‘অন্যায়ের প্রতিবাদে’ ফুটবলারের আত্মহত্যা

প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

কলার দাম বাড়ার প্রতিবাদ করায় তিউনিসিয়ার ফুটবলার নিজার আইসাউইকে ‘সন্ত্রাসী’ বানিয়ে দিয়েছিল দেশটির পুলিশ। নিজের গায়ে আগুন দেওয়ার পর হাসপাতালে কয়েকদিন লড়াই করে অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তিনি। তার পরিবারের দাবি, পুলিশের ‘অবিচারের’ প্রতিবাদে আত্মহননের পথ বেছে নেন ৩৫ বছর বয়সী এ ফুটবলার। বৃহস্পতিবার নিজারের মৃত্যু হয় বলে জানান তার ভাই রিয়াদ। শুক্রবার তার দাফন হয়।

নিজার একসময় খেলতেন তিউনিসিয়ার শীর্ষ লিগের ক্লাব ইউএস মোনাস্তিরে। মৃত্যুর আগে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে অপেশাদার ফুটবলে খেলে জীবিকা নির্বাহের লড়াই করছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি চার সন্তানের পিতা। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে দ্বিগুণ দামে কলা বিক্রি করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশের কাছে হেনস্থা হওয়ায় নিজেকেই ‘চরম শাস্তি’ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন নিজার।

নিজ শহর হাফুজে গায়ে আগুন দেয়ার আগে ফেইসবুকে একটি ভিডিওতে নিজার দাবি করেন, কলার মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ করায় পুলিশ তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ‘সন্ত্রাসী’ বানানোর চেষ্টা করছে। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, চিৎকার করে নিজের আক্ষেপের কথা বলেছেন নিজার, ‘১০ দিনারে (প্রায় সাড়ে তিন মার্কিন ডলার) কলা বিক্রি হচ্ছে, এটার প্রতিবাদ করায় পুলিশ স্টেশনে নিয়ে গিয়ে সন্ত্রাসী বানিয়ে দেয়া হচ্ছে। কলার দাম বাড়ার প্রতিবাদ করায় আমাকে সন্ত্রাসী বলা হয়। আমার আর কোনো শক্তি অবশিষ্ট নেই। পুলিশকে জানিয়ে দিতে চাই যে, আজকেই আমার সাজা হবে, গায়ে আগুন দিয়ে মৃত্যু।’

এই ঘটনায় তিউনিসিয়ার স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানতে পারেনি বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

নিজারের মৃত্যুর পর তার শহর হাফুজে জনতার প্রতিবাদ চলছে। শহরের নানা জায়গায় প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা রয়টার্সকে জানান, পুলিশ সদরদপ্তরের সামনে প্রতিবাদকারীদের দমাতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে।

তিউনিসয়ার দ্য অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশরন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট জানায়, স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক সংকট পার করছে দেশটি। মূল্যস্ফীতি প্রায় ১১ শতাংশ এবং খাবারের মূল্য ক্রমেই সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। দেশটির সরকার চেষ্টা করছে আইএমএফের সঙ্গে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি করার। কোভিড অতিমারি থেকে দেশের বাজেটে ঘাটতি বেড়েই চলেছে, যা আরো বেড়ে গেছে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। নিজারের এই ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে একযুগ আগের তুমুল আলোচিত ও স্মরণীয় আরেকটি ঘটনার। তিউনিসিয়ার আরেক শহর সিদি বউজিদে পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এভাবেই নিজের আগে আগুন দিয়েছিলেন ফল বিক্রেতা মোহামেদ বুয়াজিজি। ঘুষ নিয়ে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে পুলিশ তার ফলের ঠেলাগাড়ি আটক করে অভিযোগ করে ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর নিজের আগে আগুন দেন বুয়াজিজি। হাসপাতালে ১৮ দিন লড়ে তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় তিউনিসয়ায় প্রতিবাদের স্রোত বয়ে যায়। একপর্যায়ে অবসান ঘটে বেন আলির প্রায় দুই যুগের শাসনের। সেই প্রতিবাদের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে গোটা আরব বিশ্বেই।