দুই দশক পর মালদ্বীপকে হারিয়ে সাফে টিকে থাকল বাংলাদেশ

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

নিজেদের প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী লেবাননের সঙ্গে দুর্দান্ত লড়াই করেও হেরে যায় বাংলাদেশ। তবে মালদ্বীপের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে শুরু থেকেই ভালো ফুটবল উপহার দিয়ে যাচ্ছিলেন জামাল ভূঁইয়ারা। কিন্তু ধারার বিপরীতে হুট করেই গোল হজম করে বসে তারা। শুরুতে পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে উঠল রাকিব হোসেনের গোলে। তাতে ফরোয়ার্ডদের জালের দেখা না পাওয়ার দীর্ঘ হতাশা ঘোচার পাশাপাশি সমতার স্বস্তিও মিলল। পরে কাজী তারিক রায়হান আগের ম্যাচের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করলেন দলকে এগিয়ে নিয়ে। ম্যাচ জুড়ে সাহসী ফুটবলের পসরা মেলে মালদ্বীপকে হারাল বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে খেলার আশা টিকিয়েও রাখল দারুণভাবে। সাফে ২০ বছর মালদ্বীপের বিপক্ষে জয় পেলেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ২০০৯ সালের পর বাংলাদেশ সাফের সেমিফাইনাল খেলতে পারেনি। এবার সুযোগ তৈরি হয়েছে সেমিতে উঠার। বাংলাদেশ ৩ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে যুগ্মভাবে লেবানন ও মালদ্বীপের সঙ্গে রয়েছে। শেষ ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে খেলবে হ্যাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা। গতকাল রোববার বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ‘বি’ গ্রপে নিজেদের দ্বিতীয় মালদ্বীপের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জিতেছে বাংলাদেশ। পিছিয়ে পড়া দলকে রাকিব সমতা ফেরানোর পর এগিয়ে নিয়েছিলেন তারিক। শেষ দিকে দলের জয় নিশ্চিত করে দেন শেখ মোরসালিন। ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য এক অর্থে বাঁচা মরার লড়াই-ই ছিল। আসরে টিকে থাকতে হলে জিততেই হতো তাদের। ড্র করলেও সুযোগ থাকত। সেক্ষেত্রে শেষ ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে জয়ের পাশাপাশি তাকিয়ে থাকতে হতো প্রতিপক্ষদের ফলাফলের ওপর। তবে ভাগ্যটা নিজেদের হাতেই রেখেছে বাংলাদেশ। মালদ্বীপের বিপক্ষে পুরো ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করেই জয় তুলে নিয়েছে তারা। প্রথম ম্যাচের ভুল ত্রুটি শুধরে দ্বিতীয় ম্যাচের শুরু থেকেই মালদ্বীপের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলতে থাকেন জামাল-রাকিবরা। দ্বিতীয় মিনিটেই কর্নার পায় বাংলাদেশ। জামালের কর্নার অনেকটা লাফিয়ে ক্লিয়ার করেন মালদ্বীপের এক ডিফেন্ডার। একটু পর কর্নার আদায় করে নেয় মালদ্বীপও। হামজার কর্নার হেডে ক্লিয়ার করেন তপু। সপ্তম মিনিটে প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে দ্রুত আক্রমণে ওঠেন মোহাম্মদ সোহেল রানা। থ্রু পাসও বাড়ান। তবে বলে গতি থাকায় রাকিব হোসেন ছুটে গিয়েও নাগাল পাননি। ভালো সুযোগ নষ্টের হতাশা সঙ্গী হয় দলের। গোছালো আক্রমণে পরের মিনিটেই হাফ-চান্স তৈরি করে বাংলাদেশ। জামালের লং পাস রাকিব ধরার আগেই গ্লাভসে নেন গোলরক্ষক। একাদশ মিনিটে জামালের কর্নারে সোহেলের দুর্বল হেড যায় গোলরক্ষক বরাবর। খেলার ধারার বিপরীতে ১৮ মিনিটে এগিয়ে যায় মালদ্বীপ। হাসান হাইসামের পাস এক সতীর্থ টোকা দেওয়ার পর প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাঁকানো শটে জাল খুঁজে নেন হামজা। ভুটান ম্যাচেও গোল পাওয়া এই ফরোয়ার্ডের শট ঝাঁপিয়ে পড়েও আটকাতে পারেননি আনিসুর রহমান জিকো। গোল হজম করে শোধ দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তারিক-রাকিবরা। ৪২ মিনিটে গিয়ে ফেরায় সমতা। এ সময় থ্রো ইন পায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে বিশ্বনাথের ছুড়ে মারা বল পান সোহেল রানা। তিনি ক্রসে বাড়িয়ে দেন তপু বর্মনের দিকে। আর তপু হেড নেন। তার হেড যায় বাম দিকে থাকা রাকিবের কাছে। তিনিও সেটাতে দারুণ হেড নিয়ে বল জালে জড়ান। প্রথমার্ধের শেষ দিকে দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করেন রাকিব। ইসা ফয়সালের দারুণ পাস ধরে দুরূহ কোণ থেকে তার নেওয়া শট গোলরক্ষক অনেকটা লাফিয়ে ক্রসবারের উপর দিয়ে বের করে দেন। যোগ করা সময়ে রাকিবের আরেকটি হেড অল্পের জন্য উপরের জাল কাঁপায়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই কর্নারে বিশ্বনাথের হেড যায় ক্রসবারের অনেক উপর দিয়ে। ৫৭ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ওঠে বাংলাদেশ। ফাহিম, সোহেল ও জামাল তিন জন দুই ডিফেন্ডারকে পেয়েছিলেন, কিন্তু নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার সংকট ফুটে ওঠে প্রবলভাবে। ফাহিম শেষ মুহূর্তে বাঁ দিকে সোহেলকে বল দিলেও শট নিতে পারেনি কেউ। ৬২ মিনিটে তিনটি পরিবর্তন আনেন হ্যাভিয়ের কাবরেরা। অধিনায়ক জামাল, সোহেল রানা ও গোলদাতা রাকিবকে তুলে নিয়ে শেখ মোরসালিন, মজিবুর রহমান জনি ও মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে নামান কোচ। রাকিব মাঠ ছাড়েন খোঁড়াতে খোঁড়াতে। ৬৭ মিনিটে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন তারিক কাজী। এ সময় জটলার মাঝে বল পেয়ে যান তিনি। এরপর মালদ্বীপের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান। তাতে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ২-১ গোলে। ৯০ মিনিটের মাথায় আরো একটি গোল করে বাংলাদেশ। এ সময় মিডফিল্ডার শেখ মোরসালিন মালদ্বীপের গোলরক্ষককে একা পেয়ে রক্ষণভাগের খেলোয়াড়কে কাটিয়ে আঁড়াআড়ি শটে বল জালে পাঠান। তাতে বাংলাদেশ পায় ৩-১ ব্যবধানের স্বস্তির জয়। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আগামী বুধবার রাতে (বাংলাদেশ সময় ৮টা) ভুটানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ, যারা প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপের কাছে ২-০ গোলে হেরেছে।