ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তবুও অটুট ডর্টমুন্ডের ‘ইয়েলো ওয়াল’

তবুও অটুট ডর্টমুন্ডের ‘ইয়েলো ওয়াল’

রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই মাঠে লুটিয়ে পড়েন মার্কো রেউস। উপুড় হয়ে শুয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকেন তিনি। জুড বেলিংহাম মাঠে বসে অঝোরে কাঁদছিলেন। ক’দিন পরই বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখাতে যাচ্ছেন তিনি। যাওয়ার আগে খুব করে চেয়েছিলেন বুন্দেসলিগার স্বাদ নিতে। ম্যাট হামেলস, নিকোলাস সুলে, সেবাস্তিয়ান হলার- সবাই কাঁদছিলেন এত কাছে এসেও শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার যন্ত্রণায়। উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে আসা সিগনাল ইদুনা পার্কে তখন পিনপতনের নীরবতা। তবে খুব বেশিক্ষণ নীরব থাকেননি বিখ্যাত ‘দ্য ইয়েলো ওয়াল’। গান ধরেন তারা। বিধ্বস্ত খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়ানোর গান। বিশাল বিশাল হলুদণ্ডকালো পতাকা উড়িয়ে সমস্বরে গাইছে পুরো স্টেডিয়াম। ভীষণ অবাক করা সে দৃশ্য। দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর অনন্য নজির স্থাপন করলেন তারা।

সিগনাল ইদুনা পার্কের ভেতর প্রায় ৮২ হাজার, স্টেডিয়ামের চারপাশে জড়ো হয়েছিল আরো প্রায় ৫ লাখের ওপর সমর্থক। প্রায় সবার পরনে ঐতিহ্যবাহী হলুদণ্ডকালো জার্সি। দেখে মনে হচ্ছিল যেন বসন্ত উৎসবে হলুদ প্রজাপতির মেলা বসেছে। ১০ বছর অপেক্ষার পর বুন্দেসলিগা আসতে যাচ্ছে! ঘরের মাঠে মাইঞ্জের বিপক্ষে জিতলেই শিরোপা। কিন্তু ফুটবল ঈশ্বরের কী নিষ্ঠুরতা। ২৪ মিনিটেই দুই গোল হজম করে বসে ডর্টমুন্ড। নীরব হয়ে যায় পুরো মাঠ। ৮১ মিনিটে গিয়ে কোলনের মাঠ থেকে সমতা ফেরানোর খবর আসে। আবার প্রাণচাঞ্চল্য হয়ে ওঠেন ডর্টমুন্ডের সমর্থকররা। সেটা অবশ্য একেবারেই স্থায়ী হয়নি। ৮৯ মিনিটে জামাল মুসিয়ালা দুর্দান্ত এক গোল করে ২-১ ব্যবধানে কোলনের বিপক্ষে বায়ার্নের জয় নিশ্চিত করেন। আর সিগনাল ইদুনা পার্কে পেনাল্টিসহ বেশ কয়েকটি সুযোগ মিসের পর অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে ২-২ সমতা ফেরায় ডর্টমুন্ড। তাই লিগের শেষদিনে এসে বায়ার্ন মিউনিখ ও বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের পয়েন্ট হয়ে যায় সমান ৭১। গোল পার্থক্যে শিরোপা জিতে নেয় বায়ার্ন। এটি তাদের টানা ১১তম বুন্দেসলিগা শিরোপা।

ডর্টমুন্ডের কোচ এডিন টের্জিকের দুঃখটা একটু বেশিই। সেই ছেলেবেলা থেকে তিনি ডর্টমুন্ডের ফ্যানবয়। ক্রোয়াট-জার্মান টের্জিক ২০১৮ সালে ডর্টমুন্ডের সহকারী কোচের দায়িত্ব পান। অন্তর্র্বতী কোচ হিসেবে ২০২১ সালে ডর্টমুন্ডকে পোকাল কাপ জিতিয়েছিলেন। এর পর মার্কো রোজকে হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি হয়ে যান তার সহকারী। চলতি মৌসুমের শুরুতে মার্কো রোজ দায়িত্ব ছেড়ে দিলে টের্জিক হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ পান। ফ্যানবয় থেকে হেড কোচ- স্বপ্নের এই পথচলায় দারুণ অর্জন হতো গত শনিবারের লিগ শিরোপা। সেটি না পাওয়ায় একসময় তিনি যেখানে দাঁড়াতেন, সেই ইয়েলো ওয়ালের সামনে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন। দুঃখের দিনে তাকে নিরাশ করেননি ইয়েলো ওয়াল। তাকে নিয়ে তারা গান ধরেন, ‘তুমি যদি জিত তাহলে শীর্ষে থাকবে। যদি তুমি হেরে যাও তাহলে তোমার স্থান সবার নিচে। কিন্তু আমরা তোমার জন্য সব সময়ই জয়গান গাইব!’ শিরোপা এনে দিতে না পারার পরও সমর্থকদের এই পাশে থাকা আরও বেশি পোড়াচ্ছে ডর্টমুন্ডে জন্ম নেয়া এই কোচকে। অশ্রুসিক্ত চোখেই তিনি বলেন, ‘ভীষণ নিষ্ঠুর একটি খেলার সঙ্গে আমরা ভালোবাসার বন্ধনে জড়িয়েছি। এটা ভীষণ যন্ত্রণার। আমাদের সমাপ্তিটা সুখের হলো না।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত