ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফিফার নিষেধাজ্ঞা

তদন্ত করতে চায় দুদকও

তদন্ত করতে চায় দুদকও

ফিফা কোড অব এথিক্সের ২০২০ সংস্করণের ধারা ১৩ (আনুগত্যের কর্তব্য), ধারা ১৫ (সাধারণ দায়িত্ব), ধারা ২৪ (জালিয়াতি ও মিথ্যাচার), ধারা ২৮ (অর্থ লোপাট ও অপব্যবহার) লঙ্ঘনের অভিযোগে ২ বছরের জন্য সব ধরনের ফুটবলীয় কর্মকাণ্ড থেকে ফিফা কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। অভিযোগগুলো আনা হয়েছে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে সময়ে। বাফুফেকে দেয়া ফিফার তহবিলের খরচের হিসাব দিতে গিয়ে ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করেছেন বলে গত শুক্রবার বিবৃতিতে জানিয়েছে ফিফা। সেই সঙ্গে জরিমানা করা হয়েছে ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ (বাংলাদেশি মানে ১২ লাখ টাকা)। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে কোনো ধরনের ফুটবল কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, আবু নাইম সোহাগের একক সিদ্ধান্তে সাবিনাদের মিয়ানমার সফরের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে ৯২ লাখ টাকার বাজেট দিয়েছিল বাফুফে; যা নিয়ে ওঠে নানা প্রশ্ন। অর্থ না পাওয়ায় সোহাগ সরাসরি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ওপরে দায় চাপিয়েছেন। এ নিয়ে তার ওপর ক্ষুব্ধ হন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, তার পদত্যাগের দাবিও ওঠে। আর গতকাল বাফুফে সাধারণ সম্পাদকের বিষয়ে তদন্ত করার ইচ্ছার কথা গণমাধ্যমে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। তবে তার আগে সরকার কিংবা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ প্রয়োজন জানিয়েছেন তিনি, বলেছেন, বাফুফে সভাপতি তার (আবু নাঈমের সোহাগের) পক্ষ নিয়ে সঠিক কাজ করেন নাই সরকারের উচিৎ স্বাধীন তদন্ত করা।

বাফুফের আর্থিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ফিফার আপত্তি ও সোহাগের নিষেধাজ্ঞায় দেশের ফুটবলে নেমেছে কালো মেঘ। অনেকেই এটাকে ফুটবলের জন্য বড় লজ্জা বলে মনে করছেন- এমন প্রশ্ন শুনে বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিনের জবাব, ‘থ্যাঙ্ক ইউ’।

বাফুফের চাকরিজীবী হয়েও ফেডারেশনে দুর্দান্ত প্রতাপে চলাচল করা সোহাগের এই অবস্থার জন্য সাবেক ফুটবলাররা দায় দিয়েছেন সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনকে। তার আশকারাতে নানা অনিয়ম করেছেন সোহাগ- মনে করেন শেখ আসলাম, হাসানুজ্জামান বাবলুর মতো সাবেক ফুটবলাররা। দরপত্রে অনিয়ম ও ফিফা ফান্ডের অপব্যবহারের কারণে ফুটবলের কর্মকাণ্ড থেকে সোহাগের এই নিষেধাজ্ঞা শুধু ব্যক্তির নয়, বাংলাদেশের ফুটবলের জন্যও বড় লজ্জা মনে করেন আসলাম, এটাই তো হওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য লজ্জার অধ্যায় সূচিত হলো। খুবই হতাশাজনক একটি ঘটনা। সোহাগের নিষেধাজ্ঞা মানে দেশের ফুটবলের নিষেধাজ্ঞা। গত ১৫ বছর ধরে এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ফিফার মাধ্যমে প্রকাশ পেল এবং বিশ্বের কাছে দেশের ফুটবলের দুর্নীতি প্রকাশ পেল। বাফুফে সভাপতির ছত্রছায়া ছাড়া এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে পারে না। কারণ, সোহাগ ফুটবল ফেডারেশন চালাত সভাপতির নির্দেশনায়। শীর্ষ কর্তা যেভাবে বলেছেন, সেক্রেটারি সেভাবে চালিয়েছেন। এটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জার এবং হতাশাজনক।’

একই সুর আরেক সাবেক ফুটবলার হাসানুজ্জামান বাবলুরও, ‘এখন আর ফুটবলার পরিচয় দেয়ার সুযোগ নেই। ফুটবলের কালো অধ্যায় গতকাল (শুক্রবার) রচনা হয়ে গেছে। এখন থেকে আর আমাদের ফুটবলারদের উত্তরণের কোনো সুযোগ নাই। এই কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গেই আমি ফুটবল খেলেছি একসঙ্গে ১০ বছর। কাজী সালাউদ্দিন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলার ছিলেন। তার হাত ধরেই আজ দুর্নীতির দায়ে বাংলাদেশের ফুটবল কলঙ্কিত এবং সাজাপ্রাপ্ত। এটা নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়েই বাদল রায়কে হেনস্তা করা হয়। তাকে মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ফিফার মাধ্যমে বেরিয়ে এল বাদল রায় সত্য ছিলেন।’

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন গতকাল বিকালে ফেডারেশনের শীর্ষ কয়েকজন এক্সিকিউটিভকে (বেতনভুক্ত) ডেকেছিলেন। সোহাগের সঙ্গে জুরিখে যাওয়া এক্সিকিউটিভসহ অন্যরাও ছিলেন। সোহাগকে নিষিদ্ধ করার ৫১ পাতার রিপোর্টের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি এক্সিকিউটিভদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

গত শনিবার রাতে বাফুফে সভাপতি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পড়েছেন। এই রিপোর্ট পড়ে বাফুফের এক্সিকিউটিভদের কাজে অসতর্কতার বিষয়টি তার চোখে ধরা পড়ে। ফিফার সোহাগকে নিষিদ্ধ করার প্রতিবেদন এবং তার পর্যবেক্ষণ নিয়ে এক্সকিউটিভদের মতামত নেন। কাজী সালাহউদ্দিনের সঙ্গে এক্সিকিউটিভদের এই সাক্ষাতের সময় ফেডারেশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন। ফিন্যান্স বিভাগের কর্মরত ব্যক্তিদের কাজের ত্রুটি ও দুর্বলতা তার চোখে ধরা পড়েছিল আগেই। সোহাগের এই নিষেধাজ্ঞা রিপোর্টে ফিন্যান্স বিভাগের অবহেলা আরো প্রকট হয়। ফেডারেশনের সেই শীর্ষ কর্মকর্তা ফিন্যান্স বিভাগের এক্সকিউটিভদের পদত্যাগ করার কথা বলেন।

ফুটবল ফেডারেশনের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আজকের নির্বাহী কমিটির সভা রয়েছে। আজ বিকালে নির্বাহী কমিটির সভায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হবেন। এর পাশাপাশি সোহাগের নিষেধাজ্ঞা রিপোর্টে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করারও সিদ্ধান্ত আসতে পারে আজকের সভায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত