সাদা পোশাকে দুই দলের প্রথম দেখায় টাইগারদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিল টেস্ট পরিবারের নবীন দল আফগানরা। দুই বছর পর সেই হারের মধুর প্রতিশোধ নিল বাংলাদেশ। একমাত্র টেস্টে আফগানিস্তানকে গুঁড়িয়ে তুলে নিয়েছে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়। পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ শুরু হওয়ার পর ক্রিকেটবিশ্ব এত বড় জয় আর দেখেনি। তবে এই টেস্টের যা অবস্থা ছিল আগেরদিন ইনিংস ঘোষণা না করলে বিশ্ব রেকর্ডও গড়তে পারত বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষকে সবচেয়ে বড় লক্ষ্য দিয়ে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জেতার হাতছানি ছিল। রেকর্ড নিয়ে হয়তো অতটা ভাবেননি লিটন দাসরা। তবে যা হয়েছে তাতেও রেকর্ড বইয়ে উঠে গেল বাংলাদেশের নাম। আফগানিস্তানকে বিধ্বস্ত করে ১৪৬ বছরের টেস্ট ইতিহাসে রানের দিক থেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৩৪ সালের পর এটাই সবচেয়ে বড়। গতকাল শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চতুর্থ দিনে অনেকটা সারার মিশন ছিল। সেই কাজে বেশি দেরি হয়নি। এক সেশনেই আফগানদের গুঁড়িয়ে ৫৪৬ রানের রেকর্ড জয় পেয়েছে লিটন দাসের দল। এই সংস্করণে রানের দিক থেকে এর চেয়ে বড় জয় আছে কেবল দুটি। ১৯২৮ সালে অস্ট্রেলিয়াকে ৬৭৫ রানে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। ১৯৩৪ রানে ইংলিশদের ৫৬২ রানে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। রানের দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় ছিল ২২৬ রানের, ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এই সংস্করণে সেটাই বাংলাদেশের প্রথম জয়। ৬৬২ রান তাড়ায় নেমে বাংলাদেশের বোলারদের ঝাঁজে স্রেফ ১১৫ রানে শেষ হয়ে যায় আফগানরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার তাসকিন আহমেদ। শরিফুল ইসলাম ২৮ রানে পান ৩ উইকেট। সকালে ২ উইকেটে ৪৫ রান নিয়ে নামা আফগানিস্তান দিনের তৃতীয় ওভারেই হারায় উইকেট। ইবাদতের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরত যান নাসির জামাল। কিপার ব্যাটার আফসার জাজাই নেমেও প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। দারুণ ডেলিভারিতে সিøপে তার ক্যাচ বানান শরিফুল। অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শহিদি আগের দিন তাসকিনের বাউন্সারে মাথায় আঘাত পেয়ে ছিটকে যান ম্যাচ থেকে। তার জায়গায় কনকাশন বদলি হিসেবে নেমে অভিষেকে সুবিধা করতে পারেননি বাহির শাহ। অ্যাঙ্গেল ও বাউন্সে বিপাকে পড়েন তিনিও। নিচু হয়ে ক্যাচ হাতে জমান তাইজুল ইসলাম। আফগানদের অন্যতম সেরা ব্যাটার রহমত শাহও বাউন্স সামলাতে নিজের দক্ষতা দেখাতে পারেননি। তাসকিনের বাড়তি বাউন্সে কাবু হয়ে তার ক্যাচও যায় লিটনের গ্লাভসে। তাসকিন পরের ওভারেই পান আরেক উইকেট। দারুণ ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে উড়িয়ে দেন করিম জানাতের স্টাম্প। লাঞ্চের ঠিক আগে মেহেদী হাসান মিরাজের বল সুইপ করতে গিয়ে গ্লাভসে লাগিয়ে ক্যাচ দিয়ে দেন হামজা হোটাক। খানিক পর ইয়ামিন আহমেদ জাইকে আউট করার পর আর জাহির খানকে উপড়ে ফেলছিলেন। দুবার বেঁচে যাওয়ার পর তাসকিনের বলে হাতে ব্যথা পেয়ে আর খেলা চালাতে পারেননি তিনি। ম্যাচ শেষ হয়ে যায় তাতে। প্রথম ইনিংসে ৩৮২ রান করার পর আফগানদের ১৪৬ রানে গুটিয়ে দিয়েই খেলা কার্যত শেষ করে দেয় বাংলাদেশের পেসাররা। চরম ব্যাকফুটে থেকে সফরকারীদের ফেরার সুযোগ না দিয়ে ২৩৬ রানের লিডের সঙ্গে তাদের উপর আরো ৪২৫ রান চাপিয়ে দেয় স্বাগতিকরা। দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। খরা কাটিয়ে সেঞ্চুরি পান মুমিনুল হক। প্রতিপক্ষকে ৬৬২ রানের অবিশ্বাস্য লক্ষ্য দিয়েই দ্রুত দুই উইকেট তুলে নিলে ম্যাচের গতিপথ পরিষ্কার হয়ে যায়। চতুর্থ দিনে কেবল আনুষ্ঠানিকতা সারল লিটন দাসের দল। ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের কাছে বড় ব্যবধানে হারের ক্ষত দারুণভাবে ফিরিয়ে দিল স্বাগতিক দল। রেকর্ডগড়া জয়ের এই ম্যাচে বাংলাদেশের আরো প্রাপ্তি আছে। ২৬ মাস ও ২৬ ইনিংস পর সেঞ্চুরি করেছেন সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হক। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়েছেন পেসার ইবাদত। দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৩৭ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। এই টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের পেসাররা নিয়েছেন ১৪ উইকেট। যা এই সংস্করণে এক ম্যাচে তাদের সর্বোচ্চ। আগের সেরা ছিল গত বছর মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৮২
আফগানিস্তান ১ম ইনিংস: ১৪৬
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৪২৫/৪ ইনিংস ঘোষণা
আফগানিস্তান ২য় ইনিংস: ১১৫ (আগের দিন ৪৫/২) (রহমত ৩০, শাহিদি ১৩ আহত অবসর, জামাল ৬, জাজাই ৬, বাহির ৭, জানাত ১৮, হামজা ৫, আহমাদজাই ১, মাসুদ ৪*, জাহির ৪ আহত আউট; শরিফুল ১০-১-২৮-৩, তাসকিন ৯-২-৩৭-৪, তাইজুল ৫-১-১৯-০, মিরাজ ২-০-৫-০, ইবাদত ৭-২-২২-১)
ফল: বাংলাদেশ ৫৪৬ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নাজমুল হোসেন শান্ত