সবশেষ ৪ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট হাতছাড়া করা আর্সেনালের শিরোপা স্বপ্ন প্রায় নিভে গেছে। ম্যানচেস্টার সিটির কাছে অপদস্থ হয়ে ৩১ সপ্তাহ পর শীর্ষস্থান থেকে ছিটকে যাওয়া গানারদের জন্য এটি ছিল তাই জবাব দেয়ার ম্যাচ। এমিরেটসের লন্ডন ডার্বিতে চেলসিকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে যথার্থ জবাবই দিল মিকেল আরতেতার দল। ধুঁকতে থাকা ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের চেলসি বরণ করল টানা ষষ্ঠ হার। এই জয়ে আবার টেবিলের শীর্ষে উঠেছে আর্সেনাল। কিন্তু সিটির হাতে দুই ম্যাচ বেশি থাকায় এই দুই পয়েন্টের লিড হয়তো বেশিদিন ধরে রাখতে পারবে না তারা। তবে ক্ষুদ্রতম সম্ভাবনাকেও বাঁচিয়ে রাখতে এখন টানা ম্যাচ জিতে যেতে হবে আরতেতার শিষ্যদের। ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড দায়িত্ব নেয়ার পর ছয় ম্যাচের ছয়টিতেই হারল চেলসি। ক্লাব ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে প্রিমিয়ার লিগ মৌসুম পার করার দ্বারপ্রান্তে আছে দলটি।
ওদিকে ১৫ মিনিটের মধ্যে লিভারপুলের তিন গোল, একদম বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে এরপর ধীরে ধীরে টটেনহ্যাম হটস্পারের ম্যাচে ফেরা, যোগ করা সময়ে রিচার্লিসনের সমতাসূচক গোল ও উন্মত্ত উদযাপন, যার ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে অন্য প্রান্তে জোটার গোল। ৯০ মিনিটে নিজেদের ‘গুড ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’- সব দিক দেখিয়ে একটি প্রিমিয়ার লিগ ক্লাসিক উপহার দিল লিভারপুল ও টটেনহাম। ফল লিভারপুল-৪, টটেনহ্যাম-৩।
লিভারপুলের চেয়েও বেশি এই ম্যাচের গল্পটা আসলে স্পার্সের। গত সপ্তাহে নিউক্যাসলের কাছে নাকানি-চুবানি খাওয়া, অন্তর্বর্তীকালীন কোচকে বরখাস্ত করা, তরুণ রায়ান ম্যাসনকে দায়িত্ব দেয়া দলটি অ্যানফিল্ডে মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। হ্যারি কেইনদের চোখে দেখে যেতে শুরু করে গত সপ্তাহের মতো ‘বেইজ্জতি’ হওয়ার ভয়। রক্ষণ থেকে শুরু পুরো দল ম্যাচের শুরুতে যেন ফুটবল খেলতে ভুলে যায়। প্রথম ৩০ মিনিটে মাত্র ১৮ শতাংশ বলের দখল পায় স্পার্স। সেই সীমিত টাচের অধিকাংশই আবার তাদের পা থেকে কেড়ে নিয়েছে প্রতিপক্ষ লিভারপুল।
প্রাথমিক এই ঝড়ের পর লিভারপুলের কল্যাণে ম্যাচে ফিরে আসে স্পার্স। টেবিলের শীর্ষ ১২ দলের মধ্যে মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল খেয়েছে স্পার্স (৫৭)। এরপরও পুরো মৌসুম শীর্ষ ছয়ে ছিল শুধু সন-কেইন-কুলুসেভস্কিদের বদৌলতে। প্রতিবারের মতো এবারও দলের ত্রাতা হয়ে আসে এই ফরওয়ার্ড ত্রয়ী। প্রথমার্ধের শেষদিকে কেইন এবং ৭৭ মিনিটে সনের গোলে ম্যাচে ফিরে আসে স্পার্স। এ দুই গোলের মাঝখানে চারবার পোস্টে বল লাগিয়েছেন সন-কেইনরা। শেষদিকে কামব্যাক সম্পন্ন করেন বদলি খেলোয়াড় রিচার্লিসন। মৌসুমে রিচার্লিসনের প্রথম গোল, অ্যানফিল্ডের দর্শকদের চুপ করতে বলে উদযাপন, পুরো স্পার্স ডাগআউটের উচ্ছ্বাস ম্লান হয়ে যায় ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে। অসাধারণ একটি কামব্যাক নিজেদের দোষেই ‘বটল’ করে স্পার্স। লুকাস মউরার ব্যাকপাস কুড়িয়ে অন্য প্রান্তে গোল করে বসেন ডিয়াগো জোটা। পয়েন্ট শূন্য হাতে মাঠ ছাড়ে সফরকারীরা। জোটার এই গোলে টেবিলেও তাদের টপকে যায় লিভারপুল।
নিজেদের স্বাভাবিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী লিভারপুল ও স্পার্স, দুই দলই ভুলে যাওয়ার মতো একটি মৌসুম পার করছে। দুই দলের জন্যই শীর্ষ চার এখন প্রায় অসম্ভব। তবে ম্যাচশেষে তিন পয়েন্ট বাক্সবন্দি করা ইয়ুর্গেন ক্লপের মুখ যথেষ্ট উজ্জ্বলই ছিল। সমস্যা-জর্জরিত মৌসুমের শেষে এসে আলোর দেখা পেতে শুরু করেছে তার দল। সর্বশেষ চার ম্যাচেই জয় তুলেছে অলরেডরা। দলে কিছু পরিবর্তন আনলে আগামী মৌসুমে আবার পূর্বের রূপে ফিরতে পারে লিভারপুল, এই ইঙ্গিত এখন ভালোভাবেই পাওয়া যাচ্ছে। স্পার্সের ভবিষ্যৎ অনেকটা ধোঁয়াশা। ম্যাচে কেইনরা দেখিয়েছে তারা লড়াই করতে সক্ষম। নিজেদের ভুলের বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়াটা যে তাদের নিয়তি হয়ে বসেছে, সে ইঙ্গিত দিয়েছে এই ম্যাচ। নতুন স্পোর্টিং ডিরেক্টর, নতুন কোচ, নতুন খেলোয়াড়; সামনে অনেক কিছুতে বদল আসতে যাচ্ছে ক্লাবটিতে। কিন্তু সেসব বদলের পর তারা কোনদিকে হাঁটবে, সেটা অনুমান করা এখন প্রায় অসম্ভব।