ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাসেলকে হারালেই ইতিহাসে কিংস

রাসেলকে হারালেই ইতিহাসে কিংস

ইতিহাস থেকে মাত্র ১ পয়েন্ট দূরে বসুন্ধরা কিংস। ২৬ মে ঘরের মাঠ কিংস অ্যারেনায় পরের ম্যাচে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রকে হারালে ৬৭ বছরের রেকর্ডে ভাগ বসাবে প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন কিংস। ১৯৫৩, ১৯৫৪, ১৯৫৫ ও ১৯৫৬ সালে ঢাকা লিগে টানা চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব। আবাহনী (২ বার) ও মোহামেডান হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হলেও কখনো চারবার শিরোপা জিততে পারেনি। গেল মৌসুমে দুই প্রধানের সমকক্ষতা অর্জন করেছে কিংস, এবার তাদের টপকে যাওয়ার বড় সুযোগ।

সেই পথেই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে অস্কার ব্রুজনের দল। প্রিমিয়ার লিগে গতকাল ২-০ গোলে চট্টগ্রাম আবাহনীকে হারিয়ে শিরোপার দুয়ারে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা কিংস। জিতেছে দ্বিতীয় স্থানে থাকা আবাহনীও। পেশাদার লিগের সবচেয়ে সফল দলটি ৩-১ গোলে জিতেছে শেখ রাসেলের বিপক্ষে। দুই দল জেতায় পয়েন্ট ব্যবধান ১০। শিরোপার একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়া কিংসের পয়েন্ট ১৬ ম্যাচে ৪৩, সমান ম্যাচে আবাহনীর ৩৩। দু’দলেরই ম্যাচ বাকি চারটি করে। কিংস পরবর্তী ম্যাচে শেখ রাসেলকে হারালে তাদের পয়েন্ট হবে ৪৬। তখন আবাহনী বাকি চার ম্যাচ জিতলেও কিংস চ্যাম্পিয়ন। তবে শেখ রাসেলের সাথে ড্র করলে বা হারলেও পরের রাউন্ডেই শিরোপা উদযাপনের সুযোগ থাকবে কিংসের। সেক্ষেত্রে কিংসকে তাকিয়ে থাকতে হবে আবাহনীর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানের দিকে। আবাহনী-মোহামেডান ও রাসেল-কিংস উভয় ম্যাচ ড্র হলে কিংস চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে। কিংবা মোহামেডান ও শেখ রাসেল জিতলে হেরেও চ্যাম্পিয়ন হবে কিংস।

কিংসের ঘরের মাঠে শুরু থেকে দারুণ লড়াই করছিল চট্টগ্রাম আবাহনী। ১৬ মিনিটেই দশ জনের দলে পরিণত হয়। দলটির পোস্টের নিচে ম্যাচজুড়ে দারুণ সব সেভ করলেন মোহাম্মদ নাঈম। কিন্তু কিংসকে আটকানোর জন্য তা যথেষ্ট হলো না। ১৬ মিনিটে দরিয়েলতন গোমেস নাসিমেন্তোকে বক্সে ফাউল করে বসেন গোলরক্ষক নাঈম। স্পট কিক থেকে মিগেল ফিগেইরা এগিয়ে নেন কিংসকে। দামাশেনোর পাস দোরিয়েলতন রিসিভ করার সময় বলে স্পর্শ জোরে হয়ে যায়। নাঈম ফাউল না করলে বল বেরিয়ে যেতে পারত বাইরে দিয়ে। এই গোলের ধাক্কার পরই দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন চট্টগ্রাম আবাহনীর ডিফেন্ডার ফরহাদ মনা। পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়ে রেফারির সঙ্গে বাহাসে জড়িয়ে প্রথম হলুদ কার্ড দেখেও সতর্ক হননি তিনি, বাহাস অব্যাহত রেখে পান দ্বিতীয় হলুদ কার্ড। পিছিয়ে পড়া চট্টগ্রাম আবাহনীর পোস্ট বিরতির আগ পর্যন্ত আগলে রেখে ব্যবধান দ্বিগুণ হতে দেননি গোলরক্ষক নাঈম। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ব্যবধান দ্বিগুণ করা গোলের দেখা পেয়ে যায় কিংস। রবিনিয়োর কর্নার ক্লিয়ার করতে পারেননি ডিফেন্ডাররা। রাকিব হোসেনের ফ্লিকের পর দূরের পোস্টে থাকা দোরিয়েলতন সুযোগ কাজে লাগান অনায়াসে। আগে থেকেই লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন দোরিয়েলতন। ব্রাজিলিয়ান এই ফরোয়ার্ডের গোল সংখ্যা দাঁড়াল ১৪টি।

ম্যাচটা ‘শেষ’ হয়ে যেতে পারত ৬১ মিনিটেই। কিন্তু রবসন দি সিলভা রবিনিয়োর স্পট কিক নিজের ডান দিকে ঝাঁপিয়ে আটকান নাঈম। রবিনিয়োকে বক্সে দুখু মিয়া ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি। ম্যাচ জুড়ে একের পর এক সেভ করেও নাঈম মাঠ ছেড়েছেন হারের বিষাদ নিয়ে।

দিন তিনেক আগে ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে ৩-০ গোলে শেখ রাসেলকে হারিয়েছিল আবাহনী। কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে গতকাল তারা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে হারিয়েছে ৩-১ গোলে। আবাহনীর তিন গোলই দিয়েছেন দুই বিদেশি ফুটবলার। একটি করে গোল করেছেন কোস্টারিকান ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস ও নাইজেরিয়ান এমানুয়েল।

ষষ্ঠ মিনিটেই গোল পেয়ে যায় আবাহনী। মাঝমাঠের একটু উপর থেকে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের বাড়ানো পাস ধরে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে কলিনদ্রেস জোরাল শটে লক্ষ্যভেদ করেন। ৩২ মিনিটে নিজেদের বক্সের সামনে বল হারায় শেখ রাসেল। পিটার এনওরাহর সঙ্গে বল দেয়া-নেয়া করে নিচু শটে জাল খুঁজে নেন নাইজেরিয়ার ফরোয়ার্ড এমেকা ওগবাহ। আবাহনীর বিপক্ষে ফেডারেশন কাপের সেমি-ফাইনালের মতো এ ম্যাচেও বিবর্ণ ছিল শেখ রাসেলের পারফরম্যান্স, ৭৬ মিনিটে আবার গোল হজম করে। বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে নিখুঁত শটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন এমেকা। ৮৫ মিনিটে দীপক রায় জালের দেখা পান, কিন্তু তা কেবল শেখ রাসেলের হারের ব্যবধানই কমিয়েছে।

মোহামেডানকে অবশ্য জিততে অনেক ভুগতে হয়েছে। গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে ১-০ গোলে হারায় সাদা-কালো জার্সিধারীরা। ফেডারেশন কাপের সেমি-ফাইনালে কিংসকে ২-১ গোলে হারানোর আত্মবিশ্বাসের স্ফুরণ ঠিক ফুটে ওঠেনি মোহামেডানের খেলায়। প্রথমার্ধে তারা পারেনি শেখ জামালের রক্ষণে ভীতি ছড়াতে। দীর্ঘ অপেক্ষার ৫২ মিনিটে জালের দেখা পায় মোহামেডান। মোজাফ্ফর মোজাফ্ফরভের জোরাল ফ্রি কিক গোলরক্ষক ফিস্ট করে ফেরালেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি। ছুটে গিয়ে ফিরতি শটে জাল খুঁজে নেন সাজ্জাদ হোসেন। বাকিটা সময় এই গোল আগলে রেখে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আলফাজ আহমেদের দল। কষ্টের জয়ে ১৫ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলে তিনে উঠে এলো মোহামেডান। সমান পয়েন্ট নিয়ে গোল পার্থক্যে চতুর্থ স্থানে শেখ রাসেল। ১৬ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে শেখ জামাল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত