মিরপুর টেস্টে নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরি, মাহমুদুল হাসান জয়ের হাফ সেঞ্চুরির পর শেষ বিকালে মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজের চমৎকার জুটিতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রেখে প্রথম দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৩৬২ রান। টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম দিন এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর। তবে মিরপুরে এটি সর্বোচ্চ।
সর্বোচ্চ ৪ উইকেটে ৩৭৪ আসে চট্টগ্রামে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। প্রথম দিন ১১ ওভার কম খেলা হয়েছে। বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের প্রথম দিনে আধা ঘণ্টা বেশি খেলা চালিয়েও হয়েছে ৭৯ ওভার। গরমের কারণে বারবার অনির্ধারিত বিরতিতে খেলার গতি হয়েছে মন্থর। ফলে থেকে গেছে ১১ ওভারের ঘাটতি।
প্রথম সেশনে ১ উইকেটে ১১৬ রান, দ্বিতীয় সেশনে ১ উইকেটে ১১৯ রান। কিন্তু শেষ সেশনে ১২৭ তুলতে পড়ে ৩ উইকেট। তুলনামূলকভাবে দিনের শেষ বেলাতেই একটু ভোগে বাংলাদেশ। তবে মুশফিক ৬৯ বলে ৪১ ও মিরাজ ৬৬ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত থেকে দিয়ে যাচ্ছেন ভরসা। ষষ্ঠ উইকেটে তাদের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে এসে গেছে ৯৭ বলে ৭২ রান। দিনের দ্বিতীয় ওভারে উইকেট পড়লেও পরে বাকি প্রথম সেশনের পুরোটা মাহমুদুল হাসান জয়কে (৭৬) নিয়ে শাসন করলেন শান্ত। দ্বিতীয় সেশনেও একই অবস্থা। এবারও রান উঠল ওভারপ্রতি পাঁচের কাছাকাছি। প্রথম দুই সেশনে কেবল ২ উইকেট হারিয়ে ২৩৫ রান তুলে নিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ সেশনে পুরো ভিন্ন চিত্র। আফগানিস্তন বোলারদের আলগা বোলিং দেখে মনে হচ্ছিল ভুল না করলে আউটের সুযোগ নেই। সেই ভুলই হলো একের পর এক। ছন্দহীনতার আরেকটি ছবি দেখিয়ে মুমিনুল হক ফেরেন থিতু হওয়ার আগে, দারুণ সেঞ্চুরিতে ডাবল সেঞ্চুরিকে রূপ দেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করে শান্তর বিদায় ছক্কার চেষ্টায়। অধিনায়ক লিটন দাসও করেন হতাশ। ২৩৫ রান নিয়ে শেষ সেশন শুরু করে শান্তই ফের টানছিলেন। আরেক প্রান্তে কিছুটা নড়বড়ে মুমিনুল থিতু হতে ভুগছিলেন। অভিষিক্ত আফগান ডানহাতি পেসার নিজাত মাসুদেও লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে ব্যাট লাগিয়ে ক্যাচ দেন কিপারের হাতে। তাকেও ফেরাতে রিভিউ নিতে হয় আফগানিস্তানকে। শান্ত থামতে পারতেন ১৪৩ রানে। নিজাতের বল টেনে নিয়েবোল্ড হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু নো বলের কারণে বেঁচে যান। জীবন পেয়ে আর কেবল তিন রান করতে পারেন দিনের সেরা ব্যাটার। হামজা হোটাককে উড়াতে গিয়ে লং অনে ধরা দেন তিনি। ১৭৫ বলে ২৩ চার, ২ ছয়ে থামে তার ১৪৬ রানের ইনিংস। টেস্ট অধিনায়কত্বের অভিষেকের দিনে সবাইকে হতাশ করেছেন লিটন দাস। রিষ্ট স্পিনার জাহিরের গুগলি বুঝতে না পেরে ড্রাইভ খেলতে গিয়েছিলেন। আউটসাইড এজড হয়ে তার ক্যাচ যায় সিøপে। ২৯০ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। ১ উইকেটে ২১৮ থেকে ২৯০ পর্যন্ত যেতে ৫ উইকেট। দারুণ প্রথম সেশনের পর ৭২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে আচমকা ধসে বদলে যায় ছবি। দিনভর আলগা বোলিং করেও ম্যাচে অনেকটা ফিরে আসে আফগানিস্তান। তবে তাদের আনন্দ পরে আর স্থায়ী হতে দেননি মুশফিক-মিরাজ। অনায়াসে রান আনতে থাকেন তারাও। আরেক জুটি দাঁড়িয়ে যাওয়ায় বড় পুঁজির দিকেই যাচ্ছে বাংলাদেশ। সকালে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই জাকির হাসানকে হারিয়েছিলেন স্বাগতিকরা। এর পরই খেলার গতি বদলে দেন শান্ত-জয়। দ্বিতীয় উইকেটে আনেন ২১০ রান। ওভারপ্রতি রান আসতে থাকে সাড়ে চার করে। দিন শেষেও অব্যহত ছিল এই গতি। ১১ ওভার কম খেলা হলেও ৩৬২ রান এসে গেছে বোর্ড। পুরো ৯০ ওভার হলে একদিনে সর্বোচ্চ রান তোলার (৪ উইকেটে ৩৭৪) রেকর্ডও ছাড়িয়ে যেত। প্রথম দুই সেশনেই দাপট দেখান শান্ত। বাঁ-হাতি ব্যাটার শুরু থেকেই ছিলেন সাবলীল, প্রতিপক্ষেও বোলারদের ওপর চেপে বসেন দ্রুতই। আফগানরা আলগা বলের সঙ্গে লাইনলেন্থেও নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। ১৫টি নো বল করেছেন তারা, অতিরিক্ত থেকেই এসেছে ৩১ রান। অনভিজ্ঞ বোলারদের হাঁসফাঁস অবস্থা আরো বেহাল হয়েছে শান্তর ঝলকে। একের পর এক বাউন্ডারিতে বল কুড়িয়ে আনায় ব্যস্ত রেখেছেন ফিল্ডারদের। ১৪৬ রানের ইনিংসে ২৩ চারের সঙ্গে দুই ছক্কাও মেরেছেন তিনি। তার ঠিক বিপরীত ধারায় খেলছিলেন জয়। নতুন বল সামলে ধীরলয়ে এগুচ্ছিলেন তিনি। ফিফটি পেরিয়ে সেঞ্চুরির আভাসও মিলছিল। ১৩৭ বলে তিনি শেষ পর্যন্ত থামেন ৭৬ করে। মিডল অর্ডারে মুমিনুল, লিটনের ব্যর্থতার পরও খুব একটা সমস্যা হয়নি বাংলাদেশের।