১৪ বছর পর ফাইনালে মোহামেডান

মোহামেডান ২ : ১ বসুন্ধরা কিংস

প্রকাশ : ১০ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

রেফারি ভুবন মোহন তরফদার শেষ বাঁশি বাজাতেই ডাগআউট থেকে দৌঁড়ে মাঠে ঢোকেন বেঞ্চে থাকা মোহামেডানের ফুটবলাররা, জড়িয়ে ধরেন সুলেমান দিয়াবাতেদের। উল্লাস-উচ্ছ্বাসে ভেসেছেন কোচ আলফাজ আহমেদও। এই আনন্দ ১৪ বছর পর মোহামেডানের ফেডারেশনের কাপের ফাইনালে উঠার। গতকাল গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপের প্রথম সেমিফাইনালে সাদা কালোরা ২-১ গোলে বসুন্ধরা হারায় বসুন্ধরা কিংসকে। এমানুয়েল সানডে ও সুলেমানে দিয়াবাতে তাদের জয়ের নায়ক। দোরিয়েলতন গোমেস নাসিমেন্তোর গোলে প্রথমার্ধেই সমতায় ফিরেছিল কিংস। মূলত কোচ আলফাজ আহমেদের কৌশলে ধরাশায়ী হন কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজেন। ২০১৮-১৯ মৌসুমে আবিভাবের পর এই প্রথম কোনো টুর্নামেন্টের সেরা চার থেকে ছিটকে গেল বসুন্ধরা কিংস। সবশেষ ২০০৯ সালে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উঠে আবাহনীকে টাইব্রেকারে ৪-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ১০ বারের চ্যাম্পিয়ন সাদা-কালো দলটি। স্বাধীনতা কাপে শেষবার ফাইনাল খেলেছে সাদা-কালোরা ২০১৪ সালে; সেবার ফেনী সকার ক্লাবকে টাইব্রেকারে ৬-৫ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা।

গত মার্চের শুরুতে বড্ড টালমাটাল পরিস্থিতিতে মোহামেডানের হাল ধরেন আলফাজ আহমেদ। মাস দুয়েকের মাথায় তার ধরে ২০১৪ সালের পর কোনো প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠল সাদা-কালো জার্সিধারীরা। তাও আবার ঘরোয়া ফুটবলের শক্তিশালী দল বসুন্ধরা কিংসের বাধা ডিঙিয়ে। স্বাভাবিকভাবে দারুণ তৃপ্তি অনুভব করছেন আলফাজ। ছেলেরা সামর্থ্যরে সবটুকু নিংড়ে দেয়ায় জয় এসেছে বলে মনে করেন এই সাবেক তারকা ফরোয়ার্ড। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সবশেষ তারা শিরোপার স্বাদ তারা পেয়েছিল ২০১৪ সালে, স্বাধীনতা কাপ জিতে। এরপর কোনো আসরে ফাইনাল খেলতে না পারায় মোহামেডানের সঙ্গে সেঁটে গিয়েছিল ‘ঐতিহ্যের কঙ্কাল’ শব্দযুগল। কিংসকে হারিয়ে যেন ব্যর্থতার সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিতই দিচ্ছে মোহামেডান।

ফাইনালে ওঠার পথে তৃতীয় মিনিটে এমানুয়েলের গোলে এগিয়ে যায় মোহামেডান। কিংস ঘুরে দাঁড়ালেও দ্বিতীয়ার্ধে দিয়াবাতের লক্ষ্যভেদে জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে তারা। ম্যাচ শেষে কোচ আলফাজ জানালেন রক্ষণাত্মক ও প্রতি-আক্রমণ নির্ভর খেলার ছক পুরোপুরি বাস্তবায়নের তুষ্টির কথা, ‘অনেক দিন টিমের সাথেই ছিলাম, কিন্তু (শফিকুল ইসলাম মানিকের বিদায়ের পর) মাঝপথে এসে দলের হাল ধরেছি। ওই সময় থেকে দলকে পথে ফেরানোর চেষ্টা করেছি। খেলোয়াড়রা সবাই কমিটেড ছিল। সবাই জান-প্রাণ দিয়ে খেলেছে; এই সাফল্য ওদের প্রচেষ্টার ফল। খেলোয়াড়দেরকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তারা প্রত্যেকে নিজেদের দায়িত্বটুকু শতভাগ পূরণ করেছে। অনেক বেশি এফোর্ট দিয়ে খেলেছে, এবং ছেলেরা পরিকল্পনা থেকে বের হয়নি। পরিশ্রম করেছে, আল্লাহ পরিশ্রমের ফল দিয়েছে।’

দোরিয়েলতন গোমেস নাসিমেন্তোর গোলে প্রথমার্ধেই সমতায় ফিরেছিল কিংস। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে তাদের আটকে রেখে লক্ষ্যপূরণের আনন্দে মাতে মোহামেডান। আলফাজের মনে হচ্ছে মনোযোগ ধরে রাখার ফলে সম্ভব হয়েছে সবকিছু, ‘গোল যেকোনো সময়ই আসতে পারে, ফুটবল ৯০ মিনিটের খেলা। তাই ওরা সমতা ফেরালেও আমরা খেই হারায়নি। ছেলেরা সবসময় সিরিয়াস ছিল; মনোযোগ ধরে রেখেছিল। এ কারণেই জিততে পেরেছি।’

দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ১৬ মে কুমিল্লার স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে রেকর্ড ১২ বারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। এ ম্যাচের জয়ীর দলের বিপক্ষে ৩০ মে শিরোপা লড়াইয়ে নামবে মোহামেডান। আলফাজ জানালেন যে কোনো প্রতিপক্ষের জন্য প্রস্তুত তিনি, ‘ফেডারেশনের কাপের ফাইনালে ওঠা আমার হাত ধরে হয়েছে বলব না। তবে এটা কোচ, খেলোয়াড়, অফিসিয়াল সবার প্রচেষ্টার ফল। এখন সামনে আমাদের ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী কিংবা শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র যেই হোক, আমরা শিরোপার জন্য লড়ব।’