ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্পিনের সাথে পেস : নতুন দিন শুরু

স্পিনের সাথে পেস : নতুন দিন শুরু

মিরপুর টেস্টের দুই ইনিংস মিলিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর সমান রানও করতে পারেননি আফগানরা। প্রথম ইনিংসে শান্তর সমান ১৪৬ রান করে তারা। দ্বিতীয়টিতে শান্ত ১২৪ রান করলেও সফরকারীরা থামে স্রেফ ১১৫ রানে। দাপুটে ব্যাটিং-বোলিংয়ে বাংলাদেশের জয় রেকর্ড ৫৪৬ রানের। প্রথম ইনিংসে ৩৯ ওভারে গুটিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ভাগে তারা খেলতে পারে মোটে ৩৩ ওভার। সব মিলিয়ে শুধু পুরো ম্যাচ থেকে হতাশাই পেয়েছে আফগানরা। ম্যাচ শেষে বলেন কোচ জোনাথন ট্রট প্রশংসা করেন বাংলাদেশের ব্যাটিং ও বোলিংয়ের। দুই ইনিংস মিলিয়ে পেসারদের শিকার ১৪ উইকেট, যা এক ম্যাচে বাংলাদেশের পেসারদের সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড। ট্রটের কণ্ঠেও ফুটে ওঠে তাসকিন-ইবাদতদের প্রশংসা।

মিরপুর টেস্টের ভাগ্য গড়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের পেসাররা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে রেকর্ড জয়ে পেসারদের এই ভূমিকা একাধারে অভাবিত ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ছবি। তাসকিন, ইবাদত, শরিফুল হাসানদের সঙ্গে খালেদ ও মুশফিক মিলে যে পেস ব্রিগেড তৈরি করেছেন তা বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার মতোই। তাদের এখন শুধুই প্রয়োজন ধারাবাহিক সুযোগ। বিদেশের পাশাপাশি দেশের মাটিতেও ভালো ঘাসের উইকেটে খেলানো। বাউন্স ক্রিয়েট হয় এমন উইকেটে খেলানো। তাতে বাংলাদেশের পেসাররা আরো ভালো মানের হয়ে উঠবে বলেন বিশ্বাস করেন সংশ্লিষ্টরা।

আফগানদের বিপক্ষে ঘাসের উইকেট করা হয়েছিল পরিকল্পনা করেই! চার বছর আগে তাদের স্পিনাররা বাংলাদেশকে ভুগিয়ে ম্যাচ জিতেছিল। বাংলাদেশ হোম অ্যাডভানটেজ স্পিন ট্র‌্যাক না বানিয়ে বরং পেস আক্রমণে সাজায় পরিকল্পনা। যা কাজে দিয়েছে শতভাগ।

মিরপুর টেস্টের দুই ইনিংসে বাংলাদেশের তিন পেসারের শিকার ১৪টি। কোনো টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের পেসারদের সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড এটি। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেন ইবাদত। দ্বিতীয় ভাগে ৪ উইকেট নেন তাসকিন। আর শরিফুল পান মোট ৫টি উইকেট। নিখুঁত লাইন-লেংথের সঙ্গে গতি ও বাউন্সের মিশেলে দুই ইনিংসেই সফরকারী ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষা নেন তারা। পেসারদের এই পারফরম্যান্সে খুশি কোচ অধিনায়ক দুজনই। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে গতকাল বলেছেন, ‘আমি জানি না আপনারা দেখেছেন কি না, আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছি এটা শুধুমাত্র একটা টেস্ট জয় নয়, তার চেয়েও বিশেষ কিছু। আমি এটা দিয়ে বুঝিয়েছি, আমরা যেভাবে এই ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হয়েছি, সেটা এর আগে কখনো হয়নি। আমরা ফাস্ট ও সবুজ উইকেট তৈরি করেছি। এই ধরনের উইকেটে খেলে জেতা বিরাট ব্যাপার। আমরা অনেক মানসিক বাঁধা পার করছি।’

সাকিবের পরিবর্তে এই টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়া লিটন বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের পেস ইউনিট দিন দিন উন্নতি করছে। পিচ ম্যাপ দেখলে অনেক কিছু বোঝা যায়। আগে আমাদের দুই-একজন ছাড়া তেমন বোলার ছিল না যারা একই জায়গায় টানা বল করতে পারত। এখন দেখেন আমরা কাভার-পয়েন্ট (ফিল্ডার) ছাড়া বল করি। শুধু এই উইকেট না, ফ্ল্যাট উইকেটেও করি। কারণ, আমরা জানি আমাদের বোলাররা অনেক উন্নতি করছে। তাদের অনুশীলনের ধরন বদলেছে।’

তবে পেসারদের নিয়ে এমন স্বপ্নের বীজ কিন্তু বপন করেছিলেন সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হক। সাকিবের নিষেধাজ্ঞায় মুমিনুল আচমকা অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর থেকে পেসারদের দিকে বাড়তি নজর দেন। শুধু নজরই নয়, তাদের ম্যাচ খেলার ব্যবস্থা করা, ঘরোয়া ক্রিকেটের উইকেটে পর্যাপ্ত ঘাস রাখা, একটা পেস ইউনিট তৈরি করা, ধারাবাহিক সুযোগ দেওয়াসহ পেসারদের ব্যাকআপ করতে যা যা করার প্রয়োজন ছিল মুমিনুল তাই করেছিলেন।

তৎকালিন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ও বোলিং কোচ ওটিস গিবসনও বড় পরিকল্পনা নিয়ে পেসারদের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। মুমিনুল ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে সেই স্বপ্নের কিছুটা ধারনা দিয়ে গিয়েছিলেন, ‘আমি যখন অধিনায়ক ছিলাম, আমার স্বপ্ন ছিল টেস্ট ক্রিকেটটা উন্নতি করবো। সবার ভেতরে আগ্রহ আছে লাল বল খেলবে। আপনার দলকে কোথায় দেখতে চান চার বা তিন বছর পর। না হলে কিন্তু আমাদের টেস্ট দলের বোলিংটা এত ভালো হয় না।’

আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের আগে আলোচনায় ছিল মিরপুর স্টেডিয়ামের উইকেট। সবুজ উইকেট বানিয়ে এক প্রকার চমকে দিয়েছে টিম ম্যানেজম্যান্ট। যে কারণে টেস্ট চলাকালীন এবাদত হোসেনও বলেছিলেন, মিরপুরে কখনো সবুজ উইকেটে খেলা হয়েছে কি না জানেন না। জানবেন কি করে, খেলাতো হয়েছে সব মন্থর উইকেটে। যাদের উপর আত্মবিশ্বাস রেখে সবুজ উইকেট বানানো হয়েছে দিন শেষ তারা দিয়েছেন নিজেদের সেরাটা। এবাদত হোসেন-তাসকিন আহমেদণ্ডশরিফুল ইসলামদের একের পর এক শর্ট বল-বাউন্সে যেন অসহায় ছিলেন আফগান ব্যাটসম্যানরা। লাল সবুজের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে রান বন্যার পর তাসকিনদের বোলিং তোপে বাংলাদেশ রান বিবেচনায় পেয়েছে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয়।

ভবিষ্যতেও কি বাংলাদেশ এমন উইকেটে খেলবে? এক ম্যাচের নেতৃত্ব পাওয়া লিটন এখানে বনে যান বাস্তববাদী। জানান উইকেট হবে প্রতিপক্ষ দেখে। ‘এটা নির্ভর করছে আমরা কার সঙ্গে খেলছি। এমন না যে শুধু স্পিন উইকেটে খেলব বা শুধু পেস উইকেটে খেলব। যার সঙ্গে খেলব তাদের শক্তি, দুর্বলতা সব কিছু পর্যালোচনা করেৃযেটা মানুষ করে হোম অ্যাডভান্টেজ নেয়া। এটাই করব।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত