ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইনিংস ব্যবধানে জয়ের হাতছানি

ইনিংস ব্যবধানে জয়ের হাতছানি

মিরপুর টেস্টে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের লিড ১৫৫ রানের। জবাব দিতে নেমে ভীষণ বিপদে আইরিশরা। সাকিব আল হাসান আর তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণি জাদুতে ১৩ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে সফরকারীরা। এরপর শেষ বিকালে ১০.৩ ওভার কাটিয়ে দিয়েছেন হ্যারি টেক্টর আর পিটার মুর। তারা মাত্র ১৪ রান যোগ করলেও উইকেট টিকিয়ে রেখেছেন। ৪ উইকেটে ২৭ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছেন আইরিশরা। ইনিংস পরাজয় এড়াতে হলে আরো ১২৮ রান করতে হবে তাদের।

প্রথম দিনের শেষ বিকালে কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে শেষ করলেও দ্বিতীয় দিন শেষে ম্যাচে চালকের আসনে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিমের দশম সেঞ্চুরি পূর্ণ হলেও সাকিব আল হাসানকে ফিরতে হয়েছে আক্ষেপ নিয়েই। তবে তাদের গড়ে দেয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে মেহেদী হাসান মিরাজের ফিফটি বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিল বড় লিড। এরপর অবশ্য চার উইকেট তুলে নিয়ে সাকিব-তাইজুলের স্পিন জুটি ম্যাচে আইরিশদের প্রতিকূল এক পরিস্থিতির দিকেই ঠেলে দিয়েছে।

শেষ বিকালে কয়েক ওভার সামলাতে আইরিশদের লড়াইয়ে প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ান সাকিব। আগের ইনিংসে ৬৬-তম ওভারে প্রথম বল হাতে নেয়া সাকিব বল হাতে নিলেন প্রথম ওভারেই; আর চতুর্থ বলেই পেয়ে যান জেমস ম্যাককোলামের উইকেট। অন্য প্রান্তে শুরু করা তাইজুলও প্রথম উইকেট পেয়ে যান চতুর্থ ওভারে, মারে কামিন্সকে ১ রানেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে। নিজের পরের ওভারেই প্রথম বলেই এরপর আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবির্নির স্টাম্প উপড়ে ফেলেন তাইজুল। পরের ওভারে সাকিব তিন বার উইকেটের সুযোগ তৈরি করেছিলেন; সন্তুষ্ট থাকতে হল কার্টিস ক্যাম্ফারকে উইকেটর পেছনে তালুবন্দি করিয়েই।

দিনের শুরুটা অবশ্য বাংলাদেশেরও ভালো হয়নি সেই অর্থে। মার্ক অ্যাডেয়ারের বলে স্টাম্প খুইয়ে ১৭ রানেই ফিরে যান মুমিনুল হক। এরপরেই অবশ্য ভোজবাজির মত পালটে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। মুশফিককে সঙ্গী করে সাকিব হয়ে ওঠেন আগ্রাসী। ১৯ ওভারে যেখানে দলের রান ছিল ৬৪ সেখানে প্রায় ৫ ওভারের মধ্যেই বাংলাদেশ পেয়ে যায় দলীয় শতরানের দেখা। আক্রমণের ঝান্ডা বহন করে সাকিব খেলছিলেন একশো স্ট্রাইক রেটের ওপরে। তারই পরিক্রমায় ৪৫ বলে সাকিব পেয়ে যান তার ৩১-তম ফিফটির দেখা। ৩১ ওভারে মাথায় দুজনে পেয়ে যায় শতরানের জুটিও। এর কিছুক্ষণ পরে সুইপের মধ্য দিয়ে বাউন্ডারি বের করে ৬৭ বলে মুশফিক পেয়ে যান তার ২৬-তম ফিফটি। ১৭০ রানে থেকে দুজনে যান লাঞ্চে।

লাঞ্চের পর মুশফিকও রানের গতি বাড়ান। তবে সেঞ্চুরির কাছাকাছি এসে কাল হয় সাকিবের। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের অফ স্টাম্পের ওপরের অফ স্পিনে প্যাডল সুইপ খেলতে গিয়ে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিয়ে দারুণ এক ইনিংস শেষে সাকিব থামেন ৮৭ রানে। সাকিব ফেরার পর উইকেটে এসে একই মেজাজেই শুরু করলেন লিটন দাস। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়েও এদিন যেন ইংল্যান্ডের ডাকা পালাবদলের হাওয়া। প্রায় ৫-এর কাছাকাছি হারে রান তুলে বাংলাদেশ দলীয় ২৫০ রান পেয়ে যায় ৫৪ ওভারেই! সেখানে নিজ ভঙ্গিতে খেলতে থাকা মুশফিক সেঞ্চুরি পেয়ে গেলেন পরের ওভারেই; দশম সেঞ্চুরিটা এলো ১৩৫ বলে। সেখান থেকে যেন হুট করেই দুজনের মাঝে তড়িঘড়ি করার একটা প্রবণতা দেখা যায়। ৪৩ রানে থাকার সময় তো টাকারের ভুলে পরিষ্কার রান আউটের সুযোগ থেকে বেঁচে যান লিটন। সেটা কাজে লাগাতে না পেরে এক বল পরেই ৪১ বলে ৪৩ রানেই থামেন লিটন, ওয়াইটের শিকার হয়ে। মিরাজকে নিয়ে এরপর সহজাত ভঙ্গিতেই এগিয়ে যাওয়া মুশফিককে থামতে হয় দারুণ এক ক্যাচে। ম্যাকব্রাইনের বলে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে লং অনের উপর দিয়ে তুলে মারতে যান মুশফিক; তবে সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে কমিন্স দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে মুশফিককে থামান ১২৬ রানে।

এক প্রান্তে মিরাজকে বেঁধে ফেলে অন্য প্রান্তে অবশ্য উইকেট তুলে নিতে থাকেন আইরিশরা। তাইজুলকে ফেরানোর পর শরিফুলকে ফিরিয়ে আইরিশদের টেস্ট ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ৫ উইকেট পান এই অফ-স্পিনার। ফিফটির খোঁজে থাকা মিরাজের চোখের সামনে দিয়ে একের পর উইকেট যেতে থাকলে সেই মিছিলে এরপর যোগ দেন এবাদত। সেই সাথে ষষ্ঠ উইকেট নিয়ে আইরিশদের হয়ে টেস্ট ইতিহাসের সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ড গড়ে ফেলেন ম্যাকব্রাইন। তবে অবশেষে নিজের চতুর্থ টেস্ট ফিফটিটা পেয়েছিলেন মিরাজ। ফিফটির পর বেরিয়ে এসে আক্রমণ করতে গিয়ে ৫৫ রানে ওয়াইটের স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়ে মিরাজ থামেন ৫৫ রানে। অবশ্য দিনের শেষাংশের পর সেসব ইনিংসের সৌজন্যে আইরিশদের কাছে বাংলাদেশের সংগ্রহটাও এখন মনে হচ্ছে দূর আকাশের তারা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

আয়ারল্যান্ড ইনিংস : ২১৪ ও ১৭ ওভারে ২৭/৪ (কামিন্স ১, ম্যাককলাম ০, বালবার্নি ৩, টেক্টর ৮*, ক্যাম্পার ১, মুর ১০*; সাকিব ৭-২-১১-২, তাইজুল ৭-৪-৭-২, মিরাজ ২-১-১-০, ইবাদত ১-০-৪-০)।

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : (আগের দিন ৩৪/২) ৮০.৩ ওভারে ৩৬৯ (মুমিনুল ১৭, মুশফিক ১২৬, সাকিব ৮৭, লিটন ৪৩, মিরাজ ৫৫, তাইজুল ৪, শরিফুল ৪, ইবাদত ০, খালেদ ৪*; অ্যাডায়ার ১৭-২-৬৪-২, হিউম ১১-২-৩৭-০, ম্যাকব্রাইন ২৮-২-১১৮-৬, ক্যাম্পার ৮-১-৫৪-০, হোয়াইট ১৩.৩-০-৭১-২, টেক্টর ৩-০-২১-০)। (দ্বিতীয় দিন শেষে)

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত