মাঠ নেই, আসবে না আর্জেন্টিনা

প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

সাম্প্রতিক সময়ে নানা বিতর্কিত মন্তব্যে, কর্মকাণ্ডের কারণে প্রায়ই শিরোনামে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। কখনো সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদকের আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে ফিফা কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়ায়, কখনো সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনের বিতর্কিত ও আপত্তিকর মন্তব্যে। টালমাটাল পরিস্থিতিতে দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থাটির প্রধান এবার দিলেন আরেক ‘না’ সূচক খবর- আগামী জুনে বাংলাদেশে আসছে না বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।

মেসি-দিবালাদের বাংলাদেশে আনতে না পারার কারণ হিসেবে কাজী সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন মাঠ সমস্যার কথা। যে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল, সেটির সংস্কার কাজ শেষ হয়নি এখনো। এ বছরে কাজ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। তাই সবকিছু ‘প্রস্তুত’ থাকার পরও আর্জেন্টিনাকে না করে দিতে হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানান কাজী সালাহউদ্দিন, বলেন, ‘বিষয়টা ভেরি সিম্পল, যখন আর্জেন্টিনার সঙ্গে আমাদের চুক্তি চূড়ান্ত হলো, আমরা দেখলাম আমাদের মাঠে প্রস্তুত হচ্ছে না, তখন একটা চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছি-মাঠ কি প্রস্তুত হবে? কী পরিস্থিতি? যেহেতু এর আগে কাগজ-কলম ছাড়াই আলাপ চলছিল, কিন্তু মন্ত্রণালয় জানাল, মাঠ সামনের বছরের আগে প্রস্তুত হবে না। তখন আর্জেন্টিনার সঙ্গে চুক্তিটা বাতিল করলাম। অবশ্যই ওরা আসতে আগ্রহী ছিল, কিন্তু আমরা যখন কথা বলছিলাম, মাঠ নিয়ে সন্দেহ ছিল। তখন আর্জেন্টিনাকে বলে দিয়েছিলাম, তোমরা যদি অন্য কোথাও যেতে চাও, তাহলে তাদের সঙ্গে চুক্তি করতে পার। এখানে আর্থিক চুক্তি, টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনের চুক্তি গ্রহণযোগ্য, তাই আমরা বলেছিলাম, দেখি মাঠের বিষয়টি আমরা চূড়ান্ত করতে পারি কি না।’

জুনের ফিফা উইন্ডোতে আর্জেন্টিনাকে আনতে চেয়েছিল বাফুফে, যদিও বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন ছিল অনেক। আর্জেন্টিনার এক গণমাধ্যমকর্মী জানিয়েছিলেন, দুই পক্ষের মধ্যে কোনো আলোচনা না হওয়ার কথা। কিন্তু কাজী সালাহউদ্দিন জানান, আর্জেন্টিনার আগ্রহে কমতি ছিল না। স্রেফ মাঠ সমস্যায় ভেস্তে গেছে এই উদ্যোগ, ‘জুনের এখনো অনেক বাকি, কিন্তু ওদের তো পেমেন্ট করতে হবে। পেমেন্ট করার পর যদি আমার মাঠ প্রস্তুত না হয়, তখন তো আরেক বিপদে পড়ব। পেমেন্ট এবং সবকিছুই আমাদের প্রস্তুত ছিল, কিন্তু মাঠ প্রস্তুত নেই। আমাদের পৃষ্ঠপোষকরাও বলেছিল, পেমেন্ট পরিশোধের জন্য। তখন ভেবে দেখলাম, যদি ওদের টাকাটা পাঠিয়ে দেই আর মাঠ প্রস্তুত না হয়, তখন তো আর টাকাটা ফেরত পাব না। তখনই চিঠি দিয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলাম মাঠ প্রস্তুত হবে কি না। তারা জানিয়েছে হবে না। এ নিয়ে তারা আরো কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছে, লাইট লাগাতে হবে, এটা-ওটা লাগাতে হবে, ইত্যাদি-ইত্যাদি। বলেছে, এত অল্প সময়ে মাঠ প্রস্তুত করা সম্ভব নয়। তখন আমি পৃষ্ঠপোষকদের বিষয়টি জানালাম এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে তাদের না করে দিয়েছি।’

গত মঙ্গলবার বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে সালাউদ্দিনের কিছু কথা রেকর্ড হয় এবং পরে চাউর হয়ে যায়। সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের এবং তাদের পরিবার নিয়ে আপত্তিকর কথা বলতে শোনা যায় বাফুফে সভাপতিকে। পরে বিষয়টি নজরে আসায় তড়িঘড়ি করে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। ওই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সালাউদ্দিন জানালেন তার ‘কপাল খারাপ’। ব্যক্তিগত আলাপচারিতা প্রকাশ্যে আসায় ভাগ্যকেই দুষছেন বাফুফে সভাপতি।

কাজী সালাহউদ্দিনকে বহিষ্কার

গণমাধ্যমকর্মী ও তাদের পরিবারকে উদ্দেশ করে ‘আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্যের কারণে অনারারি সদস্যপদ থেকে কাজী সালাহউদ্দিনকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গতকাল বিবৃতিতে জানিয়েছে দেশের ক্রীড়া সাংবাদিকদের সবচেয়ে পুরোনো সংগঠন বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ)। ২০১২ সালে এই সাবেক তারকা ফুটবলারকে অনারারি সদস্যপদ দিয়েছিল ক্রীড়া সাংবাদিকদের এই সংগঠন।

সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) কাজী সালহাউদ্দিনের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগ দাবি করেছে।