ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাকিস্তানের আবদার

পাকিস্তানের আবদার

এশিয়া কাপ ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থানে রাজনৈতিক ও ক্রিকেটীয় ‘চিরশত্রু’ ভারত ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া কাপে ভারত অংশগ্রহণ করবে না, তারা নিরপেক্ষ ভেন্যুতে টুর্নামেন্ট চায়। অন্যদিকে পিসিবিও হুমকি দিয়েছে যে, ভারত যদি পাকিস্তানে গিয়ে এশিয়া কাপ না খেলে, তারাও ভারতে গিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলবে না! এবার তো পিসিবি প্রধান নাজাম শেঠি তাদের অবস্থান আরও সুস্পষ্ট করলেন। তার বক্তব্য হলো, পাকিস্তান দল ভারতের মাটিতে যাবে না। তারা নিজেদের ম্যাচগুলো খেলবে বাংলাদেশ অথবা আরব আমিরাতে। এশিয়া কাপ আয়োজন নিয়ে জটিলতার সবশেষ অবস্থা ও পিসিবির পরিকল্পনা নিয়ে নাজাম শেঠি বিস্তারিত জানান বিবিসির পডকাস্ট ‘স্টাম্পড’-এ।

‘হাইব্রিড’ এশিয়া কাপের আগের প্রস্তাবনায় পিসিবি বলেছিল, শুধু ভারতের ম্যাচগুলি ও ভারত ফাইনালে উঠলে সেই ম্যাচ হবে পাকিস্তানের বাইরে। তবে ইএসপিএনক্রিকইনফোর খবর, ‘অপারেশনাল ও লজিস্টিকাল’ কারণে এই পরিকল্পনায় আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। গত মঙ্গলবার দুবাইয়ে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভায় তাই নতুন প্রস্তাব দিয়েছে পিসিবি। সেখানে তারা বলেছে, ভারত ছাড়া অন্য দলের বিপক্ষে পাকিস্তানের ম্যাচগুলো তারা খেলতে চান নিজেদের মাঠে। অর্থাৎ, পাকিস্তানের চার ম্যাচ টানা হয়ে যাবে পাকিস্তানে। এরপর গোটা টুর্নামেন্ট চলে যাবে আরব আমিরাত বা শ্রীলঙ্কায়। ফাইনালসহ ১৩ ম্যাচের আসরে বাকিগুলো হবে সেখানেই। আগের হাইব্রিড মডেলে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বোর্ড আপত্তি জানানোয় অবাক হয়েছেন বলে জানান নাজাম শেঠি। নতুন প্রস্তাবিত কাঠামোয় তারও আপত্তি থাকার কথা নয় বলেও বিশ্বাস তার। এশিয়া কাপের প্রায় ৮০ শতাংশ রাজস্ব আসে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচগুলো থেকে। সূচি এমনভাবে করা হয়েছে যেন অন্তত দুটি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ পাই, দুই দলই ফাইনালে গেলে হবে তিনটি। বাংলাদেশের একমাত্র আপত্তি ছিল সেপ্টেম্বরে আরব আমিরাতে অনেক গরম থাকে, আরেকটি সমস্যা ছিল লজিস্টিকসের। এখন যে পরিকল্পনা নিয়েছি, তাতে সব লজিস্টিকাল সমস্যার সমাধান হওয়ার কথা।’

এশিয়া কাপ হওয়ার কথা আগামী সেপ্টেম্বরে। গত বছর এই সময়েই আরব আমিরাতে এশিয়া কাপ হয়েছে। এমনকি ২০১৮ সালে ওয়ানডে সংস্করণের এশিয়া কাপও এই সময়ই হয়েছে, সেটিও মনে করিয়ে দেন নাজাম শেঠি।

পিসিবির নতুন পরিকল্পনা ও কাঠামোর বিস্তারিত এখানে জানান পিসিবির সভাপতি, ‘তিন দিন আগে আমি যে প্রস্তাবনা দিয়েছি, তাতে সব সমস্যার সমাধান আছে। আমরা চারটি ম্যাচ খেলব পাকিস্তানে, দলগুলি সরাসরি সেখানে যাবে। এরপর আমরা নিরপেক্ষ কোনো ভেন্যুতে যাব, তা সেটা যেখানেই হোক। বাকি ম্যাচগুলো সেখানেই হবে। এমনকি এই ছাড় দিয়েছি যে, ফাইনাল ম্যাচও নিরপেক্ষ ভেন্যুতেই হবে, তা সেটা ভারতের বিপক্ষে হোক বা অন্য যে কোনো দলের বিপক্ষে। সব সমস্যা সমাধানের জন্যই আগের অবস্থান থেকে যতটা সম্ভব পিছু হটেছি আমরা।’

ভারত যদি শেষ পর্যন্ত নতুন এই প্রস্তাবেও রাজি না হয়, তাহলে বিশ্বকাপের জন্য হুমকি দিয়ে রাখলেন পিসিবি প্রধান, ‘পাকিস্তানের সরকার, সংবাদমাধ্যম এবং পাকিস্তানের জনগণ আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা হলো একটি সম্মানজনক ও পারস্পরিক সমাধান করা। আমরা খুশিমনেই এশিয়া কাপ খেলব (নতুন প্রস্তাব মেনে নিলে)। কিন্তু ভারত তাদের ম্যাচগুলি খেলতে পাকিস্তানে আসবে না, নিরপক্ষে ভেন্যুতেও কিছু ম্যাচ আয়োজন করতে দেবে না, এমনটি তো হতে পারে না। ভুলে গেলে চলবে না, এশিয়া কাপের পরপরই বিশ্বকাপ আসছে, তা হবে ভারতে এবং সেটি একটি আইসিসি ইভেন্ট। ভারত যদি পাকিস্তানে না আসে এবং আমার হাইব্রিড মডেলও বাতিল করে দেয়, তাহলে কি হবে? আমার মনে হয় না, আমাদের সরকার ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার অনুমতি আমাদের দেবে।’ নাজাম শেঠির মতে, সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। প্রস্তুতির জন্য অন্তত তিন মাস সময় প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত বা শ্রীলঙ্কা বা যেখানেই হোক, ভেন্যু দ্রুত রিজার্ভ করতে হবে আমাদের। সময় এর মধ্যেই অনেক চলে গেছে। এসিসিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের অবস্থান আমরা পরিষ্কার করে দিয়েছি। এসিসির উচ্চপদস্থ একজনের সঙ্গে দুবাইয়ে সভা হয়েছে আমার। তিনি এটা পছন্দ করেছেন এবং বলেছেন যে, এটা দারুণভাবে কার্যকর হতে পারে। তিনি বলেছেন যে জয় শাহর (বিসিসিআই সচিব ও এসিসির সভাপতি) সঙ্গে এটা নিয়ে কথা বলবেন। প্রথম সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে আমাদের (হাইব্রিড মডেল মেনে নেয়া) এরপর আমরা একসঙ্গে বসে ঠিক করতে পারি, কোথায় খেলা হবে (নিরপক্ষে ভেন্যু)। আমরা ন্যায়সঙ্গতই থাকব। উচ্চপদস্থ এই কর্মকর্তা বলেছেন যে, তিনি আমাদের সভার ব্যাপারটি নিয়ে জয় শাহর সঙ্গে কথা বলেছেন। এখন তিনি শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলে দেখতে চান কোনদিকে এগোয়।’

শেষ পর্যন্ত জয় শাহ বা ভারতীয় বোর্ড নতুন এই প্রস্তাবে রাজি হলে বিশ্বকাপেও এই হাইব্রিড পদ্ধতি কাজে লাগাতে চায় পিসিবি। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান বিশ্বকাপে তাদের প্রাথমিক পর্বের ম্যাচগুলি খেলবে ভারতের বাইরে। পাশাপাশি পুরোনো প্রশ্নও আবার নতুন করে তোলেন নাজাম শেঠি, ‘যদি হাইব্রিড মডেল এখানে কার্যকর হয়, তাহলে বিশ্বকাপেও আমরা এটা কাজে লাগাতে চাই। এর মানে, পাকিস্তানের ম্যাচগুলো হতে পারে বাংলাদেশে বা সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ছোট্ট একটি পদক্ষেপেই সব সমাধান হতে পারে। বাকিসব ম্যাচ ভারতে হবে। ভারত কেন পাকিস্তানে এসে খেলতে পারবে না? ভারত যদি পাকিস্তানে এসে খেলে, তাহলে আমরাও সেখানে গিয়ে খেলতে পারি এবং সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত