ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের পর ফিল্ডিংও

আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের পর ফিল্ডিংও

চার স্লিপ, দুই গালি, পয়েন্ট ও শর্ট লেগ, সঙ্গে উইকেটরক্ষক- টেস্ট ক্রিকেটে উইকেটের সামনে-পেছনে এমন আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসে কখনো দেখেছেন? শুধু বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসে কেন, মিরপুর স্টেডিয়ামে এমন দৃশ্যও বিরল। এমন দুর্লভ ক্যানভাসই গতকাল আঁকা হয়ে গেল বাংলাদেশ আফগানিস্তানের মধ্যকার টেস্টের দ্বিতীয় দিনের মধ্য দুপুরে।

নতুন বলের উজ্জ্বল ভাব অটুট, উইকেটের এক প্রান্তে ইবাদত হোসেন ও অন্য পাশে শরিফুল ইসলাম যে তাণ্ডব চালালেন তাতে অতিথি দলের ব্যাটসম্যানরা স্রেফ অসহায়। রান করা তো দূরের চিন্তা, উইকেটে টিকে থাকা ছিল দায়! শরীরের ওপর তাক করা বাউন্সের উত্তর জানা ছিল না হাশমতউল্লাহ শহীদি, রহমত শাহদের; তাতে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। দুজনের পেস দাপটে আফগানদের টপ ও মিডল অর্ডার লণ্ডভণ্ড হওয়ার পর লেট অর্ডার কোমড় সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। তাতে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে করা ৩৮২ রানের জবাবে ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায় আফগানরা। অতিথিদের ফলোঅনের লজ্জায় না ফেলে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে দাপট দেখায় স্বাগতিকরা, ১ উইকেটে ১৩৪ রান তুলে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে মুখে চওড়া হাসি নিয়ে। প্রথম ইনিংসে ২৩৬ রানের লিডকে দ্বিতীয় ইনিংসে আরো বাড়িয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ। দুই ইনিংস মিলিয়ে তারা এখন এগিয়ে ৩৭০ রানে। উইকেট আছে এখনও ৯টি।

দিনের শেষ বলটি ছেড়ে দিয়ে আম্পায়ারের দিকে তাকালেন জাকির হাসান, বেলস তুলে নিলেন আম্পায়ার। নন স্ট্রাইক থেকে নাজমুল হোসেন শান্ত ততক্ষণে ড্রেসিং রুমের দিকে হাঁটা দিয়েছেন, জাকিরও সঙ্গী হলেন। ‘ফিস্ট বাম্প’ করে পরস্পরকে যেন বলতে চাইলেন তারা ‘ওয়েল ডান।’ হেলমেটের গ্রিলের ফাঁক দিয়েও তাদের চোখেমুখে তৃপ্তির ছাপ ফুটে উঠছিল স্পষ্ট। আফগানিস্তানের ড্রেসিং রুমের সামনে তখন পাথুরে মুখে দাঁড়িয়ে জোনাথন ট্রট। আফগানিস্তান কোচ হয়তো বুঝতে পারছিলেন বাস্তবতা, এই ম্যাচে তাদের ফেরার পথ আর নেই! শেষ সেশনে জাকির ও শান্তর ব্যাটিং দেখে যে কারো মনে হতে পারে, ব্যাটিংটা এখানে কতই না সহজ। কে বলবে, আগের দুই সেশন ব্যাটসম্যানদের জন্য ছিল দুর্বিসহ! এই দুজনের জুটির আগে ৪৮ ওভারে উইকেট পড়েছে ১৬টি। উইকেটের ওই স্রোতের পর জাকির-শান্ত জুটির রান প্রবাহে ম্যাচের সম্ভাব্য ভাগ্যও অনেকটা নির্ধারিত হয়ে গেছে এই দিনে। এমনিতে সাধারণ টেস্টের তৃতীয় দিনটিকে বলা হয় ‘মুভিং ডে।’ কিন্তু মিরপুরে দ্বিতীয় দিন শেষেই পরিণতি মোটামুট পরিষ্কার। এখনই জয় দেখছে বাংলাদেশ, আফগানিস্তানের ম্যাচ বাঁচানো এখন অসম্ভবের কাছাকাছি।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৩৮২ রানের জবাবে আফগানিস্তান গুটিয়ে যায় স্রেফ ১৪৬ রানে। ফলো-অন না করিয়ে আবার ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ দিন শেষ করে ১ উইকেটে ১৩৪ রান নিয়ে। জাকির ও শান্ত, দুজনের নামের পাশেই ঠিক ৬৪ বলে অপরাজিত ৫৪। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ১১৬। অথচ দিনের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ধস দিয়ে। শেষ ৫ উইকেট হারায় তারা স্রেফ ৯ রানের মধ্যে। ৫ উইকেটে ৩৬২ রান নিয়ে দিন শুরু করা দল এ দিন আর স্রেফ ৪৫ মিনিট খেলে যোগ করতে পারে কেবল ২০ রান। ৭ ওভার ও ৪৫ মিনিটের খেলায় আগের দিনের ঠিক উল্টোচিত্র ব্যাটসম্যানদের।

এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই অস্বস্তিতে ছিল সফরকারীরা। চা-বিরতির আগে ৮ উইকেট হারিয়ে একদম শেষের পথে চলে গিয়েছিলেন আফগানরা, চা-বিরতির পর মাত্র ১২ বল টিকতে পারে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ ইনিংস : ৩৮২ ও ২৩ ওভারে ১৩৪/১ (জয় ১৭, জাকির ৫৪*, শান্ত ৫৪*; আহমেদজাঈ ৫-০-৩৪-০, মাসুদ ৩.৫-০-৩০-০, হামজা ৬.১-০-২৭-১, জানাত ৪-০-২৪-০, জহির ৪-০-১৯-০)।

আফগানিস্তান প্রথম ইনিংস : ৩৯ ওভারে ১৪৬ (ইব্রাহিম ৬, মালিক ১৭, রহমত ৯, শাহিদী ৯, জামাল ৩৫, জাজাই ৩৬, জানাত ২৩, হামজা ৬, আহমাদজাঈ ০, মাসুদ ০, জাহির ০*; তাসকিন ৭-০-৪৮-০, শরিফুল ৮-২-২৮-২, এবাদত ১০-১-৪৭-৪, তাইজুল ৫-০-৭-২, মিরাজ ৯-১-১৫-২)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত