ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অবশেষে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা

অবশেষে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা

২২ বছর পর প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে, অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা। টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির পূর্বশর্ত ছিল আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গঠন। ক্রিকেটের প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণে এর আগে বেশ কয়বার বিসিবির আন্তরিকতার অভাবে যাত্রা শুরু করতে পারেনি আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা। ২০১২ সালে এজিএম থেকে শুরু, ২০১৭ ও ২০২১ সালে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার খসড়া গঠনতন্ত্র ওঠে আলোচনায়। তবে ক্রিকেট বিকেন্দ্রীকরণের জন্য অতি জরুরি হয়ে পড়া আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গঠনের চূড়ান্ত অনুমোদন এসেছে গেল বছর ১৯ জুলাই এজিএমে।

শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা (আরসিএ)। কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে বিকেন্দ্রীকরণ হতে যাচ্ছে দেশের ক্রিকেট। বিসিবির গঠনতন্ত্রে আরসিএর ধারা সংযোজন করার ছয় মাসের মধ্যে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলো। আরসিএর বিধিমালা প্রণয়ন করে অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানান বিসিবির সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী, জানান, পরিচালনা পর্ষদের পরবর্তী সভায় সংস্থাগুলোর কমিটি অনুমোদন করা হবে। প্রাথমিকভাবে বিসিবি মনোনীত অ্যাডহক কমিটি কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গঠনের পর প্রতিটি বিভাগে তার কার্যক্রম শুরু করতে বাধা নেই। প্রয়োজনে জেলা এবং বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা জেলাও বিভাগীয় ক্রিকেট সংস্থা এই সংগঠন বলে গণ্য হবে। বিসিবির গঠনতন্ত্রের ৯.১(ক) ধারায় যুক্ত করা হয়েছে এই ধারাটি। তারপরও আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার কাঠামো এবং কর্মপরিধি চূড়ান্ত করার আগেই তা নির্ধারণের জন্য বিসিবির পরিচালনা পরিষদের ওপর ন্যস্ত করেছে সাধারণ পরিষদ। বিসিবির পরবর্তী পরিচালনা পরিষদের সভায় কর্মপন্থা এবং কমিটির কাঠামো চূড়ান্ত করার পর দেশের প্রতিটি বিভাগে যাত্রা শুরু হবে বিভাগীয় ক্রিকেট সংস্থার। আপাতত সাতটি বিভাগ নিয়ে হবে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা। জাতীয় ক্রিকেট লিগে নতুন বিভাগ ময়মনসিংহ প্রতিনিধিত্ব করেনি বলে এই বিভাগ থাকবে ঢাকার সঙ্গেই। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘গঠনতন্ত্র সংশোধন হওয়ায় আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা করতে এখন আর বাধা রইল না। আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনায় একটা গাইডলাইন বিসিবি থেকে দেয়া হবে। যেসব বিভাগ ছোট, তাদের জন্য কমিটিতে ১১ জন, বড় বিভাগগুলোর প্রতিটির জন্য ১৭ জন কাউন্সিলর রাখার কথা বলা হয়েছে।’ রিজিওনাল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন গঠনে আপাতত বিসিবি প্রতিটি বিভাগের জন্য অস্থায়ী কমিটি তৈরি করে দেবে। পরবর্তীতে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হবে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা ও রংপুর বিভাগ থেকে ১২ জন পরিচালক বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এই বিভাগগুলোতে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার কমিটি গঠনের জন্য নাম চেয়েছে বিসিবি। সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার পূর্ণাঙ্গ একটি নীতিমালা বিসিবি অনুমোদন করেছে। সেটার আলোকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরিচালকদের কমিটির সদস্যদের নাম প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে। বিসিবি সভাপতি অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন করবেন আগামী সভায়। চেষ্টা থাকবে সব কমিটি করে দেওয়ার। যে নীতিমালা করা হয়েছে, সে আলোকে প্রথম কমিটি হবে অ্যাডহক ভিত্তিতে। এই কমিটি পরবর্তী সময়ে নির্বাচন সম্পন্ন করবে।’

বিধিমালা অনুযায়ী সাধারণ পরিষদ এবং উপদেষ্টা পরিষদ দুটি স্তর রাখা হয়েছে। কার্যনির্বাহী কমিটি সংস্থা পরিচালনা করবে বিধিমালা অনুসারে। কমিটির প্রধান হবেন একজন সভাপতি। তার অধীনে থাকবেন একজন সিনিয়র সহসভাপতি, একজন সহ-সভাপতি, একজন সাধারণ সম্পাদক, একজন যুগ্ম সম্পাদক, কোষাধক্ষ এবং মনোনীত বা নির্বাচিত সদস্যরা। প্রতিটি আরসিএর অধীনে জেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলোয় জেলা ক্রিকেট সংস্থা থাকবে। বিধিমালা অনুযায়ী সাধারণ পরিষদ মনোনীত একটি প্রতীক থাকবে, যেটা বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনে হতে হবে। প্রতিটি আরসিএর সদর দপ্তর হতে হবে বিভাগীয় শহরে। আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গঠনের উদ্দেশ্য হলো- অঞ্চলভিত্তিক ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠা, চর্চা, প্রচার, প্রসার, মানোন্নয়ন ও জনপ্রিয়করণ।

সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হলো বিসিবির নীতিমালা অনুযায়ী নিয়মিত লিগের আয়োজন করা। প্রতিটি জেলা বা বিভাগ থেকে ন্যূনতম একজন করে কাউন্সিলর নিতে হবে প্রথম শ্রেণির বা আন্তর্জাতিক সাবেক ক্রিকেটারকে। সেই খেলোয়াড়কে মনোনীত করবেন বিসিবি সভাপতি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার কমিটি হবে ১৯ সদস্যের। বাকি চার সংস্থার কমিটি ১১ সদস্যের। জানা গেছে, বিভাগ থেকে নির্বাচিত পরিচালকরা অ্যাডহক কমিটির জন্য বিধিমালা অনুযায়ী সংগঠক ও সাবেক ক্রিকেটারদের বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা এগিয়ে। আ জ ম নাছির, সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর, আলী আব্বাস, আকরাম খান ও সালমান ইস্পাহানীর নাম কমিটির জন্য প্রস্তাব করা হবে বলে জানা গেছে।

বিসিবি সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী জানান, আরসিএর প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বোর্ডের সহযোগিতা থাকবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো প্রতিটি আঞ্চলিক সংস্থায় একটি করে মিনি বিসিবি গড়ে তোলা। সংস্থাগুলোতে এখন যে সেটআপ আছে, তারাই অফিসিয়াল কার্যক্রম চালাবে। প্রয়োজন অনুযায়ী জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে।’ তবে কমিটি গঠনের পর আরসিএ কর্মকর্তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ থাকবে প্রতিষ্ঠানটিকে আর্থিকভাবে সক্ষম করে গড়ে তোলা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং বিসিবির অনুদানের বাইরে স্পন্সর থেকে আয় করার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে বিধিমালায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত