‘বৃদ্ধাশ্রমে’ মেসি, লাভ আর্জেন্টিনার!

প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

একজন শীর্ষ মানের খেলোয়াড় ফুটবল ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটাবেন ইউরোপের কোনো ক্লাবে, সায়াহ্নে পাড়ি জমাবেন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে (এমএলএস), হালে ফুটবলারদের ক্যারিয়ার গ্রাফটা এমনই। অনেকে এমএলএসকে ‘ফুটবলারদের বৃদ্ধাশ্রম’ বলে প্রায়ই টিপ্পনী কাটেন। সাম্প্রতিক অতীতের দিকে তাকালেও অনেক বড় বড় নাম রয়েছে যারা শেষ সময়টা যুক্তরাষ্ট্রে খেলেছেন। এদের মধ্যে আছেন ডেভিড বেকহ্যাম, থিয়েরি অঁরি, গ্যারেথ বেল, ডেভিড ভিয়া, দিদিয়ের দ্রগবা, ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, বাস্তিয়ান শোয়েনস্টাইগার, জøাতান ইব্রাহিমোভিচ, ওয়েইন রুনি কিংবা কাকা।

গেল বছরের শেষ দিকে আর্জেন্টিনাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বকাপ জেতানো লিওনেল মেসি ক্লাব ফুটবলে গেল কটা মাস ভুলে যাওয়ার মতোই সময় পার করেছেন। বয়সটাও পড়ন্ত বেলায়। তবুও বিশ্বকাপ জেতার মাত্র মাস ছয়েকের ব্যবধানে আর্জেন্টাইন মহাতারকা ইউরোপ ছাড়বেন এটা বিশ্বাস করতে পারেননি অনেকেই। তবে শেষ পর্যন্ত সেটিই সত্যি হয়েছে। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আমেরিকার ক্লাব ইন্টার মায়ামিতেই যাচ্ছেন মেসি।

প্রচলিত আছে, ইউরোপ ছাড়া মানেই অবসরের পথে এক পা বাড়ানো। ৩৬ বছর বয়সে ইউরোপ ছেড়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। মেসি ছাড়লেন ৩৫ বছর বয়সে। অবশ্য বার্সেলোনার ফেরার গুঞ্জন সত্যি হলে আরও কিছুদিন ইউরোপে থাকতেই পারতেন মেসি। দলবদল আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসছিল পুরনো ক্লাব বার্সেলোনার নাম। ইউরোপের বেশ কয়েকটি ক্লাব থেকে প্রস্তাব পেলেও মেসি চেয়েছিলেন বার্সেলোনায় ফিরতে। সে প্রসঙ্গে মেসি বলেন, ‘আমি সত্যিই ফিরে আসতে চেয়েছিলাম, উদগ্রীব হয়ে ছিলাম ফেরার জন্য। কিন্তু, আমি চলে যাবার সময় যে পরিস্থিতি হয়েছিল, পুনরাবৃত্তি চাচ্ছিলাম না। আমার ভবিষ্যৎ অন্য কারো হাতে ছেড়ে দিতে চাই না। শুনেছি লা লিগা অনুমোদন দিয়েছিল, তারপরও অনেক কিছু করতে হতো। আমার জন্য বার্সেলোনাকে খেলোয়াড় বেচতে হবে বা খেলোয়াড়দের বেতন কমাতে হবে। আমি এর ভেতর দিয়ে যেতে চাইনি।’

বার্সেলোনায় ফেরার গুঞ্জন বাদ দিলেও অন্যদিকে ‘টাকার বস্তা’ নিয়ে মেসির অপেক্ষায় ছিল সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আল হিলাল। দুই মৌসুমে তাকে ১ বিলিয়ন ইউরো দিতে চেয়েছিল ক্লাবটি। পরে সেটি বাড়িয়ে নাকি ১.৬ বিলিয়ন করেছিল। তাও সেখানে যাননি মেসি। এ প্রসঙ্গে আর্জেন্টাইন তারকা বলেন, টাকা আমার জন্য কখনোই সমস্যা (বাধা) ছিল না। তেমন হলে আমি সৌদিতে যোগ দিতাম। ২০২৪ কোপা আমেরিকার আসর বসতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে মেসির খেলা নিশ্চিত। ২০২৬ বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক হলেও অধিকাংশ ম্যাচ যুক্তরাষ্ট্রে হতে পারে। মেসির সঙ্গে ইন্টার মায়ামিতে আর্জেন্টাইন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের সতীর্থ লিয়ান্দ্রো পারেদেস ও ডি মারিয়ারা যোগ দিতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লিগে খেলাকে সেজন্যও হয়তোবা বেশি যৌক্তিক মনে করেছেন।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো সৌদি আরবে যাওয়ার পর বিশ্ব ফুটবলে দেশটির সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে যেন! এরই মধ্যে সৌদির ক্লাব আল ইত্তিহাদে নাম লিখিয়েছেন রোনালদোর একসময়ের রিয়াল মাদ্রিদ সতীর্থ করিম বেনজেমা। পিএসজির সঙ্গে বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হওয়ার পর মেসিকে দলে ভেড়াতে উঠেপড়ে লেগেছিল সৌদি প্রো লিগের আরেক ক্লাব আল হিলাল। তবে সৌদির অর্থের ঝনঝনানি উপেক্ষা করেই আমেরিকার মেজর সকার লিগের ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে যাচ্ছেন আর্জেন্টাইন বিশ্বকাপজয়ী। রোনালদোর পথ ধরে মেসিও মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে গেলে বিশ্ব ফুটবলে সৌদির দাপট আরও বাড়তো নিঃসন্দেহে। সে হিসেবে মেসির প্রত্যাখ্যানে কিছুটা হলেও ধাক্কা খেল তারা বলে মনে করছেন অনেকে।

কদিন আগে সৌদি আরবের ক্লাব ফুটবল নিয়ে স্বপ্নের কথা শুনিয়েছিলেন রোনালদো। পর্তুগিজ তারকা বলেছিলেন, সৌদি লিগকে অবশ্যই দুনিয়ার শীর্ষ পাঁচ লিগের একটি বানানো সম্ভব। তিনি মনে করেন, বড় বড় এসব তারকা সৌদি প্রো লিগে যোগ দিলে প্রতিযোগিতাটির জন্যই মঙ্গল, ‘তাদের মতো এমন সব বড় বড় তারকা থেকে তরুণ ও বয়স্করাও যদি এখানে আসে, তাহলে তাদের স্বাগত জানাই। কারণ সেটা ঘটলে লিগের একটু হলেও উন্নতি হবে।’

মেসি পিছু হটলেও প্রো লিগ নিয়ে এখনো আশাবাদী রোনালদো। হয়তো বেনজেমার সৌদির ক্লাবে যোগ দেওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেই মাদ্রিদে গণমাধ্যমকে আল নাসর তারকা বলেন, আমি জানতাম আমি ভুল ছিলাম না। আমার সেখানে যাওয়া একটা বাক্স খুলে যাওয়ার মতো।’ রোনালদো জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে, এই লিগটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লিগ হতে চলেছে। করিম (বেনজেমা) ইতোমধ্যেই চলে এসেছে এবং আমি ১০০০% নিশ্চিত যে আরও অনেক খেলোয়াড় আসবে। সব তারকারা আরবে আসুক, লিগে কোনো সমস্যা নেই। আমরা যা চাই তাহলো প্রতিযোগিতা।’