তাইজুল-নাসুমের ‘আরেক’ লড়াই

প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছেন আরেক জন, চক্র ঘুরে আসা সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলে বাদ পড়ে যাওয়ার শঙ্কা- এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে মেলে ধরা সহজ নয়। জায়গা নিয়ে লড়াইয়ের তীব্র চাপের মুখে ভেঙে পড়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। চন্দিকা হাথুরুসিংহে পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, ওয়ানডে দলে টিকে থাকতে হলে এই পরীক্ষায়ও জিততে হবে তাইজুল ইসলাম ও নাসুম আহমেদের। ফলে পারফরম তো করতেই হবে, তীব্র লড়াইয়ের চাপও সামলাতে হবে দুই স্পিনারের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে গত সোমবার রাতে ইংল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা হবে বাংলাদেশ দল। আগামী শুক্রবার একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে তারা। এরপর চেমসফোর্ডে ৯, ১২ ও ১৪ মে হবে তিন ওয়ানডে।

বিশ্বকাপের আর বাকি পাঁচ মাসের মতন সময়। কিন্তু এখনো সূচি ঘোষণা করেনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। ১০ দলের বিশ্বকাপে এবারও প্রতি দলকে খেলতে হবে ৯টি করে ম্যাচ। কোনো ভেন্যুতে কার বিপক্ষে খেলতে হবে তা জানতে দেরি হওয়ার একটা প্রভাব দেখছেন বাংলাদেশের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।

সিলেটে তিন দিনের ক্যাম্পে স্কিল ট্রেনিংয়ের সঙ্গে বিভিন্ন সেশনে ক্লাস নিয়েছেন হাথুরুসিংহে। ছিল ওপেন ডিসকাসন সেশনও। খোলামেলা আলোচনায় সবার ভাবনার গভীরতা জানার পাশাপাশি দলের লক্ষ্য, পরিকল্পনা, ম্যাচ নিয়ে পরিষ্কার ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। শিষ্যদের কাছ থেকে হাথুরুসিংহের চাওয়া একটাই, মাথা পরিষ্কার থাকা। ২২ গজে যখন প্রতিপক্ষের সামনে দাঁড়াবেন তখন যেন দ্বিধায় না ভোগেন। নিজেদের মেধা, সামর্থ্য দিয়ে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে যেন দিব্যি পারফর্ম করতে পারেন। তার কথায় উঠে এলো সব, ‘কীভাবে শুরু করতে হবে সেটা অনুশীলন করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি এভাবে অনুশীলন না করেন তাহলে উইকেটে গিয়ে থমকে যেতে হবে, যেটা চাই না। আমরা চাই কোনো পরিস্থিতিতে কেমন খেলতে হবে সে বিষয়ে সবার মাথা পরিষ্কার থাকুক।’

সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে ওয়ানডেতে তৃতীয় স্পিনারের দৌড়ে তাইজুল ও নাসুমের লড়াই চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। গত কয়েক সিরিজ ধরে অদল বদল করে খেলানো হচ্ছে তাদের। আগেই জানান হয়েছে, আসন্ন বিশ্বকাপ পর্যন্ত এটি চলবে। তবে দুজনের জন্যই থাকছে অভিন্ন বার্তা। চাপের মুখে দেখাতে হবে দৃঢ়তা। চাপ সামলে দলের চাহিদা মেটাতে পারলেই হয়তো খুলবে বিশ্বকাপের দরজা।

আইরিশদের বিপক্ষে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের সিরিজটি খেলতে যাওয়ার আগে সিলেটে তিন দিনের বিশেষ ক্যাম্প করছে বাংলাদেশ। শনিবার ক্যাম্পের শেষ দিন গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন হাথুরুসিংহে, অনেক কথার ভিড়ে তাইজুল ও নাসুমের জন্য পরিষ্কার বার্তা দেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ, ‘নাসুমণ্ডতাইজুলের অদল বদলের কারণ নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি, আমরা আমাদের স্কোয়াড বড় করতে চাই। সবাইকে অনেক অভিজ্ঞতা দিতে চাই। বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত এই অদল বদল চলতে থাকবে।’ অনেক সময় পারফর্ম করতে থাকা কোনো ক্রিকেটারকে দলের বাইরে রাখা হলে পারফরম্যান্সে ছেদ পড়ে, মানসিকতায়ও প্রভাব পড়তে দেখা যায়। তাইজুল ও নাসুমের ক্ষেত্রে তেমন কিছুর কোনো শঙ্কা দেখেন না প্রধান কোচ। বরং হাথুরুসিংহের মতে, তেমন কিছু হলেই সত্যিকারের পরীক্ষায় পড়বেন দুই স্পিনার। তখনই বোঝা যাবে, চাপ জয় করে কে পারেন দলে নিজের জায়গা নিশ্চিত করতে, ‘এটি তাদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ, তাদের সঙ্গে যথেষ্ট কথা হয়েছে। আমরা তাদের ব্যাখ্যা করেছি কেন তারা আছে, কেন নেই। আশা করি, প্রভাব ফেলবে না। যদি প্রভাব ফেলে, তাহলে এটা চাপের মধ্যে তাদের পারফরম্যান্সেও প্রভাব ফেলবে। ওই ধরনের ক্রিকেটার আমরা দলে চাই না।’ গত ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে দলে ছিলেন নাসুম। বিপিএলের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার জায়গায় নেয়া হয় তাইজুলকে। আইরিশদের বিপক্ষে আবার আনা হয় নাসুমকে। এবার ইংল্যান্ড সফরের আয়ারল্যান্ড সিরিজের দলে নাসুমের বদলে এসেছেন তাইজুল।

গত কয়েক সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ধরনে দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। সাদা বলের ক্রিকেটে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পথে হাঁটছেন সাকিব আল হাসান, লিটন দাসরা। এই ধারা বজায় রেখে ব্যাটসম্যানদের নিজেদের পরিকল্পনায় স্বচ্ছ থাকার তাগিদ দিয়েছেন হাথুরুসিংহে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে সাড়ে ৩০০ ছুঁইছুঁই স্কোর গড়ে আগ্রাসী ব্যাটিং রপ্ত করার প্রচ্ছন্ন বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ছিল ইতিবাচক ব্যাটিংয়ের ছাপ। তবে ওয়ানডেতে পাওয়ার প্লে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে রয়ে গেছে ঘাটতি। নিজেদের সবশেষ ১০ ওয়ানডেতে স্রেফ একবার কোনো উইকেট না হারিয়ে পাওয়ার প্লে কাটাতে পেরেছে বাংলাদেশ। সেদিন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১০২ রান তাড়ায় ১০ উইকেটেই জিতেছিল তারা। বাকি ৯ ম্যাচে প্রথম ১০ ওভারে একটি হলেও উইকেট হারিয়েছে তামিম ইকবালের দল।

ফল নিজেদের পক্ষে আনার জন্য ভালো শুরু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন সিরিজ শুরুর আগে সেদিকে নজর দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ। ওপেনারদের বুঝিয়ে দিয়েছেন তাদের কাজ। স্পষ্ট করে বলেছেন, পাওয়ার প্লের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে ওপেনাদেরই, ‘ব্যাটসম্যানরা যেখানে ব্যাটিং করবে, সে অনুযায়ী খেলতে হবে। ওপেনারদের প্রথম ১০ ওভার ব্যাট করতে হবে। কীভাবে শুরু করতে চাই অথবা ফিল্ড রেস্ট্রিকশনের (প্রথম ১০ ওভার ফিল্ডিংয়ের বাধ্যবাধকতা) সুবিধা কীভাবে কাজে লাগাব। মাঝের দিকে আবার ভিন্ন পরিস্থিতি থাকবে। কখনও চারজন আউট হয়ে যায় বা কখনো আবার পাঁচজন। এটা গুরুত্বপূর্ণ কেমন শুরু করতে চান। যদি ওভাবে অনুশীলন না করেন, উইকেটে গিয়ে থমকে যাবেন। যেটা আমরা চাই না। আমরা চাই পরিস্থিতি যেমনই হোক, তাদের মাথায় পরিকল্পনা যেন স্বচ্ছ থাকে।’

শুরুর ধাক্কা সামলে মিডল অর্ডার থেকে মোটামুটি ধারাবাহিকভাবে রান পাচ্ছে বাংলাদেশ। ছন্দে আছেন সাকিব, মুশফিকুর রহিম, নাজমুল হোসেন শান্তরা। ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে আশা জাগাচ্ছেন দলে নতুন আসা তাওহিদ হৃদয়। ব্যাটসম্যানদের এই মনোভাবে কোনো পরিবর্তন আনার পক্ষে নন হাথুরুসিংহে। তবে আগ্রাসী ক্রিকেটের যে ধারণা সেটি আরো একবার পরিষ্কার করলেন তিনি, ‘আমাদের অ্যাপ্রোচ থাকবে সবসময় ইতিবাচক আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার। আগ্রাসী ক্রিকেট মানে হলো, যা-ই করি না কেন, ইতিবাচক আগ্রাসী অভিপ্রায় নিয়ে করা। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রেও আগ্রাসী থাকা, সেটা হোক দল বাছাই বা ফিল্ড প্লেসিং কিংবা কী ধরনের বোলিং করা হবে। ছেলেদের স্বাধীনতা দিতে যাই, যেন মাঠে গিয়ে নিজেদের মেলে ধরতে পারে তারা।’