হারানোর ভয় জিতে ছুটছেন রনি তালুকদার

প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে রনি তালুকদারের পরিচয় ২০১৫ সালে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই থমকে যেতে হয় মাত্র এক ম্যাচ খেলে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওই টি-টোয়েন্টিতে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ রান করেন। দ্বিতীয় ম্যাচ খেলার জন্য তার অপেক্ষা ৭ বছর ২৪৫ দিনের। মাঝে বাংলাদেশ খেলে ফেলে ১০০টি ম্যাচ! প্রায় ৮ বছর বিরতির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে প্রথম বলটি খেলার সময় কেমন লাগে! কিছুটা অস্বস্তি বা জড়তা অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু ফেরার পর প্রথম বলেই মারলেন চার, স্যাম কারানের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি এক্সট্রা কাভার দিয়ে!

ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অধ্যায়ে এখন পর্যন্ত খেলা পাঁচ টি-টোয়েন্টিতে ৩৩ গড়ে ১৬৫ রান করেছেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ১৪৮.৬৪! পাঁচ ম্যাচে ১৮টি চারের সঙ্গে মেরেছে ৫ ছক্কা। চলতি মাসের শুরুতে ইংল্যান্ড সিরিজে রনির ব্যাটে ছিল ভালো কিছু করার আভাস, যা বাস্তব রূপ পেয়েছে আইরিশদের বিপক্ষে সিরিজের দুই টি-টোয়েন্টিতেই। প্রথম ম্যাচে ১৭৬.৩১ স্ট্রাইক রেটে ৩৮ বলে ৬৭ রানের পর দ্বিতীয়টিতে তার সংগ্রহ ২৩ বলে ৪৪ রান। স্ট্রাইক রেট ১৯১.৩০!

বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ১৩ ইনিংসে ১২৯.১৭ স্ট্রাইক রেটে আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪২৫ রান করেন রনি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে আসরের প্রথম ম্যাচে ১৯ বলের ফিফটিতে করেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বিপিএলে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড।

বিপিএলের সৌজন্য প্রায় ৮ বছর পর রনির জন্য খুলে যায় জাতীয় দলের দুয়ার। দীর্ঘ দিন পর আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফিরলেও মানসিকতায় কোনো পরিবর্তন আনেননি রনি। জায়গা পোক্ত করতে ধরে খেলার পথেও হাঁটেননি তিনি। অতীতে এক ম্যাচ খেলে বাদ পড়লেও এবার ভয় পাচ্ছেন না, ভয়ডরহীন খেলার অনুমতিপত্র পেয়েছেন দল থেকে, ‘আমার হারানোর কিছু নেই; ৮ বছর আগে যেমন খেলেছি, এখনো তাই আছে। কারণ, ইতিবাচক ইন্টেন্ট নিয়ে মাঠে নামি। ম্যানেজমেন্ট বলেছে যে, আমার খেলার ধরন অনুযায়ী খেলতে। ফলে এখন বাদ পড়ে যাওয়ার ভয় কাজ করে না।’ দল থেকে রনিকে এই সাহস দেয়া সহজ হয়েছে হয়তো গোটা দলের ভাবনা এখন এরকম বলেই। গোটা দলই এখন উজ্জীবিত আগ্রাসনের মন্ত্রে, ‘টিম ম্যানেজমেন্ট পরিকল্পনা দেয়। সে অনুযায়ী কাজটা করার চেষ্টা করি। তবে মূল পরিকল্পনাটা হলো ইতিবাচক থাকার। টিম ম্যানেজমেন্ট যারা, ড্রেসিং রুমে একটা জিনিসই করার চেষ্টা করছি, সবাই যেন ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে পারি।

টি-টোয়েন্টিতে উদ্বোধনী জুটিতে দীর্ঘ দিনের সমস্যার সমাধানের আভাস মিলছে লিটন দাস ও রনির ব্যাটিংয়ে। অনেক সঙ্গীর সঙ্গে জুটি গড়ার অভিজ্ঞতার পর লিটন বলেই দিয়েছেন, রনির সঙ্গে ব্যাটিংয়ে মজা পাচ্ছেন। নতুন শুরু করা রনিও জানালেন, লিটনের সঙ্গে ব্যাটিংয়ে সহজ হয়ে ওঠে তার কাজ। ইংল্যান্ড সিরিজ দিয়ে শুরু নতুন জুটির পথচলা। প্রথম দুই ম্যাচে বড় জুটি না হলেও সম্ভাবনার ছাপ দেখা যায় উইকেটে তাদের স্বল্প উপস্থিতিতেই, তৃতীয় ম্যাচ থেকে সেই সম্ভাবনা রূপ নিতে থাকে বাস্তবে, দু’জন মিলে যোগ করেন ৫৫ রান।

আয়ারল্যান্ড সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে আরও উজ্জ্বল লিটন-রনি জুটি। প্রথম ম্যাচে ৪৩ বলে ৯১ রানের বিধ্বংসী জুটির পর দ্বিতীয় ম্যাচে তারা গড়েন ৫৬ বলে ১২৪ রানের রেকর্ড জুটি, টি-টোয়েন্টিতে শুরুর জুটিতে যা বাংলাদেশের রেকর্ড। এই সংস্করণে টানা তিন ম্যাচে অর্ধশত রানের শুরু এবারই প্রথম পেল বাংলাদেশ। এই জুটি নিজেদের আলাদা করে মেলে ধরেছে রান করার ধরনেও। ৫৫ রানের জুটিতে তাদের রান রেট ছিল ৭.৩৩, পরের দুই জুটিতে রান রেট ১২.৬৯ ও ১৩.২৮। এমনকি দুজনের জুটির প্রথম ম্যাচেও ৩৩ রান এসেছিল ৯.৪২ রান রেটে। পাঁচ ম্যাচেই দুটি পঞ্চাশের সঙ্গে একটি শতরানের জুটি গড়ে ফেলেছেন লিটন-রনি। ২০২১ সালের শুরু থেকে ইংল্যান্ড সিরিজ শুরুর আগ পর্যন্ত উদ্বোধনী জুটিতে ৪৮ ম্যাচে মাত্র দুইটি ফিফটি ও একটি একশ ছাড়ানো শুরু পায় বাংলাদেশ। লিটন-রনি তা স্পর্শ করে ফেলেছেন পাঁচ ম্যাচের মধ্যেই।