‘পার্থক্য’ দেখাতে পূর্ণশক্তি

প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

বাংলাদেশ সফরে এসে সাদা বলে ছয় ম্যাচ খেলে মাত্র একটি জিততে পেরেছে আয়ারল্যান্ড। ওয়ানডে সিরিজে তাদের অধিনায়কের মুখে শোনা গেছে বাংলাদেশের ৩৫০ রান চেজ করার আত্মবিশ্বাসের কথা, যা বাস্তবে ঘটেনি। এবার একমাত্র টেস্টের আগে আইরিশদের সঙ্গে শক্তির পার্থক্যটা বুঝিয়ে দিতে চায় বাংলাদেশ। দলের অন্যতম নির্বাচক আবদুর রাজ্জাক বললেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে স্রেফ জয় নয়, বড় ব্যবধানের জয়ের লক্ষ্য তাদের। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রাজ্জাক বলেন, ‘আমার সোজা হিসাব, জিততে চাই। খুব ভালোভাবে টেস্ট ম্যাচটা জিততে চাই। ম্যাচটা খুব ভালোভাবে দাপট দেখিয়ে জিততে চাই, একটা সময় ছিল শুরুর দিকে আমরা যখন টেস্ট খেলেছি, তখন প্রতিপক্ষ আমাদের সঙ্গে দাপট দেখিয়ে জিততে। আমরাও আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে সেভাবেই খেলতে চাই, যাতে করে বোঝানো যায় যে আমাদের উন্নতি হচ্ছে। নতুন যারা আসছে, তাদের সঙ্গে আমাদেরও পার্থক্যটা এ রকম।’

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের জন্য শনিবার পূর্ণ শক্তির দল ঘোষণা করে বিসিবি। আইপিএলের অনাপত্তিপত্রকে ঘিরে অনেক জল্পনাকল্পনার পর সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসকে নিয়েই গড়া হয় ১৪ জনের স্কোয়াড। এই ম্যাচ দিয়ে আয়ারল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেটে ফিরছে প্রায় ৪ বছর পর। এই জাতীয় নির্বাচকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পূর্ণ শক্তির দল খেলানোর পেছনের ভাবনা। টেস্টের জন্যই সাকিব-লিটনকে আইপিএলের ছাড়পত্র দেয়নি বিসিবি। শক্তির বিচারে টেস্ট ক্রিকেটের দুর্বলতম দল বলা যায় আয়ারল্যান্ডকে। বিশেষ করে, এই কন্ডিশনে তাদের অপেক্ষায় বড় পরীক্ষা। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশও নয় এই ম্যাচ। তবে রাজ্জাক বলেন, পারিপার্শ্বিকতা যেমনই হোক, টেস্ট ম্যাচ মানেই সর্বোচ্চ গুরুত্বের দাবি রাখে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের শুরুর দিনগুলির উদাহরণও তুলে ধরলেন তিনি, ‘টেস্ট ম্যাচ একটা ভিন্ন জিনিস। আমরা প্রথম দিকে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে টেস্ট খেলতে গেলে কিন্তু ওদের মূল দলটাই খেলত। ভারত কিন্তু টেস্ট খেলতে মূল দলটাই আসে। এই ম্যাচটা হয়তো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের (আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ) অংশ নয়। তবে টেস্ট জিতে রাখা একটা ভিন্ন বিষয়। এটা থেকে কেউ আসলে নিজেদের বঞ্চিত করতে চায় না। আমার সোজা হিসাব, খুব ভালোভাবে টেস্ট ম্যাচটা জিততে চাই। একটা সময় কিন্তু ছিল শুরুর দিকে, বিশেষ করে আমরা যখন টেস্ট খেলেছি, তখন যে অবস্থা ছিল, আমাদের সঙ্গে খেলত এবং সমানে দাপট দেখিয়ে ম্যাচ জিতত। আমরাও চাই সেভাবে করতে (হাসি)। যাতে করে বোঝানো যায় যে, আমাদেরও ওই উন্নতিটা হচ্ছে। নতুন যারা আসছে তাদের সঙ্গে আমাদেরও পার্থক্যটা এরকম।’

টেস্ট পরিবারের আরেক নবীন সদস্য আফগানিস্তানের কাছে ২০১৯ সালে দেশের মাঠেই টেস্ট হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। রাজ্জাক অবশ্য বললেন, ওই টেস্টের পুনরাবৃত্তির শঙ্কা তাদের মধ্যে কাজ করেনি, ‘আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে যেতে পারি বা আফগানিস্তানের কাছে হারের কথা চিন্তা হয়নি। আমাদের এই কথা চিন্তা হয়েছে যে, আমরা এই ম্যাচটা খুব ভালোভাবে দাপট দেখিয়ে জিততে চাই, খুব ভালোভাবে। আমাদেরও তো জানা দরকার আছে আমরা টেস্টে কোন অবস্থায় আছি, পার্থক্যটা কী।’

সাকিব-লিটনদের আইপিএল খেলার অনাপত্তিপত্র দিয়ে কিংবা আরও দুয়েকজনকে বিশ্রাম দিয়ে টেস্ট খেলার মতো শক্তির গভীরতা এখনও বাংলাদেশের নেই বলেই মনে করেন সাবেক এই বাঁহাতি স্পিনার, ‘আমি তো চাই, আমার ব্যক্তিগত দিক থেকে বলছি, একদম সেরা দলটাই খেলুক। যেহেতু এটা একটা টেস্ট ম্যাচ। টেস্টে আসলে আমার মনে হয় না, কোনো দলের বিপক্ষে কোনো সুযোগ নেয়া উচিত। কারণ টেস্ট ম্যাচ জিতে রাখাই ভালো। আর আমরা এখনো ওরকম পরিস্থিতিতে যাইনি যে, চার থেকে পাঁচজন ক্রিকেটার না থাকলেও কোনো সমস্যা হবে না। আমার মনে হয়, ওই পর্যায়ে যেতে আমাদের এখনও সময় লাগবে।’

পাশাপাশি আয়ারল্যান্ড দলকেও যথেষ্ট সমীহ করছেন রাজ্জাক। সাদা বলের দুই সিরিজে আইরিশরা তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারলেও তাদের শক্তিমত্তা নিয়ে সতর্ক বাংলাদেশের হয়ে ২০০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা সাবেক এই স্পিনার, ‘আয়ারল্যান্ডের প্রচুর ক্রিকেটার আছে, যারা কাউন্টিতে খেলে। ওদেরকে ওইভাবে দেখার কোনো কারণ নেই। এখানে আমাদের সঙ্গে ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি সিরিজ দেখে যদি মনে হয় যে ওরা খুব ভালো একটা দল নয়, এটা কিন্তু ভুল হবে। ওরা যা খেলছে এর চেয়ে অনেক ভালো দল। হয়তো কোনো কারণে শুরুতে মানিয়ে নিতে পারেনি। কিন্তু ওদের যা পারফরম্যান্স দেখা গেছে ওরা এর চেয়ে অনেক ভালো দল। ওদের মনে হয় প্রায় ৯০ শতাংশ ক্রিকেটারই কাউন্টি ক্রিকেট খেলে। আমরা যারা ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত, তাদের সবারই কিন্তু কাউন্টির মান সম্পর্কে ধারণা আছে। ওরা সেখানে পারফর্মও করে।’