সুযোগ মিস করে মন ভাঙা বিদায়

বাংলাদেশ ০ : ১ কুয়েত

প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

‘দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ’খ্যাত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ সবশেষ ফাইনালে খেলেছিল ২০০৫ সালে; আর শেষবার সেমি ফাইনালে উঠেছিল ২০০৯ সালে, ঢাকায়। ১৪ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে পাঁচ আসর পর (২০১১, ২০১৩, ২০১৫, ২০১৮, ২০২১) শেষ চারে উঠেছিল লাল-সবুজ দল; আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল ১৮ বছর পর আবার ফাইনালে খেলার। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গতকাল প্রথম সেমিফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল আসরের অতিথি দল কুয়েত। বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দলটির বিপক্ষে ১০৭ মিনিট পর্যন্ত প্রতিরোধ তুললেও শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে হেরে যায় বাংলাদেশ। অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেয়া গোলটি করেন আব্দুল্লাহ আল বোলৌশি। তবে গোল করার সুযোগ নষ্ট করার খেসারত দিয়ে ২০০৫ সালের পর আবার সাফের ফাইনালে খেলার আশা পূরণ হলো না বাংলাদেশের।

তবে এই হারে লজ্জা নেই। বুক চিতিয়ে লড়ে কুয়েতের মতো শক্ত প্রতিপক্ষকে অতিরিক্ত সময়ে খেলতে নিয়ে যাওয়া, বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে জেতার সম্ভাবনা তৈরি করা। মাঝে একটা বিরতির জন্য র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে ১৪৩-এ এসেছে কুয়েত। কিন্তু একটা সময় (১৯৯৮ সালে) এই দলটি কিন্তু বিশ্ব ফুটবলের সেরা ২৫ দলের মধ্যে ছিল (র‌্যাংকিং ছিল ২৪)। তাদের প্রতিপক্ষ যখন বাংলাদেশ, তখন সহজ জয়েই মাঠ ছাড়ার কথা, সাফেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিতে ওঠে কুয়েত। আমন্ত্রিত দলটিকে শিরোপার অন্যতম দাবিদার মনে করা হলেও মাঠের ফুটবলে তাদের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে ছিল না বাংলাদেশ। কুয়েতের চোখে চোখ রেখে খেলেছে হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার দল। বল দখলে পিছিয়ে থাকলেও ম্যাচে ১২টি শট নেয় বাংলাদেশ, ছয়টিই ছিল লক্ষ্যে। রাকিবের শট পোস্টে না লাগলে গোল হতে পারতো। অন্যদিকে ১৮ শটের ১১টি লক্ষ্যে রাখলেও একটিমাত্র গোল করতে পেরেছে কুয়েত। বাংলাদেশের রক্ষণ ছিল দুর্দান্ত, আক্রমণেও ধারও। আর আলাদা করে বলতে হয় গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর কথা। এমন সব সেভ তিনি করেছেন, নিশ্চিত কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে কুয়েতের। জিকোর গোলকিপিং ছিল এককথায় বিশ্বমানের। বাংলাদেশ যে এই ম্যাচে এতটা সময় টিকে ছিল, দারুণ ফুটবল খেলেছে তার পেছনে বড় অবদান তার। যদিও শেষরক্ষা হয়নি। অতিরিক্ত সময়ে (১১৫+২) যোগ করা সময়ে এসে গোল হজম করে বাংলাদেশ। আবদুল্লাহ বুলুশি যে গোলটি দিয়েছেন, সেটিতে অবশ্য জিকোর করার কিছু ছিল না। বক্সে ঢুকে একজন ডিফেন্ডারের পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি। তবে গোল বাদ দিলে পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে ধারেভারে এগিয়ে থাকা একটি দলের বিপক্ষে যেভাবে নিজেদের মেলে ধরেছেন জিকো-জামাল-মোরসালিন-রাকিবরা, এক কথায় বলা যায়, ম্যাচ হারলেও হৃদয় ঠিকই জিতে নিয়েছে ‘নতুন বাংলাদেশ’।

বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম সেমিফাইনালে দ্বিতীয় মিনিটে গোলের সুবর্ণ সুযোগ পায় লাল-সবুজের দল। বিশ্বনাথ ঘোষের থ্রো ইন থেকে বল পান রাকিব। ডানপ্রান্ত থেকে দেন পাস। কুয়েত ডিফেন্ডার বল মিস করায় বক্সের ভেতর থাকা মোরসালিন বল নিয়েই ডান পায়ে শট করেন। বল গোলরক্ষক মারজুকের ডান হাঁটুতে লেগে ফিরে আসে। সপ্তম মিনিটে ইসা ফয়সাল গোললাইন বরাবর বল ক্লিয়ার করে বাংলাদেশকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন। ২৫ মিনিটে বাংলাদেশ গোলরক্ষক জিকো বল ধরার সময় তাকে অহেতুক আঘাত করেন কুয়েত অধিনায়ক খালেদ হাজিয়া। এ নিয়ে খানিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। মিনিট তিনেক পর রাকিবের দূরপাল্লার শট প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক গ্লাভসবন্দি করেন। ২৯ মিনিটে আল রাশিদির শট ফিস্ট করে জাল অক্ষত রাখেন জিকো। ইসা হেডে বল বিপদমুক্ত করেন। যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে রাকিবের শট কুয়েত গোলরক্ষকের ধরতে সমস্যা হয়নি। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে বিরতিতে যাওয়ার আগে জোর লড়াই করে ক্যাবরেরার দল। দীর্ঘ ১৮ বছরের ফাইনাল খরা ঘোচানোর আশার পালে হাওয়া বাড়ায়।

দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার বাড়ায় কুয়েত। ৫১ মিনিটে সালমানের হেড হৃদয় কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। ৫৪ মিনিটে রাকিবের দূরপাল্লার শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। ৬১ মিনিটে মোরসালিনের বাড়িয়ে দেয়া বল নিয়ে বক্সে জিরো ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে শট নেন রাকিব। বল পোস্টে লেগে ফিরে যাওয়ায় বাংলাদেশ বঞ্চিত হয়। পাল্টা আক্রমণে ৬৬ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে মোরসালিন বল নিয়ে ছুটে যান। বক্সের ভেতর পাস দিলে জামাল বুক দিয়ে বল আদায় করতে ব্যর্থ হন। বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল চোট পেয়ে ৬৮ মিনিটে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন। তার বদলি হিসেবে নামেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম।

৭২ মিনিটে হৃদয় মাঝমাঠ দিয়ে অনেকটা এগিয়ে পাস দেন। রাকিব ঠিকঠাক বল রিসিভ করতে পারেননি। এ সময় আপত্তিকর মন্তব্য করায় ডাগ আউটে থাকা বাংলাদেশের ফিজিও ডেভিড মাগানকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। ৮৬ মিনিটে সহকারী কোচ হাসান আল মামুন হলুদ কার্ড দেখেন। পরের মিনিটে মোরসালিনের জায়গায় মোহাম্মদ ইব্রাহিম মাঠে নামেন। ৮৮ মিনিটে ফাহিমের ক্রসে রাকিব ঠিকঠাক হেড নিতে না পারায় গোল আসেনি।

অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে চোটাক্রান্ত হৃদয়ের জায়গায় মাঠে নামেন মুজিবর রহমান জনি। ৯৮ মিনিটে রাকিব দৌড়ে গিয়ে বক্সে ঢুকলেও প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের কড়া মার্কিংয়ের সময় ভারসাম্য রাখতে পারেননি। পরের মিনিটে আবদুল্লার ক্রসে আল রাশিদির শটে অতিমানবীয় সেভ করেন জিকো। খানিকপর রাশিদির শট ঠেকিয়ে বাংলাদেশ দলে অক্সিজেন সরবরাহ জারি রাখেন তিনি। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে জাল আর অক্ষত রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। আবদুল্লাহ আলবলুশি ডান পায়ের মাটি কামড়ানো শটে লক্ষ্যভেদ করলে লিড পায় কুয়েত।

১০৯ মিনিটে ফাহিমের জায়গায় রবিউল হাসান নামেন। ৫ মিনিট পর আরেক বদলি খেলোয়াড় রহমত মিয়ার দূরপাল্লার শট ধরে ফেলেন কুয়েত গোলরক্ষক। ১১৮ মিনিটে রাকিবের শট এক পায়ে প্রতিহত করেন মারজুক। খানিক পর কর্নার কিকে হেড ঠিকঠাক নিতে পারেননি বিশ্বনাথ। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে সুমন রেজার কিক প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড় কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। তার পরপরই রেফারির শেষ বাঁশিতে বাংলাদেশের আশাভঙ্গে যতি পড়ে!