ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বৈষম্য বাড়াচ্ছে আইসিসি হোঁচট সম্প্রসারণে

বৈষম্য বাড়াচ্ছে আইসিসি হোঁচট সম্প্রসারণে

আইসিসির প্রস্তাবিত পরবর্তী রাজস্ব-বন্টন মডেল নিয়ে এরই মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড-পিসিবি। অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে স্বল্পোন্নত ক্রিকেটীয় দেশগুলির মধ্যেও। আইসিসির অনেক সহযোগী দেশের আশঙ্কা, প্রস্তাবিত এই কাঠামো অনুমোদন পেলে ক্রিকেটের প্রসার থমকে যেতে পারে। ২০২৪ থেকে ২০২৭ চক্রের জন্য এই কাঠামো তৈরি করেছে আইসিসি। আগামী জুলাইয়ে ডারবানে আইসিসির বোর্ড সভায় এটি অনুমোদন পেতে পারে। এই মাসের শুরুর দিকে ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, প্রস্তাবনা অনুযায়ী সামনের চার বছরে আইসিসির সম্ভাব্য আয় প্রতি বছর ৬০ কোটি মার্কিন ডলার। সেখান থেকে ভারতীয় বোর্ড একাই পাবে প্রতি বছরে ২৩ কোটি মার্কিন ডলার, যা মোট আয়ের প্রায় ৩৮.৫ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইংল্যান্ডের। তবে ভারতের চেয়ে তারা যোজন যোজন পিছিয়ে। ইংল্যান্ডের বোর্ড পাবে প্রতি বছর ৪ কোটি ১৩ লাখ ডলারের একটু বেশি। যা আইসিসির আয়ের ৬.৮৯ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়া পাবে মোট আয়ের ৬.২৫ শতাংশ, অর্থের অঙ্কে যা ৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের চেয়ে বেশি। পাকিস্তান পাবে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের একটু বেশি, শতকরা হারে ৫.৭৫ শতাংশ। পূর্ণ সদস্য বাকি ৮ দেশের আয় হবে ৫ শতাংশের নিচে। বাংলাদেশ পাবে ২ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের একটু বেশি, মোট আয়ের যা ৪.৪৬ শতাংশ। সবচেয়ে কম ১ কোটি ৬৮ লাখ ডলার আয় হবে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের। আইসিসির পূর্ণ সদস্য ১২ দেশ সম্মিলিতভাবে পাবে মোট আয়ের ৮৮.৮১ শতাংশ। বাকিটা ভাগ করে দেয়া হবে ৯৪টি সহযোগী দেশের মধ্যে। আইসিসি এসব পরিসংখ্যান নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। যদিও সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক ওয়াসিম খান সোমবার বলেছেন, প্রস্তাবিত নতুন কাঠামোয় সকল সদস্য দেশ অতীতের তুলনায় বেশি অর্থ পাবে।

পাকিস্তান ইতোমধ্যেই এই কাঠামোর বর্তমান রূপ নিয়ে তাদের বিরোধিতা স্পষ্ট করেছে। সহযোগী দেশগুলির মধ্যেও প্রশ্ন উঠেছে। আইসিসি প্রধান নির্বাহী কমিটির তিন সহযোগী সদস্য প্রতিনিধির একজন সুমোদ দামোদর মঙ্গলবার রয়টার্সকে বলেন, প্রস্তাবিত এই কাঠামো সহযোগী দেশগুলির চাহিদা পূরণ করবে না, ‘প্রস্তাবিত মডেলটি যদি অনুমোদন পায় তাহলে একজন সহযোগী সদস্য প্রতিনিধি হিসেবে আমি হতাশ হব। সহযোগী সদস্যদের জন্য এটি অপর্যাপ্ত হওয়ার অসংখ্য বাস্তবিক কারণ রয়েছে।’

ক্রিকইনফো এর আগে জানিয়েছিল, আগামী চার বছরে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ পেতে যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী ভারত যা পাবে, তার ধারেকাছেও নেই অন্য কেউ। আইসিসির ১২টি পূর্ণ সদস্য দেশ প্রস্তাবিত এই চক্রে সংস্থাটির মোট আয়ের ৮৮ দশমিক ৮১ শতাংশ পাবে। বাকি অংশ ভাগ করা হবে ৯৪টি সহযোগী দেশের মধ্যে।

আইসিসির মহাব্যবস্থাপক ওয়াসিম খান গত সোমবার দাবি করেন, প্রস্তাবিত এই মডেল অনুযায়ী সব সদস্য দেশ আগের চেয়ে বেশি আয়ের ভাগ পাবে। যদিও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) আগেই এই কাঠামোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং ক্রিকেটে তুলনামূলক কম উন্নতি করা দেশগুলোর বোর্ডগুলোয় এ নিয়ে অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠছে।

টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ের ৪৯তম বতসোয়ানা ক্রিকেট বোর্ডের সহসভাপতি সুমোদ দামোদার আইসিসির প্রধান নির্বাহী কমিটিতে সহযোগী দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব করছেন। সহযোগী দেশগুলোর যে তিনজন এই কমিটিতে আছেন, দামোদার তাঁদের একজন। তাঁর দাবি, আইসিসি আয়ের ভাগ বণ্টন করার যে মডেল প্রস্তাব করেছে, তাতে সহযোগী দেশগুলোর প্রয়োজন মিটবে না। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দামোদার বলেছেন, ‘যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা কার্যকর হলে সহযোগী সদস্যদের প্রতিনিধি হিসেবে আমি হতাশ হব। সহযোগী দেশগুলোর জন্য এটি (টাকার অঙ্ক) কেন অপর্যাপ্ত, তার অনেক বাস্তবসম্মত কারণ আছে।’ দামোদার জানিয়েছেন, যেসব সহযোগী সদস্য দেশ ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেয়েছে, তাদের হাই-পারফরম্যান্স প্রোগ্রাম ঠিকমতো চালাতে আরও টাকার প্রয়োজন। ছেলেদের ক্রিকেটে নেপাল এবং মেয়েদের ক্রিকেটে থাইল্যান্ডের উঠে আসার উদাহরণ দিয়ে দামোদার দাবি করেন, প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা পেলে আরও বেশিসংখ্যক দেশ ক্রিকেটে উঠে আসবে।

টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ের ৪৩তম দেশ ভানুয়াতু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী টিম কাটলারের দাবি, প্রস্তাবিত এই মডেল বৈষম্য তৈরি করবে। ক্রিকেটের পরাশক্তি ও ছোট দলগুলোর মধ্যে বৈষম্যটা তৈরি হবে বলে মনে করেন কাটলার, ‘নতুন এই মডেলে বড় দলগুলোর সুবিধা বেশি। তাই প্রস্তাবিত এই মডেল কার্যকর হলে বৈষম্য আরও বাড়বে, খেলাটির ভবিষ্যৎও আরও ঝুঁকিতে পড়বে।’

আইসিসির বোর্ডে মোট ১৭ ভোটের মধ্যে ১২টি ভোট পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর। সহযোগী দেশগুলোর এই দুশ্চিন্তার বিষয়ে আইসিসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সংস্থাটির কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আইসিসির সাবেক সভাপতি এহসান মানি ভারতের ওপর অতিনির্ভরতাকে দুষেছেন, ‘আয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান থাকলেও ভারতের ওপর অতিনির্ভরতা বৈশ্বিকভাবে ক্রিকেটের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা চীনের মতো দেশ ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদে আইসিসির আয়ে অনেক বেশি অবদান রাখবে। তাতে ক্রিকেটও সমৃদ্ধ হবে বৈশ্বিকভাবে।’ ভারতকে আইসিসির আয়ের সিংহভাগ দিয়ে দেওয়ার ‘কোনো যুক্তি নেই’ বলেও মনে করেন মানি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত