দলের আছে বলে বিশ্বাস রনির। আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার সেই পথচলায় শুক্রবার আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ।