আইরিশদের স্বপ্নের দিন

প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষেই ইনিংস ব্যবধানে জয়ের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশ। আইরিশদের প্রথম ইনিংস ২১৪ রানে থামিয়ে মুশফিকুর রহিমের (১২৬) সেঞ্চুরিতে ৩৬৯ রান তুলেছিল ১৫৫ রানের লিড নেয় স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় দফায় ব্যাট করতে নামা আইরিশদের প্রথম ৪ উইকেটে ফেলে দেয় ১৩ রানের মধ্যে! ফলে গতকাল তৃতীয় দিনের শুরুতে টেলিভিশন ধারাভাষ্যকক্ষে জরিপ চলছিল, খেলা কখন শেষ হতে পারে। কেউ বলছিলেন, প্রথম সেশনেই, কেউ বা দ্বিতীয় সেশনে। তাদের সঙ্গে দ্বিমত করার লোক তখন খুব বেশি ছিল না নিশ্চিতভাবে। ক’জন ভাবতে পেরেছিলেন, এই টেস্ট চতুর্থ দিনের মুখ দেখবে! বাংলাদেশের নির্বিষ ও প্রাণহীন বোলিং আর আয়ারল্যান্ডের বীরোচিত প্রতিরোধ মিলিয়ে সেটিই এখন বাস্তব। স্কিল, টেম্পারমেন্ট আর নিবেদনের দারুণ প্রদর্শনীতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল আয়ারল্যান্ড। ম্যাচ শুধু চতুর্থ দিনে টেনে নেওয়াই শুধু নয়, তাদের জয়ও এখন অসম্ভব নয়! মিরপুর টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে আইরিশরা এগিয়ে ১৩১ রানে, উইকেট আছে ২টি। আগের দিন শেষ বিকালে ১৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কাঁপছিল যে দল, গতকাল বৃহস্পতিবার তারাই দুর্দান্ত লড়াইয়ে সারা দিনে হারায় স্রেফ ৪ উইকেট। দিনশেষে তাদের রান ৮ উইকেটে ২৮৬।

আইরিশ প্রতিরোধের মূল নায়ক লর্কান টাকার। অভিষেকে স্মরণীয় সেঞ্চুরিতে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখান ২৬ বছর বয়সি ব্যাটসম্যান। টেস্টে আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিয়ান তিনি। দুটি সেঞ্চুরিই অভিষেকে। আগেরটি ছিল দেশের অভিষেক টেস্টে ডাবলিনে কেভিন ও’ব্রায়েনের। বিদেশের মাঠে অভিষেকে প্রথম সেঞ্চুরি এলো তাই টাকারের ব্যাট থেকেই। প্রথম ইনিংসের মতো এই ইনিংসেও লড়িয়ে ফিফটি করেন হেরি টেক্টর। আইরিশদের লড়াই পর্ব শেষ নয় এখানেই। বোলিংয়ে ৬ উইকেট শিকারি অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন আট নম্বরে নেমে ব্যাট হাতেও অসাধারণ পারফরম্যান্সে অপরাজিত ৭১ রান করে। এই টাকার ও টেক্টর সবশেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ২ বছরের বেশি সময় আগে। ম্যাকব্রাইন খেলেছেন সেই ২০১৯ সালে। আইরিশরা টেস্ট খেলছে প্রায় ৪ বছর পর। ২০১৯ সালের পর তাদের দেশে লাল বলের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হয়নি। তার পরও তারা অসাধারণ পারফরম্যান্সে মেলে ধরলেন নিজেদের। প্রথম ইনিংসের ৫ উইকেটের সঙ্গে তাইজুল ইসলাম দ্বিতীয় ইনিংসে যোগ করেছেন ৪ উইকেট, তবে প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ করতে পারেননি তিনি। অন্যদের বোলিং তো ছিল আরও ধারহীন। দলের প্রয়োজনের সময়ও বিস্ময়করভাবে বোলিংয়ে খুব একটা দেখা যায়নি সাকিবকে! প্রথম ইনিংসে ৬৫ ওভারের পর বোলিংয়ে এসে তিনি মাত্র ৩ ওভার বোলিং করেছিলেন। দ্বিতীয় দিনে শেষ বিকেলে ৭ ওভার বোলিং করে দুটি উইকেট নেন। তৃতীয় দিন বোলিংয়ের শুরুটাও করেন অধিনায়ক। কিন্তু সারা দিনে সব মিলিয়ে বোলিং করেন মাত্র ৬ ওভার! এর মধ্যে ১ ওভারের দুটি স্পেল ছিল। দিনশেষে সংবাদ সম্মেলনে পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড বলেন, সাকিবের এত কম বোলিং করার কারণ জানেন না, ‘এ বিষয়ে কিছু জানি না। সাকিবকে দেখে ফিটই মনে হয়েছে। জানি না, বেশি বোলিং করেনি কেন। সে হয়তো বাকিদের সুযোগ দিতে চেয়েছে।’ পুরো দিন বোলিং করেও আইরিশদের ৪ উইকেটের বেশি নিতে পারেনি বাংলাদেশ। এজন্য উইকেটের আচরণকে দায় দিয়ে ডোনাল্ড বলেন, ‘দ্বিতীয় নতুন বল নেয়ার পর মনে করেছিলাম এটি বড় ফ্যাক্টর হবে। সত্যি বলতে নতুন বল অতো স্পিন করেনি। আমার মনে হয়েছে, এটি নতুন বলের পিচ।’

বাংলাদেশের জন্য দিনের শুরুটা ছিল হতাশার। দ্বিতীয় ওভারেই ৪ উইকেট নেওয়া তাইজুলের বলে ক্যাচ ছাড়েন লিটন দাস, হ্যারি টেক্টরের রান ৯। তাইজুলের পরের ওভারেই ছক্কায় টেক্টর উদযাপন করেন নতুন জীবন। সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে বাংলাদেশের হতাশা। আগের দিন শেষ বিকেলে প্রতিরোধ গড়া টেক্টর (৫৬) ও পিটার মুর (১৬) নতুন দিনের সকালেও উইকেট আঁকড়ে রাখন দাঁতে দাঁত কামড়ে। বাংলাদেশ বেশ কিছু কৌশল নেয়। ফাইন লেগ ও স্কয়ার লেগ সীমানায় ফিল্ডার রেখে শর্ট বল করে যান পেসাররা। স্পিনে দুটি শর্ট কাভার রাখা হয় খুব কাছাকাছি। কোনো কৌশলই কাজে দেয়নি। ৬ উইকেট হাতে রেখে ১২৮ রানে পিছিয়ে দিনের শুরুটা দারুণ করেছিল আয়ারল্যান্ড, টেক্টর (৫৬) ও টাকার (১০৮) মিলে দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলেন। ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে তোলেন ৭২ রান। সপ্তম উইকেটে টাকার-অ্যান্ডি ম্যাকব্রেনি গড়েন ১১১ রানের জুটি। এরমধ্যে দলকে লিড এনে দিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন টাকার। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রান সংগ্রহ করে তৃতীয় দিন শেষ করে আয়ারল্যান্ড। হতাশাময় দিন পার করা বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল তাইজুল, নিয়েছেন ৪ উইকেট; দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯টি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

আয়ারল্যান্ড ইনিংস : ২১৪ ও ২৮৬/৮, ১০৭ ওভারে (আগের দিন ২৭/৪) (টেক্টর ৫৬, মুর ১৬, টাকার ১০৮, ম্যাকব্রাইন ৭১*, অ্যাডায়ার ১৩, হিউম ৯*; সাকিব ১৩-৪-২৬-২, তাইজুল ৩৮-১৫-৮৬-৪, মিরাজ ২৮-৭-৫৭-০, ইবাদত ১২-১-৩৬-১, শরিফুল ৮-১-৩৫-১, খালেদ ৭-২-৩৮-০, মুমিনুল ১-০-২-০)।

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৩৬৯ (তৃতীয় দিন শেষে)