বড় জয়ে ঘুচল অপূর্ণতাও

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

মিরপুর টেস্টে তৃতীয় দিনে যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল আয়ারল্যান্ড, লড়াই করেছিল তাতে ভয় জেগেছিল, বাংলাদেশ শিবিরে একটু হলেও শঙ্কা জাগার কথা, চার বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে অনভিজ্ঞ দলটাই কী চমকে দেবে? তবে চতুর্থ দিনে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে সেই শঙ্কার মেঘ কাটিয়ে সহজেই জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ফিফটিতে সফর থেকে আইরিশদের তাই ফিরতে হল শূন্য হাতেই।

তবে লক্ষ্য আহামরি বড় ছিল না। কিন্তু চতুর্থ ইনিংসে যে কোনো রান তাড়া করাই বড় চ্যালেঞ্জ। মিরপুরের ২২ গজ প্রায় সময়ই নানা ঘটনা-অঘটনার জন্ম দেয়। গত ডিসেম্বরে এখানে সবশেষ টেস্টে ভারতকে ১৪৫ রানের লক্ষ্য দিয়ে তীব্র লড়াই করে বাংলাদেশ। শেষমেশ ৭ উইকেটে ম্যাচ হারলেও রোমাঞ্চ ছড়িয়েছিল। গতকাল চতুর্থ দিন তেমন রোমাঞ্চের অপেক্ষায় ছিল টেস্টের চতুর্থ দিন। কিন্তু অভিজ্ঞতার শতভাগ প্রদর্শনীতে কোনো অঘটন ঘটতে দেয়নি বাংলাদেশ। বরং নিজেদের সামর্থ্যরে প্রমাণ দিয়ে দাপট দেখিয়েছে স্বাগতিকরা। আয়ারল্যান্ডের দেয়া ১৩৮ রানের চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ জিতে নিয়েছে ৭ উইকেট হাতে রেখে। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি পাওয়া মুশফিক দ্বিতীয় ইনিংসে ৫১ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন। ওপেনিংয়ে ফেরা লিটন (২৩) ও তিনে নামা শান্ত (৪) আউট হলে কিছুটা চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ।

কিন্তু প্রতি আক্রমণে গিয়ে মুশফিক যেভাবে রান তুলেছেন তাতে জয় চলে আসে অনায়াসে। স্পিনারদের বিপক্ষে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে সুইপ খেলেছেন। রিভার্স সুইপে পেয়েছেন চার। আবার অন ড্রাইভ, কভার ড্রাইভেও বল পাঠিয়েছেন সীমানায়। তামিমের সঙ্গে ৬২ রানের জুটি গড়ার পথে মুশফিক একাই করেন ৩৮ রান। তামিম ৩১ রানে বেন হোয়াইটের বলে আলগা শটে মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে বিদায় নিলেও মুশফিক দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। তার ব্যাট থেকেই আসেন উইনিং শট। ৪৮ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৫১ রান করেন চোখের পলকে। টেস্ট ক্রিকেটের দীর্ঘ পথ চলায় এবারই প্রথম এক টেস্টে সেঞ্চুরি ও ফিফটি পেলেন মুশফিক। তার সঙ্গে অপরাজিত থাকা মুমিনুল হক ২২ বলে করেন ২০ রান।

এর আগে সকালে আয়ারল্যান্ডের শেষ ২ উইকেট নিতে বাংলাদেশের বোলাররা ৯ ওভার হাত ঘুরালেও রান বেশি দেননি। ৩৫ মিনিট ব্যাটিং করে মাত্র ৬ রান যোগ করতে পারেন অতিথিরা, দুটি উইকেটই নেন পেসার ইবাদত হোসেন। যদিও সকালে দুই প্রান্ত থেকে সাকিব বোলিংয়ে এনেছিলেন দুই স্পিনার তাইজুল ও মিরাজকে। দুজন দুই ওভার করে বোলিং করার পর পেসার ইবাদত হোসেন আসেন আক্রমণে। তার হাত ধরে দ্বিতীয় বলে মেলে সাফল্য। ফুলারলেন্থ বল লাইনে স্থির রেখে ম্যাকব্রেইনের উইকেট উপড়ে ফেলেন ইবাদত। আগের দিনের ৭১ রানের সঙ্গে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান যোগ করতে পারেন কেবল ১ রান। ৮ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি থেমে যায় সেখানেই। দ্রুতগতির এ বোলারের সাত সকালের তোপে রানের চাকা থেমেই গিয়েছিল। শেষ ব্যাটসম্যান গ্রাহাম হুম ও বেঞ্জামিন হোয়াইট চেষ্টা করেও বড় কিছু করতে পারেননি। হুম ইবাদতের অফস্টাম্পের বাইরের বলের আলগা শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলে আয়ারল্যান্ডের ইনিংস থেমে যায় ২৯২ রানে। ইবাদত জোড়া উইকেটে দলকে সাফল্েয ভাসালেও ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার তাইজুল ইসলাম। ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে বড় প্রভাব রেখেছেন এ বাঁহাতি স্পিনার। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির পর টেস্ট সিরিজের ট্রফিটাও উঠলো বাংলাদেশের ঝুলিতে। দারুণ এই জয়ে দীর্ঘ এক অপেক্ষারও অবসান হলো। বল হাতে শাসনে শুরু, অল্পতেই বাধা পড়ে আয়ারল্যান্ড। তাদের প্রথম ইনিংসের জবাবে বড় সংগ্রহ না গড়তে পারলেও বাংলাদেশের মেলে বড় লিড। যা পাড়ি দিতে নেমে শুরুতে দিক হারানোর পরও অবিশ্বাস্যভাবে ঘুুরিয়ে দাঁড়িয়ে দারুণ লড়াই করে আইরিশরা। চার দিনে গড়ানো টেস্টের একটি দিন নিজেদের করে নেয় তারা। মিরপুর টেস্টে এই দিনটাই কেবল বাংলাদেশের বিপক্ষে গেছে, বাকি প্রায় সবই ছিল চাওয়া মতো। তাই ফলটাও এলো পক্ষে।

টেস্টে উইকেটের হিসাবে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয়, সবচেয়ে বড় জয় ৮ উইকেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির পর টেস্ট সিরিজের ট্রফিটাও উঠলো বাংলাদেশের ঝুলিতে। তিন বছর পর ঘরের মাটিতে মিললো টেস্ট জয়ের স্বাদ।

দারুণ এই জয়ে দীর্ঘ এক অপেক্ষারও অবসান হলো। প্রথমবারের মতো কোনো দলের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম টেস্ট জিতলো তারা, আগের সব প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই হারতে হয়েছিল তাদের। টেস্টে এটা বাংলাদেশের ১৭তম জয়, এর মধ্যে লক্ষ্য তাড়া করে জিতলো ৫টি টেস্টে। সর্বশেষ কিউইদের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয়ের পর ৯টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ, এর মধ্যে ৮টিতেই হারা বাংলাদেশ অবশেষে জয়ের স্বাদ পেল। মিরপুরে টানা চার টেস্ট হারের পর জয় দেখলো বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

আয়ারল্যান্ড ইনিংস : ২১৪ ও ২৯২/১০ (টাকার ১০৮, ম্যাকব্রাইন ৭২, টেক্টর ৫৬, তাইজুল ৪/৯০, এবাদত ৩/৩৭, সাকিব ২/২৬)।

বাংলাদেশ ইনিংস : ৩৬৯ ও ১৩৮/৩ (মুশফিক ৫১*, তামিম ৩১, লিটন ২৩, অ্যাডেয়ার ১/৩০, ওয়াইট ১/৪৩, ম্যাকব্রাইন ১/৫২)। ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা : মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)