ঢাকা ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথে সুপার লিগ শুরু

আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথে সুপার লিগ শুরু

পুরোনো জৌলুস নেই, নেই উন্মাদনা, উত্তেজনা কিংবা রোমাঞ্চ। কিন্তু ঢাকা লিগে আবাহনী আর মোহামেডানের খেলা হলে বাড়তি একটু নজর পড়ে ক্রীড়ামোদী সকলেরই। ঈদের পরপরই শুরু হবে দেশের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের একমাত্র প্রতিযোগিতা ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সুপার লিগের লড়াই। প্রত্যাশিতভাবেই আবাহনী দুইয়ে থেকে নিশ্চিত করেছে সুপার লিগ, মোহামেডান শুরুতে পিছিয়ে থাকলেও নাটকীয়ভাবে ৫ নম্বর দল হয়ে ওঠে সুপার লিগে। শিরোপার লড়াইয়ে দুই দল মুখোমুখি হবে সুপার লিগের প্রথম রাউন্ডেই। ১ মে দেশের দুই প্রধান দলের সুপার লিগের ‘সুপার দ্বৈরথ’ অনুষ্ঠিত হবে মিরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বাকি দুই ম্যাচে ফতুল্লায় খেলবে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব-গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স এবং বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে মুখোমুখি হবে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ও প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব।

প্রথম পর্বে আবাহনীর কাছে পাত্তা পায়নি সাকিবহীন মোহামেডান। নাঈম শেখের সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে জয় পায় আবাহনী। সুপার লিগে সাকিবকে পেতেও পারে তারা। শোনা যাচ্ছে, মতিঝিল পাড়ার ক্লাবটির হয়ে সুপার লিগে দুয়েকটি ম্যাচ খেলে জাতীয় দলের সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ডে উড়াল দেবেন সাকিব। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার মোহামেডান শিবিরে যোগ দানের পরই টানা ছয় ম্যাচ জিতে সুপার লিগে উঠে দলটি। সুপার লিগে সাকিবকে পেলে নিশ্চিতভাবে আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকবে তাদের।

প্রথম পর্বে ১০টি করে ম্যাচ জিতেছে শেখ জামাল ও আবাহনী। দুই দলের পয়েন্ট সমান ২০ হলেও হেড টু হেডে এগিয়ে থাকায় টেবিলের শীর্ষে শেখ জামাল। তাদের একমাত্র হারটি মোহামেডানের বিপক্ষে। টানা আট ম্যাচ জেতার পর নবম রাউন্ডে শেখ জামালের কাছে হারে আবাহনী। মাত্র একটি করে ম্যাচ হারায় শিরোপা লড়াইটা শেখ জামাল ও আবাহনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার সম্ভাবনা বেশি। রেলিগেশন লিগও শুরু হবে ১ মে থেকে। রেলিগেশন লিগের সব ম্যাচ হবে বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে। অবনমন এড়াতে এখানে লড়বে অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব (৬), শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব (৪) ও ঢাকা লেপার্ডস (৩)। রেলিগেশন লিগ শেষে তলানির দুই দল নেমে যাবে প্রথম বিভাগে। বাকি তিন দল রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব (৯), সিটি ক্লাব (৮) ও ব্রাদার্সের (৮) লিগ শেষ হয়ে গেছে এরই মধ্যে। তিন মাঠে প্রতিদিন তিনটি করে ম্যাচ হবে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে খেলা মাঠে না গড়ালেও সমস্যা নেই, থাকছে রিজার্ভ ডে। আর প্রতিটি ম্যাচের পর থাকছে একদিন করে রেস্ট ডে।

৫০ ওভারের ক্রিকেটে দেশের মূল আসর ডিপিএলের প্রথম পর্বে দেখা গেছে নজরকাড়া সব পারফরম্যান্স। নতুন আসরেও পুরোনো চেহারায় এনামুল হক বিজয়কে। তার সঙ্গে দুর্দান্ত উদ্বোধনী জুটি গড়েছেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ব্যাটিংয়ে সবার উপরে আবাহনীর এই দুই ওপেনার। বোলিংয়ে শীর্ষে শেখ জামালের ভারতীয় অলরাউন্ডার রসুলের, সঙ্গে আছেন সিটি ক্লাবের অধিনায়ক রবিউল। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন চিরাগ জানি। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে গত সোমবার শেষ হয়েছে প্রথম পর্ব খেলা।

উড়ছেন নাঈম শেখণ্ডএনামুল

লিগের প্রথম পর্বে আবাহনীর ছুটে চলার পেছনে মূল কারিগর দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও এনামুল হক। গত আসরে প্রাইম ব্যাংকের হয়ে ১ হাজাপর ১০০’র বেশি রান করা এনামুল এবারও শুরু করেন সেই ছন্দে। সাত রাউন্ড পর্যন্ত রান সংগ্রাহক তালিকায় এগিয়ে ছিলেন তিনি, শেষ চার রাউন্ডে ছাড়িয়ে গেছেন নাঈম, ১১ ম্যাচে এক সেঞ্চুরি ও ৭ ফিফটিতে করেছেন ৭১৯ রান। সিটি ক্লাবের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়ায় গড় নেমেছে ১০০’র নিচে, ৮৯.৮৮। স্ট্রাইক রেট, ৯৫.২৩! ২০১৯ প্রিমিয়ার লিগে ৮০৭ রান করেছিলেন নাঈম। ছাড়িয়ে যেতে সুপার লিগের পাঁচ ম্যাচে করতে হবে আর ৮৮ রান। হাজার রানের মাইলফলক ছুঁতে প্রয়োজন ২৮১ রান। এনামুল ২ সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটিতে করেছেন ৬৪৪ রান, প্রথম সাত ম্যাচেই করেন ৫৭২ রান। শেষ চার ম্যাচে তেমন রানের দেখা পাননি ৩০ বছর বয়সি ওপেনার। গত আসরে ৩ সেঞ্চুরি ও ৯ ফিফটিতে করেছিলেন রেকর্ড ১১৩৮ রান। নাঈমণ্ডএনামুল ছাড়া ৫০০’র বেশি রান করতে পেরেছেন কেবল রবি তেজা, দুইটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের ভারতীয় অলরাউন্ডারের সংগ্রহ ৫০৮ রান।

বোলিংয়ে শীর্ষে রবিউল-রসুল

সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় সবার ওপরে আছেন সিটি ক্লাবের রবিউল হক ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের পারভেজ রসুল। দুজনই ১১ ম্যাচে নিয়েছেন ২৩টি করে উইকেট। রবিউলের সিটি ক্লাবের টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যাওয়ায় উইকেট বাড়ার সুযোগ নেই। তবে সুপার লিগে আরও পাঁচ ম্যাচ পাওয়ায় এককভাবে মুকুট নিজের মাথায় নেয়ার সম্ভাবনা থাকছে শেখ জামালের ভারতীয় অলরাউন্ডারের সামনে। সিটি ক্লাবের অধিনায়ক ১১ ম্যাচে তিনবার নিয়েছেন ৪ উইকেট। অফ স্পিনে ধারাবাহিকতা দেখিয়েছেন রসুল, আবাহনীর বিপক্ষে ১০ ওভারে ৪১ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকলেও বাকি ১০ ম্যাচেই পেয়েছেন উইকেট। সেরা বোলিং ৩০ রানে ৪ উইকেট, গাজী গ্রুপের বিপক্ষে। এছাড়া অন্তত ২০ উইকেট নিতে পেরেছেন শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের বাঁ-হাতি স্পিনার হাসান মুরাদ। রেলিগেশন লিগের দুইটি ম্যাচ বাকি থাকায় উইকেট সংখ্যা বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ থাকছে তার।

গত আসরের মতো এবারও দারুণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের চিরাগ জানি। ব্যাট হাতে ৫ ফিফটিতে ৭৭.৬৭ গড় ও ৯৮.১১ স্ট্রাইক রেটে ৪৬৬ রানের পাশাপাশি বল হাতে তার শিকার ১৭ উইকেট, সেরা বোলিং ৩৭ রানে ৪ উইকেট। ব্যাটসম্যানদের তালিকায় তার অবস্থান অষ্টম, বোলিংয়ে ষষ্ঠ।

মাশরাফির রেকর্ড, আলাউদ্দিন বাবুর হ্যাটট্রিক

৭ মার্চ মোহামেডানের বিপক্ষে রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে ১৭ রানে ৫ উইকেট নেন লেজেন্ড অব রূপগঞ্জের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে ৫ উইকেটের রেকর্ড। সেদিন তার বয়স ছিল ৩৯ বছর ১৭৩ দিন। আগের রেকর্ড ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের, ৩৭ বছর ৩৫৮ দিন। একই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৪৫০ উইকেট পূরণ হয় মাশরাফির। ৪০০ ছোঁয়া বাংলাদেশি বোলার আছেন আর স্রেফ একজন আব্দুর রাজ্জাক, ৪১২ উইকেট।

লিগের শুরুতে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন রূপগঞ্জ টাইগার্সের আলাউদ্দিন বাবু। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে পরপর তিন বলে হাবিবুর রহমান, অমিত মজুমদার ও রবি তেজাকে আউট করেন তিনি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের বোলারদের ১৪তম হ্যাটট্রিক এটি। লিস্ট ‘এ’ স্বীকৃতি পাওয়ার পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে নবম। এছাড়া কুড়ি ওভারের স্বীকৃত ক্রিকেটেও হ্যাটট্রিক আছে আলাউদ্দিন বাবুর।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত