ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

৯ ইনিংস পর ৫ উইকেট তাইজুলের

৯ ইনিংস পর ৫ উইকেট তাইজুলের

আইরিশ ব্যাটসম্যান মার্ক অ্যাডায়ার তাইজুল ইসলামের আর্ম ডেলিভারি বুঝতেই পারলেন না, পেছনের পায়ে খেলার চেষ্টায় হলেন পরাস্ত। প্যাডে লাগতেই জোরাল আবেদনে সাড়া দিলেন আম্পায়ার। দারুণ অর্জনের আনন্দে মাতলেন তাইজুল। মিরপুর স্টেডিয়ামে সবুজাভ উইকেটে তিন পেসার নিয়ে খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। তবে আইরিশ ব্যাটসম্যানদের ওপর ছড়ি ঘোরালেন বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল। সাকিব আল হাসানের স্রেফ ৩ ওভার বোলিংয়ের দিনে ৫ উইকেট নিয়ে নিজের দায়িত্বটা দারুণভাবেই পালন করলেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে তার ১১তম পাঁচ উইকেট এটি। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গেবেখা টেস্টে ১৩৫ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি, এরপর ৯ ইনিংসে আরও তিনবার ৪ উইকেটসহ মোট ১৬ উইকেট নেন। সবশেষ ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দুই টেস্টেই নেন ৪ উইকেট। কিন্তু পাননি পঞ্চম উইকেটের দেখা। অবশেষে ৫ উইকেট পেলেন তিনি। ২৮ ওভারে ১০ মেডেনসহ ৫৮ রান খরচ করেছেন তিনি। এ নিয়ে ছয় দেশের বিপক্ষে ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন। টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে তার চেয়ে বেশি বার ৫ উইকেট আছে শুধু সাকিবের, ১৯ বার। এ দুজনের পরের নামটি মেহেদী হাসান মিরাজ, ৯ বার।

উইকেটে তেমন কিছু ছিল না স্পিনারদের জন্য। টার্ন খুব একটা ছিলই না। লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে গতির বৈচিত্রে (পেস ভরিয়েশেন) তাইজুল ইসলাম দেখা পেয়েছেন সাফল্যের। এক প্রান্তে তাইজুলের নিয়মিত বিরতিতে উইকেটে শিকারের দিনে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ঠিক মতো হাতই ঘোরাননি।

সাকিব বোলিংয়ে আসেন ৬৬তম ওভারে। প্রথম ওভারে মেডেন দেয়া সাকিব টানা তিন ওভার করেন। নিজের একমাত্র স্পেলে দ্বিতীয় ওভারে দেন ১ রান। তৃতীয় ওভারে অ্যাডেয়ারের ব্যাটে হজম করতে হয় ছক্কা। ওই ওভারে আরো একটি সিঙ্গেলও আসে। সব মিলিয়ে তার বোলিং স্পেল ছিল এরকম ৩-১-৮-০। এরপর তাকে আর ২২ গজে পাওয়া যায়নি। কেন সাকিব আগে বোলিংয়ে আসেননি? কিংবা পরেও টানা ওভার করেননি? তাইজুল অবশ্য নির্দিষ্ট কারণ বলতে পারেননি। নিজের মতো করে দিয়েছেন উত্তর, ‘তেমন কোনো কারণ না। হয়তো বা আমাদের দিয়েই করানোর ইচ্ছা ছিল। আমরা বেশি স্ট্রাগল করলে উনি আসতো। ‘ মাঠে অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের পরামর্শ পেয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নে তাইজুলের ভাষ্য, ‘অধিনায়ক সবসময় দলের ভালো চাইবে। ভুল হলে অবশ্যই সাজেশন দেবে। মাঠের পরিস্থিতি অনেক ভালো বোঝেন, যখন যেটা শেয়ার করা দরকার সেটাই শেয়ার করছিল। উনি আমাদের উপর আত্মবিশ্বাস ছিল বলেই জিনিসটা (বোলিং) করিয়েছে।’

ক্যারিয়ারে ১১তম ফাইফার নিয়ে আয়ারল্যান্ডকে থামিয়ে দেন ২১৪ রানে। সাদা পোশাকে বল হাতে মাত্র ৪০ ম্যাচে নিয়েছেন ১৬৬ উইকেট। এই টেস্টসহ ধরলে যোগ হবে আরো পাঁচটি। এখনো বাকি দ্বিতীয় ইনিংস। ৩২ বয়সি এই স্পিনার ক্যারিয়ারের শেষে নামের পাশে কয়টি উইকেট দেখতে চান? নিজের বয়স ৩২ শুনে তাইজুল যেন কিছুটা অবাকই হলেন। হয়তো নিজে নিজে চিন্তাও করছিলেন এত বয়স হলো। এরপর উত্তর দিয়েছেন রসিকতার সঙ্গে। ‘মন তো চায়, ৫০০-৬০০ উইকেট নেই। বয়স হইছে বুড়া হয়ে যাই নাইতো (হাসি)।’ ২২ গজে তাইজুল যে এখনো চির-তরুণ এটা ধরা দেয় তপ্ত রোদে লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে টানা বোলিং করে যাওয়া। আইরিশরা খেলে ৭৭.২ ওভার, তাইজুল একাই করেন ২৮ ওভার। সর্বোচ্চ ৫টি উইকেট নেন তিনি। মেডেন দেন ১০টি।

মিরপুরের উইকেটে দ্বিতীয় দিনের পর থেকে স্পিন ধরতে থাকে। কিন্তু তাইজুল ফাইফার নিয়েছেন প্রথম দিন প্রথম ইনিংসে। উইকেট সহায়ক না হলেও এমন সাফল্যে তাইজুলের ভালোলাগা কাজ করেছে। ‘অবশ্যই এটা ভালো লাগার বিষয়। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট। উইকেটের যেমন অবস্থা এই রকম উইকেটে পাঁচ উইকেট পাওয়াটা কঠিন হয়। আলহামদুল্লিলাহ যে, ৫ উইকেট পেয়েছি।’

তাইজুলের সাফল্যের হার বেশি দেশের মাটিতে। দেশে মাত্র ২৮ টেস্টে তাইজুল নিয়েছেন ১৩৩ উইকেট আর বিদেশে ১৩ ম্যাচে ৩৮ উইকেট। পরিসংখ্যানে স্পষ্ট বিদেশের মাটিতে তাইজুল কার্যকর না যতটা না দেশের মাটিতে। কিন্তু শের-ই-বাংলার উইকেটে আজকের সাফল্যে তাইজুলকে বিদেশের মাটিতে ভালো করার প্রেরণা দিচ্ছে। ‘এই রকম উইকেটে যদি কন্টিনিউ করতে পারি অবশ্যই বিদেশে গেলে আমাদের জন্য সহায়ক (হেল্প) হবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত