সেট হতেই ফেরার তাড়া
প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
স্পোর্টস রিপোর্টার
বৃষ্টির কারণে ৪৫ ওভারে নেমে আসা দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশ রেকর্ড ৩১৯ রান তাড়া করে জিতেছে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে গতকাল রোববার একই মাঠে ব্যাটাররা সেট হয়ে আউট হওয়ায় বড় রান হলো না সিরিজ জয়ের আশা নিয়ে নামা বাংলাদেশ দলের।
ম্যাকব্রিনকে স্লগ সুইপ করতে চেয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। মিস টাইমিং। ব্যাট ফাঁকি দিয়ে বল লাগে প্যাডে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। মুশফিক রিভিউ নিলেও আম্পায়ার্স কল হওয়াতে আউটের সিদ্ধান্তই বহাল থাকে। মুশফিকের এই আউটের পর বাংলাদেশ মাত্র ১৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে অলআউট হয়। অথচ ফিফটি করা তামিম ইকবাল ফেরার পর মেহেদি হাসান মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে দারুণভাবে এগোচ্ছিলেন মুশফিক। দুজনে ৭২ বলে যোগ করেন ৭৬ রান। ৫৪ বলে ৪৫ রান করে মুশফিক আউট হতেই ছন্দপতন ঘটে। তার আউটের পর মাত্র ১৩ রান করতে পারে বাংলাদেশ। ৪৮.৫ ওভারে ২৭৪ রানে অলআউট হয় লাল সবুজের দল।
ছন্দ খুঁজে ফেরা অধিনায়ক তামিম ইকবাল শুরুতে জীবন পেলেও ক্রিজ আঁকড়ে চালালেন লড়াই। খুব একটা সাবলীল না খেলেও পেলেন ফিফটি। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসেন শান্ত দ্যুতি ছড়িয়ে এবার ইনিংস বড় করতে পারলেন না, মিডল অর্ডারে নেমে স্বচ্ছন্দে ব্যাট করেও লিটন দাস থামলেন অসময়ে। শেষ দিকে মুশফিকুর রহিম আর মেহেদী হাসান মিরাজের কার্যকর অবদান ছিল, তারাও শেষ পর্যন্ত না থাকায় ৩০০’র আগে থামল বাংলাদেশ।
আগের ম্যাচ যে উইকেটে হয়েছিল, একই উইকেটে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ভোগান্তিতে পড়ে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের চোটে অভিষেক করানো হয় রনি তালুকদারকে। তিনি ওপেনার হওয়ায় মিডল অর্ডারে লিটনকে পাঠিয়ে তাকে নামানো হয় তামিমের সঙ্গী হিসেবে। এই কৌশল কাজে দেয়নি। অভিষিক্ত রনি শুরু থেকে কিছুটা স্নায়ুচাপে ভুগছিলেন। মুভমেন্টের বিপক্ষে ব্যাট চালিয়ে রানের খাতা খুলতে দেরি হচ্ছিল তার। মুখোমুখি ১৩তম বলে মার্ক অ্যাডায়ারকে কাভার দিয়ে উড়িয়ে পান বাউন্ডারি। ওয়ানডেতে রানের খাতা খুলেই থেমেছেন তিনি। পরের বলের মুভমেন্ট না বুঝে এগিয়ে এসে উড়াতে গিয়ে ধরা দেন কিপারের গ্লাভসে।
লম্বা সময় ধরে ওয়ানডেতে রান পাচ্ছিলেন না তামিম। এবারও তিনি থামতে পারতেন শুরুতেই। ১ রানে জস লিটলের বলে সিøপে তার সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নি। জীবন পেয়ে পরের বলেই বাউন্ডারি মারেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তিনে নামা শান্ত এদিনও ছিলেন চনমনে। এক পাশে তামিমের ভোগান্তির মাঝে স্ট্রাইক নিয়ে দলের রান বাড়ানোর দায়িত্ব সামলান। দ্রুতই থিতু হয়ে আভাস দিচ্ছিলেন আরেকটি বড় ইনিংসের। কিন্তু ক্রেইগ ইয়ংয়ের বলে আউট সাইড এজড হয়ে তার ক্যাচ যায় সিøপে। এবার বা দিকে ঝাঁপিয়ে তুলনামূলক কঠিন ক্যাচ হাতে জমান বালবার্নি। ৩২ বলে ৩৫ করে থামেন শান্ত।
সাকিব না থাকায় ওপেনিং ছেড়ে ৪ নম্বরে নামার দায়িত্ব নিতে হয় লিটনকে। নতুন ভূমিকাতেও তাকে দেখা যায় সাবলীল। দ্রুতই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে থিতু হয়ে যান তিনি। ট্রেড মার্কে শটে আদায় করে নেন বাউন্ডারি। তবে ঝলমলে ইনিংসটা পূর্ণতা দিতে পারেননি লিটন। ৩ চার, ১ ছক্কায় থামেন ৩৫ রান করে।
আগের ম্যাচের হিরোদের একজন তাওহিদ হৃদয় এবার পাননি তাল। ১৬ বলে ১৩ রান করে স্কয়ার কাটের চেষ্টায় ডকরেলের বাঁহাতি স্পিনে বোল্ড হয়ে যান এই ডানহাতি। তামিম এক পাশে টিকে থাকলেও মোটেও সাবলীল ছিলেন না। ধুঁকতে ধুঁকতে শম্ভুক গতিতে এগুতে থাকেন তিনি। ৬১ বলে বাউন্ডারির মাধ্যমে ৯ ইনিংস পর ওয়ানডেতে পান ফিফটি। ফিফটির পর কিছুটা ডানা মেলার চেষ্টা করলেও মনমতো খেলতে পারছিলেন না। ডকরেলের বলে এগিয়ে এসে যেভাবে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন, তাতে স্পষ্ট বোঝা গেছে তার ক্রিজে থাকার অস্বস্তি। ৮২ বলে ৬৯ আসে তার ব্যাটে।
১৮৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে একটু নড়ে উঠলেও পরিস্থিতি সামাল দেন মুশফিক-মিরাজ। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনের জুটিতে আসে ৭২ বলে মোড় ঘোরানো ৭৫ রান। ছয় নম্বরে নেমে ফিনিশিংয়ের দায়িত্বটা এদিনও পালন করছিলেন তিনি। তবে দলের চাপে সেভাবে ঝড় তোলা হয়নি। মুশফিক ফেরেন ৫৪ বলে ৪৫ রান করে। খানিক পর ৩৯ বলে ৩৭ করে থামেন মিরাজও। অভিষিক্ত মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী টেল এন্ডারদের নিয়ে আর খুব বেশি রান যোগ করতে পারেননি। বাংলাদেশের ইনিংস মুড়ে দিয়ে ৪০ রানে ৪ উইকেট নেন পেসার মার্ক অ্যাডায়ার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৪৮.৫ ওভারে ২৭৪/১০ (হাসান মাহমুদ ১, মোস্তাফিজুর রহমান ০, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ৮, মেহেদী হাসান মিরাজ ৩৭, মুশফিকুর রহিম ৪৫, তামিম ইকবাল ৬৯, তাওহীদ হৃদয় ১৩, লিটন দাস ৩৫, নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৫, রনি তালুকদার ৪)।