ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ধোনির পথে হাঁটবে বিসিবি!

ধোনির পথে হাঁটবে বিসিবি!

ভারতীয় ক্রিকেটের বর্তমান এই সর্বগ্রাসী রূপের পেছনের রূপকার কে? অনেকে সৌরভ গাঙ্গুলীর নাম বললেও মহারাজা নিজে বলেন, মহেন্দ্র সিং ধোনির কথা। মানুষটা অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন সবগুলো আইসিসি টুর্নামেন্টের শিরোপা। শুধু তা-ই নয়, তার হাত ধরেই শুরু হয় আজকের অজেয় ভারতের পথচলা। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ায় জয়ের দেখা না পেলেও কোহলির জন্য ফিল্ড প্রস্তুত করে গিয়েছেলিন ধোনি।

মহেন্দ্র সিং ধোনির দেখানো পথে হাঁটতে চাইছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ওয়ানডে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্তিতে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে ক্রিকেটারদের ফিল্ডিং অ্যাবিলিটি। ব্যাটিং-বোলিং ভালো করলেও ফিল্ডিং এবং ফিটনেসে সমস্যা থাকলে সে ক্রিকেটারকে নিয়ে আগ্রহী নয় বিসিবি। যে কারণে প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ছেঁটে ফেলতেও পিছপা হবে না বলেই জানালেন নাজমুল হাসান পাপন।

কিন্তু পথটা কি খুব সহজ ছিল? তা কিন্তু নয়। ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের পর, যখন পুরো ভারত শচীন-শেবাগ-গম্ভীরদের বন্দনায় মত্ত, ঠিক তখনই সমস্ত আবেগকে অনেকটা ছুড়ে ফেলে দেন মাহি। ২০১২ অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে হঠাৎই সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন, শচীন-শেবাগ-গম্ভীরকে একসঙ্গে স্কোয়াডে রাখতে চান না তিনি। চারদিক থেকে শুরু হয় সমালোচনা। ধোনির অধিনায়কত্ব, ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় ভারতীয় গণমাধ্যমে।

কিন্তু কোনো কিছুতে টলানো যায়নি ধোনিকে। ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যতের প্রশ্নে, সেদিন কোনো আপোষ করেননি মাহি। সাফ জানিয়েছিলেন, তাদের বয়স হয়েছে। মাঠে তাদের রিফ্লেক্স কমেছে, যার প্রভাব পড়ছে ফিল্ডিংয়ে। আর মডার্ন ডে ক্রিকেটে, কোনো অবস্থায়ই এটাকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন তিনি।

সেদিন যদি ধোনির কথা না মেনে নিতো বিসিসিআই, তাহলে কি আজকের ভারত হতো? হয়তো হতো, তবে এতটা দ্রুত নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আলোচনায় ধোনির প্রশংসা করার মূল কারণটাই হচ্ছে, এই ফিল্ডিং ইস্যু। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেটারদের ফিটনেস এবং ফিল্ডিং অ্যাবিলিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিসিবির ভেতর এবং বাইরে। কিন্তু, বেড়ালের গলায় ঘন্টাটা বাঁধবে কে? সাকিব আল হাসান, ২০১৯ বিশ্বকাপে ফিটনেসের কারণে একজন ক্রিকেটারকে একাদশে রাখতে মানা করেছিলেন বলে, সেদিনের অধিনায়কের রোষানলে পড়েছিলেন। কিন্তু, সাকিব যে সেদিন ঠিক ছিলেন তা তো অন্তত আজ বোঝা যাচ্ছে?

চার বছর পর আরেকটা বিশ্বকাপ যখন দুয়ারে কড়া নাড়ছে, আবারও স্কোয়াড গঠন নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে অংশ নিয়েছেন দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক নাজমুল হাসান পাপনও। শুরুতে সাংবাদিকদের নিয়ে কিছুটা টিপ্পনী কাটলেও তার কথাতেই পরিষ্কার, এবার ভিন্নভাবে ভাবছে বাংলাদেশ।

মূলত ধোনির দেখানো পথেই হাঁটার পরিকল্পনা এঁটেছেন হাথুরু এবং তার বাহিনী। অভিজ্ঞতাকে মূল্য দিলেও, ফিটনেস এবং ক্রিকেটারদের ফিল্ডিং অ্যাবিলিটি প্রাধান্য পাবে সবার ওপরে। আর সে ক্ষেত্রে যদি কাউকে বাদ দিতে হয়, সেখানে কোনো বিকল্প পথে হাঁটবে না ক্রিকেট বোর্ড। আর লঙ্কান বস যখন একবার মনস্থির করেছেন, তখন সেখানে যে পাপনরা বাগড়া দেবেন না সেটা তো জানা কথাই। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে পাপন বলেন, ‘১৫ জনের দল কিংবা সেরা একাদশ নিয়ে আমি কিছু জানি না। অপশন যদি বেশি থাকে তাহলে কেউ খেলবে, কেউ খেলবে না। ইচ্ছে করলে ১২-১৩ জনকে তো খেলাতে পারব না। ১১ জনকেই খেলতে হবে। ব্যাটিং বিবেচনায় আফিফ, মাহমুদউল্লাহ দুজনকেই খেলানো যেতে পারে। আমি অভিজ্ঞ না, তবে মনে করি, যে কাউকে খেলানো যাবে। যদি অলরাউন্ডার চাই, আফিফ ও মোসাদ্দেক আছে এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। সেও বল করে দিতে পারবে। রিয়াদ ভালো বল করে, আমি দেখেছি, ঘরোয়া ক্রিকেটেও ও ভালো। পার্থক্যটা ফিল্ডিংয়ে। আপনি যদি বিশ্বকাপে ভালো ফিল্ডিংও চান, তাহলে আফিফ অনেক ওপরে। মোসাদ্দেকও রিয়াদের চেয়ে অনেক ভালো হতে পারে।’

ভারত সেদিন শচীন-শেবাগের মতো ক্রিকেটারকে বিদায় বলে দেয়ার কারণেই, আজকের চেহারা পেয়েছে। বাংলাদেশেরও প্রয়োজন এরকমই এক নতুন শুরুর। যেখানে থাকবে না আর কোনো পা-ব কাহিনী। নামের ভারে নয়, দলের জন্য অপরিহার্যরাই সুযোগ পাবে একাদশে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত