‘ভালো উইকেট’ দেখছে দু’দলই

প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

অনুশীলন শেষ করে দুই দলের ক্রিকেটাররা টিম হোটেলে ফিরে গেছে। চৈত্রের রোদের তেজ তখন কমতে শুরু করেছে। এর মাঝে মাঠকর্মীদের নিয়ে শুরু হলো কিউরেটর গামিনি সিলভার ব্যস্ততা। উইকেটের ওপর কাটা ঘাস ছড়িয়ে চালানো হলো রোলার। তাতে সবুজাভ ভাব যেন কিছুটা বাড়ল। আজ ম্যাচের দিন সকালে তা চমক হতে পারে দুই দলের জন্য। তবে এর আগে উইকেট দেখে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের ভাবনা অভিন্ন, ভালো উইকেটে হবে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি। একটা সময় মিরপুর স্টেডিয়ামে টেস্ট মানেই ছিল স্পিন স্বর্গে খেলা। প্রথম সেশন থেকে বল নিচু হওয়া, বড় বড় বাঁক খাওয়া বা অসম বাউন্স ছিল নিয়মিত চিত্র। স্পিনারদের দাপটে তিন-চার দিনে শেষ হতো যে কোনো ম্যাচ। সাদা বলের ক্রিকেটে সেখান থেকে বেরিয়ে ভালো উইকেটে খেলার বার্তা আগেই দিয়েছেন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। এবার টেস্টেও মিলল তেমন কিছুর আভাস।

সিলেটে আইরিশদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ, চট্টগ্রামেও অব্যাহত থাকে আধিপত্য। হোয়াইটওয়াশ না করতে পারলেও ২-১ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতে সাকিব আল হাসানরা। এবার মিরপুরে একমাত্র টেস্টে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড।

সাদা বলের ক্রিকেটে আয়ারল্যান্ড যতটা চেনা বাংলাদেশের, লাল বলে ততটাই অচেনা। কারণ টেস্ট খেলুড়ে দেশ হলেও আইরিশদের এই সংস্করণে খুব একটা দেখা যায় না, ২০১৯ সালের জুলাইতে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের সর্বশেষ টেস্ট খেলেছে তারা, মিরপুর স্টেডিয়ামে প্রায় ঠিক পৌনে চার বছর পর টেস্ট খেলতে নামছে স্বাগতিকদের বিপক্ষে।

ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ডাগআউটে আসার পর সাদাপোশাকে ইংল্যান্ডের খেলার ধরণ খোলনলচে বদলে গেছে। ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ টেস্টেও আগ্রাসী ক্রিকেটে প্রতিপক্ষকে বধের মন্ত্রে এই খেলা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে ‘বাজ বল’ হিসেবে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে বাংলাদেশও আক্রমণাত্বক ক্রিকেট খেলার মানসিকতা নিয়ে নামবে। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই সিরিজে সাদা বলের দুই সংস্করণে আক্রমণাত্বক ক্রিকেট খেলতে দেখা গেছে সাকিব আল হাসানদের। শেষ টি-টোয়েন্টিতে হারার পরও সাকিব জানিয়েছিলেন ফল যাই আসুক তারা আক্রমণাত্বক মানসিকতা চালিয়ে যাবেন। তবে টেস্ট আর টি-টোয়েন্টির মধ্যে পার্থক্য আকাশ-পাতাল। একটাতে ধৈর্য্যরে পরীক্ষা দিয়ে করতে হয় টিকে থাকার লড়াই। আরেকটিতে ধুমণ্ডধাড়াক্কা মারের কোনো বিকল্প নেই, বল হজম করা যেখানে অপচয়। সম্প্রতি আগ্রাসী ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশ কি টেস্টেও সেই মানসিকতা ধরে রাখবে?

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের আগে গতকাল দুই দলের অনুশীলন শুরুর দিন দেখা যায়, সবুজ উইকেটে রয়েছে সতেজ ঘাসের উপস্থিতি। পরদিন অনুমিতভাবে ছাঁটা হয়েছে কিছু ঘাস। তবে মিলিয়ে যায়নি সবুজের ছোঁয়া। এমন উইকেটে ব্যাট-বলের জমাট লড়াই হবে বলে মনে করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ম্যাচের আগের দিন দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে এই স্পিনার বললেন, সবার জন্যই সুযোগ থাকবে এই উইকেটে, ‘আমাদের হোম কন্ডিশনের খেলা। যেটা সবসময় বলা হয়, আমরা স্পিন সহায়ক দল। স্পিন দিয়ে আমরা ভালো করি। তবে পেস বোলারদেরও সুযোগ থাকবে। উইকেটটা আমরা দেখেছি। ভালো উইকেট করার চেষ্টা করছে। যেন সব দিকেই আমরা ভালো করতে পারি। ব্যাটসম্যানরাও ভালো করতে পারি, পেসার-স্পিনাররাও। ভালো একটা সংগ্রহ দাঁড় করানোর সুযোগ থাকবে। যেন আমরা যথাযথ টেস্ট ক্রিকেটটা খেলতে পারি। সেরকমভাবে আমাদের দল সাজানো হচ্ছে। পেস বোলিং, স্পিন বোলিং বা ব্যাটসম্যান- তিনটা বিভাগেই যেন আমরা ভালো করতে পারি।’

বাংলাদেশ অনুশীলন শেষ করে যাওয়ার পর আসে আয়ারল্যান্ড দল। মাঠে ঢুকে বেশ কিছুক্ষণ উইকেট পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যায় অ্যান্ড্রু বালবার্নিকে। তার কাছেও উইকেট ভালো বলেই মনে হয়েছে, ‘উইকেট দেখে খুব ভালো মনে হয়েছে। আমি ঠিক জানি না, তারা আজকে (গতকাল) আবার ঘাস ছাঁটবে কি না। তবে আমরা এই মাঠ নিয়ে নিজেদের হোমওয়ার্ক করেছি। মাঠে নেমে আমাদের দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে, হোক আমরা আগে ব্যাটিং করি অথবা বোলিং। উইকেটের ভাবনায় খুব বেশি প্রভাবিত হতে চাই না। আমরা নিজেদের দিকে মনোযোগ দেব।’ সবশেষ টেস্টে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত, এবার লড়াই আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে। মানের দিক থেকে দুই দলের পার্থক্য অনেক, তবে বাংলাদেশের মানসিকতায় নয়। মেহেদী হাসান মিরাজ বলেন, একই রকম ‘ফোকাস’ ধরে রেখেই আইরিশদের বিপক্ষে খেলতে নামবে দল।

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশও এখনও পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত কোনো শক্তি নয়। তবে এই কন্ডিশন, শক্তি-সামর্থ্য আর নানা বাস্তবতা মিলিয়ে স্বাগতিকরা অনেকটাই এগিয়ে আইরিশদের চেয়ে। টেস্টের আগে এবার সীমিত ওভারের দুই সিরিজেও তা স্পষ্ট হয়েছে। টেস্ট ম্যাচটি আইরিশদের জন্য হওয়ার কথা আরও কঠিন। প্রায় ৪ বছর বিরতির পর টেস্ট খেলতে নামবে তারা। মিরপুরের উইকেটও সিলেট-চট্টগ্রামের তুলনায় হতে পারে আরও চ্যালেঞ্জিং। তাদের বিপক্ষে আত্মবিশ্বাস যে বেশি থাকবে, অস্বীকার করলেন না মিরাজ। তবে এই ম্যাচকে গুরুত্ব কোনো অংশেই কম দেবেন না বলে দাবি তার।

একমাত্র টেস্টের জন্য ঘোষিত বাংলাদেশ স্কোয়াডের ১৪ জনের মিলে রয়েছে ৪৭৩ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা। অন্য দিকে আইরিশ স্কোয়াডের ৯ জনের এখনও টেস্ট অভিষেকই হয়নি। তিন জন পাননি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার স্বাদ। সবচেয়ে বেশি ৮ টেস্ট খেলা পিটার মুর দলে এসেছেন জিম্বাবুয়ে থেকে ঠিকানা বদল করে। তারপরও বাংলাদেশ যে আয়ারল্যান্ডকে হালকা ভাবে নিচ্ছে না, এটির প্রমাণ পূর্ণ শক্তির দল ঘোষণা করায়। নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, আয়ারল্যান্ডকে দাপট দেখিয়ে হারাতেই পূর্ণ শক্তির দল রেখেছেন তারা। মিরাজও বলেন সে লক্ষ্যের কথা। তবে বড় জয়ের আগে জয়টা নিশ্চিত করা জরুরি, সেটিও তিনি মনে করিয়ে দিলেন। মিরাজ মুদ্রার উল্টো পিঠও দেখালেন। আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট এটিই। প্রতিপক্ষ তুলনামূলক অচেনা-অজানা বলেই মনোযোগ বেশি রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি। রবিবার মিরপুরে জাতীয় দলের অনুশীলন হলেও সাকিব ছিলেন না। পরে বিসিবির সূত্রে জানা যায়, তিনি টিম হোটেলে বিশ্রাম নিচ্ছেন। বিশ্রাম শেষে জাতীয় দলের অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন টেস্ট অধিনায়ক সাকিব, গতকাল তিনি মিরপুর শেরেবাংলায় দলের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ করে পরদিন ঢাকা ফিরে সাকিব ডিপিএলে মোহামেডানের হয়ে মাঠে নামেন, তবে ব্যাট হাতে মাত্র ৫ রান করার পর বল হাতে ছিলেন উইকেটশূন্য। ঢাকা টেস্টের আগের দিন বাংলাদেশ দলের জন্য একটি দুঃসংবাদও আছে। ইনজুরির কারণে এই ম্যাচ থেকেই ছিটকে গেছেন সেরা পেসার তাসকিন আহমেদ। নির্বাচক আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, আয়ারল্যান্ডকে শক্তির পার্থক্যটা বুঝিয়ে দিতেই পূর্ণ শক্তির দল গড়া হয়েছে এবং সাকিব-লিটনকে আইপিএলের এনওসি দেয়া হয়নি।