মুশফিকের দিনে অংশীদার সাকিব

প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের দ্বিতীয় দিন মনে হচ্ছিল সাকিব আল হাসানের সেঞ্চুরি স্রেফ সময়ের ব্যাপার। কিন্তু বাজে শট খেলে বাংলাদেশ অধিনায়ক ফিরলেন ৮৭ রানে! নন স্ট্রাইক প্রান্তে হতাশা প্রকাশ করেন মুশফিকুর রহিম, যেন বোঝালেন, সেঞ্চুরি কেউ এভাবে ফেলে দেয়! মুুশফিক নিজে তেমন কোনো ভুল করলেন না, দারুণ ব্যাটিংয়ে ঠিকই পৌঁছে যান ম্যাজিক ফিগারে। সব মিলিয়ে দশম টেস্ট সেঞ্চুরিতে স্পর্শ করলেন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালকে। বাংলাদেশের হয়ে এই দুজনের চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে আর মাত্র মুমিনুল হকের (১১টি)।

তবে বিপদের (৪০/৩) মধ্যে দাঁড়িয়ে মুশফিক-সাকিব দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে দলকে উদ্ধার করেন, শত রানের জুটিতে ছুঁয়ে ফেললেন হাবিবুল বাশার ও জাভেদ ওমর বেলিমের ১৬ বছর আগে করে রাখা কীর্তিও। দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে আইরিশদের আলগা বোলিং কাজে লাগিয়ে শতরানের জুটি গড়েন মাত্র ১০৯ বলে। টেস্টে এটি তাদের ১০০ ছোঁয়া পঞ্চম জুটি। স্পর্শ করলেন হাবিবুল-জাভেদ জুটির রেকর্ড।

আগের দিন শেষ বলে আউট হন তামিম ইকবাল। গতকাল সকালে মুমিনুলের সঙ্গে ক্রিজে যান মুশফিক। চার নম্বরে সচরাচর ব্যাট না করলেও দুর্দান্ত সব শটের পসরা সাজিয়ে সেঞ্চুরি করে ফেললেন দ্বিতীয় সেশনে। ৪ নম্বরে ১৬ ইনিংস খেলে তার প্রথম সেঞ্চুরি এটি। আগের ৯ সেঞ্চুরির ৪টি ছিল পাঁচে, ৪টি ছয়ে ও একটি সাতে। দারুণ সব ড্রাইভ, পুল, কাটের সঙ্গে ছিল প্রিয় সুইপ ও রিভার্স সুইপ। সুইপ শটে চার মেরেই ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি ৬৯ বলে। টেস্টে দ্রুতগতির ফিফটি হলেও মুশফিককে মনে হচ্ছিল কিছুটা মন্থর, আরেকপাশে সাকিবের ফিফটি যে ছিল ৪৫ বলে! ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়ার জন্য মুশফিক টেস্টে কিপিং করছেন না কয়েক বছর ধরে। ২০১৮ সালের পর শুধু মাত্র একটি টেস্টে কিপিং করেছেন।

টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি শত রানের জুটির রেকর্ড এতদিন ছিল হাবিবুল-জাভেদ জুটির। ২০০১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ৩২ ইনিংস একসঙ্গে ব্যাটিং করে পাঁচবার একশ পেরোয় এই জুটি। আরও পাঁচবার তারা যোগ করেন পঞ্চাশের বেশি রান। তাদের ছুঁতে মুশফিক-সাকিব জুটির লাগল ৬৫ ইনিংস। পাঁচটি সেঞ্চুরি ও ১৭টি পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি আছে বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক টেস্ট অধিনায়কের। দুটিই বাংলাদেশের রেকর্ড। চারটি করে শতরানের জুটি আছে চার জুটির, সেখানেও দুটি জুটিতে অংশীদার মুশফিক, লিটন দাসের সঙ্গে ১৭ ইনিংসে ৪টি ও মুমিনুলের সঙ্গে ৩০ ইনিংসে চারটি। অন্য দুই জুটিতে নাম আছে তামিম ইকবালের। মুমিনুলের সঙ্গে তার ৪টি শতরানের জুটিও এসেছে ৩০ ইনিংসে, ইমরুল কায়েসের সঙ্গে চারটি এসেছে ৫৮ ইনিংসে।

রানের হিসাবেও বাংলাদেশের সেরা জুটি সাকিব-মুশফিক। চলতি টেস্টের দ্বিতীয় দিন লাঞ্চ পর্যন্ত তাদের জুটির সংগ্রহ ২ হাজার ৭৭৩ রান, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ৩৫৯ রানের জুটির রেকর্ডটিও তাদের। এছাড়া জুটি বেধে ২ হাজারের বেশি রান আছে কেবল আর একটি জুটির। তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস ৫৮ ইনিংসে একসঙ্গে ব্যাট করে তুলেছেন ২ হাজার ৪৩৩ রান। তিন সংস্করণ মিলিয়েও বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল সাকিব ও মুশফিকের জুটি। ১৯২ ইনিংসে ১২টি শত রানের সঙ্গে ৩৮টি পঞ্চাশ রানের জুটিতে ৬ হাজার ৭৯৮ রান যোগ করেছেন এই দুজন। আর কোনো জুটির ৫ হাজার রানও নেই।

টেস্ট ক্রিকেটে জুটির বিশ্ব রেকর্ড থেকে অবশ্য অনেক দূরে বাংলাদেশ। ১৪৩ ইনিংসে জুটি বেধে ৬ হাজার ৯২০ রান যোগ করেছেন শচিন টেন্ডুলকার ও রাহুল দ্রাবিড়। ভারতের দুই কিংবদন্তির শত রানের জুটি ২০টি। দুটিই বিশ্ব রেকর্ড।

শচীন-দ্রাবিড় ছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে জুটিতে ৬ হাজারের বেশি রান করেছেন আরো তিন জুটির। মাহেলা জয়াবর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারা ১৯ সেঞ্চুরিতে ৬ হাজার ৫৫৪, গর্ডন গ্রিনিজ ও ডেসমন্ড হেইন্সের ১৬ সেঞ্চুরিতে ৬ হাজার ৪৮২, জাস্টিন ল্যাঙ্গার ও ম্যাথু হেইডেনের ১৪ সেঞ্চুরিতে ৬ হাজার ৮১ রান।