একযুগের আক্ষেপ আজ ঘুঁচবে?

প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

লেবানন ম্যাচে তার ভুলেই গোল খেয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। মালদ্বীপের বিপক্ষে সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করলেন তারিক কাজী। বাংলাদেশ যখন ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকে তখন তারিকের গোলেই সমতায় ফেরে লাল সবুজের জার্সিধারীরা। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৩-১ গোলে ম্যাচ জিতে পাপমোচনের আনন্দে মাতে তারিক। তবে আজ ভুটানের বিপক্ষে তারিককে ছাড়াই মাঠে নামতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। ২০০৯ সালের পর প্রথমবার সেরা চারে ওঠার লক্ষ্য পূরণের মিশনে আজ রাত ৮টায় ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ভুটানের মুখোমুখি হবে জামালরা। যদিও পায়ের চোট নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচ খেলতে চান তারিক, কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে না খেলানোর পক্ষে। ব্যাঙ্গালুরু থেকে টেলিফোনে সমকালকে এমনটাই জানিয়েছেন জাতীয় দলের ম্যানেজার আমের খান।

তারিক খেলতে পারবেন না বলে গতকাল নতুন কৌশলে বাংলাদেশকে অনুশীলন করিয়েছেন কোচ ক্যাবরেরা। তারিকের পরিবর্তে একাদশ সুযোগ পেতে পারেন মেহেদি। আর তার পজিশনে বিশ্বনাথ কিংবা তপু বর্মনকে দেখা যেতে পারে ভুটান ম্যাচে। ম্যানেজার আমের খান জানালেন, তারিককে নিয়ে আমরা ঝুঁকি নিতে চাই না। বাংলাদেশ যদি সেমিফাইনালে ওঠে, তখন তারিক খেলতে পারবেন।’

দুই সোহেল রানা ও জামাল ভূঁইয়া-এই তিন মিডফিল্ডার নিয়ে লেবাননের বিপক্ষে নেমেছিল বাংলাদেশ। খেলছিলও ভালো, কিন্তু শেষ দিকে খেই হারিয়ে হেরে যায় তারা। মালদ্বীপের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ছকে আসে পরিবর্তন। এই তিন জনের সঙ্গে মোহাম্মদ হৃদয়েরও কাঁধে ওঠে মাঝমাঠের দায়িত্ব। সেটা তারা পূরণ করেন দারুণভাবে। ওই ম্যাচে দাপুটে জয়ে সেমিফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখে বাংলাদেশ। এই গ্রুপে ভুটানই একমাত্র দল, যারা পয়েন্টের খাতা খুলতে পারেনি এখনও। দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে শক্তিশালী লেবানন। ৩ করে পয়েন্ট বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের।

ভুটান ম্যাচ সামনে রেখে বেঙ্গালুরুর স্পোর্টস হল ক্লাব মাঠে ফুরফুরে মেজাজে প্রস্তুতি নিয়েছেন জামাল-জিকোরা। রিকভারি, জাগলিং, পাসিং ও হালকা শুটিং প্র্যাকটিস সেরেছেন খেলোয়াড়রা। প্রস্তুতি শেষে জামালের কথায় উঠে এলো মাঝমাঠের দৃঢ়তার দিকটি। মালদ্বীপ ম্যাচে রাকিবের গোলে শেষ হেড পাসটি যদিও তপু বর্মনের, কিন্তু এই আক্রমণের সুরটা বেঁধে দিয়েছিল সোহেল রানার নিখুঁত পাস।

মূলত ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হলেও জামাল সে ম্যাচে খেলেন ‘ফলস নাইন’ পজিশনে। বলের জোগান দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের রক্ষণে হানাও দিয়েছেন। সব মিলিয়ে মাঝমাঠের বোঝাপড়া আশাবাদী করে তুলছে অধিনায়ককে, ‘প্রতিটি ম্যাচেই একেক রকম ভারসাম্য খুঁজে নিতে হয়। শেষ ম্যাচে আমরা চারজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে খেলেছি। সত্যি বলতে স্ট্রাইকার ছাড়া খেলেছি। আমি খেলেছি ফলস নাইন হিসেবে। ২০১০ সালে স্পেন এভাবে খেলেছে, সেস ফাব্রেগাস এ পজিশনে খেলেছে, একই পজিশনে আমাকে দিয়ে চেষ্টা করেছে কোচ, আমিও চেষ্টা করেছি। আসলে আমাদের বল পায়ে রেখে খেলতে হবে। মাঝমাঠে আমরা যারা খেলছি, তারা সবাই বল পায়ে রাখতে পারি। এজন্য ফাহিম, রাকিব ওরা ভালো খেলার বলের জোগান পেয়েছে, আক্রমণের সুযোগ পেয়েছে।’

গত মার্চে সিশেলসের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের সিরিজের প্রথমটিতে ১-০ গোলে জিতেছিল বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে হেরে যায় একই ব্যবধানে। ওই সিরিজের পারফরম্যান্সের সাথে সাফের পারফরম্যান্সে ফারাক খুঁজে পেয়েছেন জামাল। জানালেন, আগের চেয়ে আরও স্বাধীনতা নিয়ে খেলতে পারছেন তারা।

সাফে নিজেদের সামনের পথচলায় নিচ থেকে গোছাল আক্রমণে ওঠার ছকে গুরুত্ব দিচ্ছেন জামাল। মালদ্বীপ ম্যাচের জয়ের আনন্দে ভেসে যেতে চান না তিনি। দুই ম্যাচ হেরে আসা ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচে তাই সতীর্থদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়ার কুফল বুঝিয়ে দিলেন লেবানন ম্যাচের উদাহরণ টেনে, ‘সবসময় পাল্টা আক্রমণে গেলে হবে না। তাহলে খেলোয়াড়রা ক্লান্ত হয়ে যাবে। আমি নিজেও এ কথা বলেছি। কোচও বিল্ড আপ, পজেশনভিত্তিক ফুটবল এবং প্রতি-আক্রমণনির্ভর ফুটবল বেশি খেলাতে চায়। নিজেরাও কথা বলেছি, যদি আমরা বেশি সময় বল পায়ে রাখতে পারি, তাহলে বেশি আক্রমণের সুযোগ পাব। আত্মবিশ্বাসী, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী নই। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ভালো নয়। লেবাননের বিপক্ষে আমরা শেষ দিকে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে ভালো খেলেও হেরেছি। প্রথমার্ধে আমরা ভালো খেলেছিলাম, দ্বিতীয়ার্ধেও নিজেদের মধ্যে পাসিং ফুটবল খেলছিলাম ভালোভাবে, সে সময় লেবাননও একটু ক্লান্ত ছিল, কিন্তু ওই সময় আমার মনে হয়েছে, আমরা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে গিয়েছিলাম বলে দুই গোল খেয়েছিলাম। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়াটা খুবই ভয়ঙ্কর। আত্মবিশ্বাস থাকা ভালো, কিন্তু প্রতিপক্ষের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধা থাকতে হবে।’

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ

বাংলাদেশ-ভুটান

সরাসরি রাত ৮টা

(টি স্পোর্টস)