পিএসজি ছেড়ে কোথায় যাচ্ছেন মেসি?

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

পুরো ক্যারিয়ারে অসম্ভব পেশাদারিত্ব মেনে চলেছেন লিওনেল মেসি। কিন্তু এমন নিষেধাজ্ঞার পর অনেকে অনেক কথা বলছেন। তবে দোষটা যে মেসির নয়, সেটা নিশ্চিত! মূলত লরেন্ত ম্যাচের পর দুই বা তিন দিন এমনিতে ডে-অফ থাকে পিএসজি ফুটবলারদের। আর্জেন্টাইন তারকা সেটা ধরে নিয়েই সোমবার সকালে পিএসজির সঙ্গে কথা বলেন, এর পরপরই সৌদির বিমানে ওঠেন।

কিন্তু হুট করে সে দিন সকালের কিছু সময় পর শিডিউলে পরিবর্তন আনে পিএসজি, বিকালে অনুশীলনের শিডিউল রাখা হয়। কিন্তু এই শিডিউল ঠিক হওয়ার আগেই মেসির বিমান সৌদির আশপাশে। যেমনটা জানিয়েছেন দলবদল নিয়ে নিয়মিত ব্রেকিং নিউজ করা সাংবাদিক রোমানো। দীর্ঘ সময় বার্সেলোনায় কাটালেও কখনও এমন বা এ ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা পাননি মেসি, পেশাদার ক্যারিয়ারে এই প্রথম তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন।

মেসির নিষেধাজ্ঞা-পরবর্তী পিএসজি কোনো বিবৃতি বা ব্যাখ্যা দেয়নি। আরএমসি স্পোর্টস জানিয়েছে, সম্প্রতি একটি নীতিমালা করেছে ক্লাবটি, যেখানে লেখা-একজন খেলোয়াড়, তিনি যত বড় তারকা হোন না কেন কিংবা যত দামি ক্লাব তার চেয়ে বড়, ক্লাবের ঊর্ধ্বে কেউ নন।

২০২১ সালে বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন মেসি। ফরাসি ক্লাবটিতে দুই বছরের বেশি থাকা হচ্ছে না আর্জেন্টাইন অধিনায়কের। চলতি মৌসুম শেষ হতেই পিএসজি ছাড়বেন মেসি, এমনটিই জানিয়েছেন দলবদল নিয়ে নির্ভরযোগ্য ইতালিয়ান সংবাদকর্মী ফ্যাব্রিজিও রোমানো, ‘পিএসজি ছাড়ছেন মেসি। এক মাস আগে পিএসজির ভবিষ্যৎ প্রজেক্ট দেখেছেন মেসির বাবা জর্জ। তখনই মেসির পিএসজি ছাড়ার বিষয়টি ক্লাব কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন জর্জ।’ মেসিকে দুই সপ্তাহের জন্য বরখাস্ত করার পর মেসির পিএসজি ছাড়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

মেসির সঙ্গে পিএসজির চুক্তি নবায়ন হচ্ছে না তা নিশ্চিত। আর্জেন্টাইন মহাতারকার মন উঠে গেছে ফ্রান্সের ক্লাবটির ওপর থেকে। পিএসজি সমর্থকরাও মেসিকে তাদের ক্লাবে আর দেখতে চান না। শুধু মেসি একাই নন, ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমারকেও দল থেকে তাড়াতে চান পিএসজি সমর্থকরা। ২০১৭ সালে বিশ্বরেকর্ড গড়া ট্রান্সফার ফি দিয়ে নেইমারকে বার্সেলোনা থেকে নিয়ে আসে পিএসজি। যে উদ্দেশ্যে তাকে আনা হয়েছিল সেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার স্বপ্ন পূরণ হয়নি ক্লাবটির। চোট-নিষেধাজ্ঞা মিলিয়ে গত ৬ বছরে পিএসজির খেলা মাত্র ৭০ শতাংশ ম্যাচে অংশ নিতে পেরেছেন নেইমার।

নেইমারের বাসার সামনে গিয়ে তাকে পিএসজি ছাড়তে বলেছেন এক দল সমর্থক। পিএসজির অফিশিয়াল সমর্থক গোষ্ঠী ‘আল্ট্রা’র পক্ষ থেকে বিক্ষোভও করা হয় ক্লাবের প্রধান কার্যালয়ের সামনে। ফ্রান্সের আরএমসি স্পোর্টস জানিয়েছে, বুধবার ফ্রান্সের স্থানীয় সময় বিকাল ৬টার দিকে পিএসজির প্রধান কার্যালয়ের সামনে হাজির হন আল্ট্রার কয়েকশ সদস্য। তাদের হাতে ছিল ক্লাবের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করা ব্যানার।

ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু সমর্থক মেসি, নেইমার ও মার্কো ভেরাত্তির বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন। পিএসজি চেয়ারম্যান নাসের আল খেলাইফির প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। একপর্যায়ে পিএসজি প্রধান কার্যালয়ের সামনে থেকে কিছু সমর্থক বোগিভালে অবস্থিত নেইমারের বাড়ির সামনে যান। বাসার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ‘নেইমার চলে যাও’ স্লোগান দেন তারা। নেইমারের বাড়ির সামনে সমর্থকদের হানা ও ক্লাবের প্রধান কার্যালয়ের সামনের বিক্ষোভের বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি পিএসজি। দুই তারকা এখনও পিএসজির খেলোয়াড়. এভাবে আক্রমণের শিকার হওয়ায় নিন্দা জানিয়েছে পিএসজি, বিবৃতিতে অপমানজনক ঘটনাটির প্রেক্ষিতে বলেছে, ‘একটি ক্ষুদ্রগোষ্ঠী কর্তৃক অসহনীয় ও অপমানজনক কমর্কাণ্ডে পিএসজি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। যতই মতের পার্থক্য থাকুক না কেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করা যায় না। এই ধরনের লজ্জাজনক কাণ্ডে ক্লাব তার খেলোয়াড় ও স্টাফদের পাশে থাকে সব সময়।’ মেসিকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় মেসি-পিএসজির ‘লাভ ম্যারেজ’ বিচ্ছেদে গড়িয়েছে এমন শিরোনাম করেছে সংবাদমাধ্যম গোল। মেসি-পিএসজি সম্পর্ক ইতি হয়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে আর্জেটাইন তারকার পরবর্তী গন্তব্য কোথায়? সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব তাকে মোটা অঙ্কের বেতনের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে।

পিএসজি নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর সৌদি আরব নাকি নড়েচড়ে বসেছে। তাদের ক্লাব আল হিলাল খুব করে চাইছে মেসিকে দলে টানতে। সৌদি মালিকানাধীন প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব নিউক্যাসলের এক মুখপাত্র মেসিকে নিয়ে কথা বলেছেন, জানিয়ে রেখেছেন, মেসির জন্য তাদের দুয়ার খোলা। স্প্যানিশ রেডিও ‘অন্দা চেরো’ দাবি করেছে, বার্সেলোনায় এক বছর খেলেছে শেষ পর্যন্ত সৌদি ক্লাব আল হিলালে যাবেন মেসি! শুধু মেসিই নন, তার সঙ্গে বার্সার দুই তারকা ফুটবলার সার্জিও বুসকেতস ও জর্দি আলবাও সৌদি আরবের ক্লাবটিতে যোগ দেবেন বলে দাবি করা হচ্ছে। এ খবর সত্যি হলে এত কাঠখড় পুড়িয়ে মেসিকে ফিরে পেলেও এক বছর পরই ছেড়ে দিতে হবে বার্সাকে!

সৌদি আরব সরকারই নাকি মেসিকে পেতে চায় তাদের দেশের লিগে. সেজন্য দেশটির সরকার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠিয়েছে মেসির কাছে। বছরে ৪০০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা দিয়ে মেসিকে নিজেদের দেশে নিয়ে আসতে চায় সৌদি সরকার। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে বছরে প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা দিচ্ছে আল-নাসর। মেসিকে পেতে এর চেয়ে দ্বিগুণ খরচ করতেও রাজি সৌদি সরকার।

তবে মেসি ইউরোপে থাকতে চান, সেটিও তার কাছের মানুষদের কথায় স্পষ্ট। এমনকি বার্সেলোনায় ফেরারও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পিএসজির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করলেও ইউরোপের কোনো ক্লাবেই মেসিকে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। মেসির সাবেক ক্লাব বার্সেলোনাও মনে করছে, ঘরে ফিরবেন লিও। অর্থাৎ ক্যাম্প ন্যুতে দেখা যাবে তাকে, সেটা তাদের প্রস্তাবিত কম মূল্যে! বার্সেলোনা বছরে মাত্র ১৩ মিলিয়ন ইউরো বেতনের প্রস্তাব করেছে বলে সংবাদ মাধ্যম স্পোর্ত দাবি করেছে। বোনাস ও ভাতা মিলিয়ে বছরে বেতন হতে পারে ২৫ মিলিয়ন ইউরো। মেসি পিএসজি থেকে বছরে সব মিলিয়ে বেতন পান ১০০ মিলিয়ন ইউরো। বার্সা মেসিকে তার বর্তমান বেতনের ৭৫ শতাংশ কম বেতনে পাওয়ার আশা করছে। ওই বেতনে ঘরে ফিরতে রাজি হলে তার ও রবার্ট লেভানডভস্কির বেতন হবে সমান।

পিএসজিতে মেসির বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে আগামী ৩০ জুন। এরপরই ফ্রি এজেন্ট হয়ে যাবেন। বার্সেলোনা তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে, এ খবর জানা গিয়েছে আগেই।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মিয়ামিও নাকি আগ্রহী আর্জেন্টাইন তারকার প্রতি। আর সৌদি আরবের ক্লাবের আগ্রহী হয়ে ওঠার খবর ক’দিন আগ পর্যন্তও স্রেফ গুঞ্জন বলে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে সেটি এখন আর গুঞ্জনে সীমাবদ্ধ নেই বলা চলে।