হেরেও মানুষের হৃদয় জিতেছেন মোরসালিন-রাকিবরা

প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে বাংলাদেশের প্রথম লক্ষ্য সেমিফাইনাল বলে জানিয়েছিলেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। তবে এই স্প্যানিশ কোচের কথায় খুব একটা আশাবাদী ছিলেন না দেশের ফুটবলপ্রেমীরা। অনেকেই ভেবেছিলেন সাফের আরো একটি আসরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়ে ফিরবে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু অবিশ্বাস্য আর অকল্পনীয় নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা। বুক চিতিয়ে লড়ছেন মোরসালিন, সোহেলরা। ফিফা র‌্যাংকিংয়ে ১৪৩ নম্বরে থাকা কুয়েতের সঙ্গে সমান তালে লড়াই করেছেন ১০৭ মিনিট পর্যন্ত। যদিও শেষ অবদি ১৯৮২ বিশ্বকাপ খেলা দেশটির কাছে হেরেই বিদায় নিয়েছে ১৯২তম স্থানে থাকা বাংলাদেশ। এমন হারে লজ্জা নেই। সাহসিকতায় ভরপুর ছিল তরুণ হৃদয়গুলো। হারলেও তারা জিতে নিয়েছেন দেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়। প্রায় ২ বছর জামাল ভূঁইয়াদের প্রধান প্রশিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। দীর্ঘদিন ধরেই শিষ্যদের মোটিভেশন করার চেষ্টা করছেন। এবারের সাফে যাওয়ার আগে কোচ কম্বোডিয়ায় দুটি ম্যাচ খেলিয়েছেন জামালদের। স্থানীয় টিফি আর্মি ফুটবল ক্লাবকে ১-০ গোলে হারিয়ে শুরু বাংলাদেশের। এরপর ফিফা প্রীতি ম্যাচে কম্বোডিয়া জাতীয় দলকেও ১-০ গোলে হারান জামাল ভূঁইয়ারা। সেখান থেকেই যেন উজ্জীবনী শক্তি পেয়ে যান তারা। পরের পথচলাটা ছিল অবিশ্বাস্য। সাফের গ্রুপ পর্বে শক্তিশালী লেবাননের কাছে ভালো খেলেও ২-০ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করে বাংলাদেশ। পরের ম্যাচেই অ্যাটাকিং খেলে মালদ্বীপকে ৩-১ গোলে ধসিয়ে দেন রাকিব হোসেন, তারিক কাজী ও মোরসালিনরা। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ভুটানকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে শেষ চারে জায়গা করে নেন জামালরা। ‘বি’ গ্রুপ থেকে রানার্সআপ দল হিসাবেই সেমিফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। সেখানে তারা ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল কুয়েতকে পায় প্রতিপক্ষ হিসেবে। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নির্ধারিত ৯০ মিনিট কুয়েতের বিপক্ষে সমানতালে লড়াই করেছে বাংলাদেশ। গোলপোস্টের নিচে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকো। কুয়েতের বেশ কিছু দুর্বোধ্য আক্রমণ রুখে দেন তিনি। গোল মিসের হতাশার আগুনে পুড়েছেন শেখ মোরসালিনও। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ে হার এড়াতে পারেননি হাভিয়েরের শিষ্যরা। তবে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিলেও এই টুর্নামেন্ট থেকে শিষ্যদের পারফরম্যান্সে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের জন্য অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন কোচ। হাভিয়েরের কথায়, ‘ছেলেদের পারফরম্যান্সে গর্বিত আমি। দলের পারফরম্যান্স আসলেই দারুণ ছিল। বাংলাদেশের খেলার মান এটাই (কুয়েতের বিপক্ষের পারফরম্যান্স) হওয়া উচিত। এই টুর্নামেন্টে এসে আমরা যেটা পেয়েছি, সেটা হচ্ছে পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা। প্রস্তুতি ম্যাচসহ গত ছয় ম্যাচে দল ধারাবাহিকভাবে পারফরম করেছে। আমরা যদি এই মান ধরে রাখতে পারি, তাহলে বিশ্বকাপ বাছাই আমাদের জন্য সহজ হবে।’ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছে ১২০ মিনিট রেফারি আমাদের বিপক্ষে ছিল, একারণে আমরা একটু রাগ করেছিলাম। কুয়েতের প্লেয়ারটা অনেক ভুল করেছে, কিন্তু রেফারি ফাউল দেয়নি। এ কারণে আমাদের মনে হয়েছে রেফারি আমাদের বিপক্ষে ছিল। ভারতীয় সমর্থকদের আমাদের অভিনন্দন জানানো দারুণ ব্যাপার। আমি ছেলেদের নিয়ে গর্বিত। কেননা, আমরা ভালো সুযোগ পেয়েছি, কিন্তু গোল পায়নি। সব মিরিয়ে আমরা ভালো পারফর্ম করেছি।’ ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘কুয়েত ও লেবানন না থাকলে এবারের সাফে ফাইনাল খেলত বাংলাদেশ।’ গোল মিস করায় রাতে ঘুমাতে পারেননি আরেক ফরোয়ার্ড শেখ মোরসালিন। তার কথায়, ‘কখনো ভাবিনি এই অবস্থায় বল পেয়েও গোল মিস হবে। কেন না, ওই পজিশনে অনুশীলনে আমি নিয়মিত গোল করে থাকি। সাধারণত এমন পজিশন থেকে গোল মিস হয় না। কেন যে এমন হলো বুঝতে পারছি না। সারা রাত আমি ঠিকমতো ঘুমোতে পারিনি। শুধুই আফসোস করেছি।’ এদিকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা দুটি পৃথকœ ফ্লাইটে ব্যাঙ্গালুরু থেকে আজ ঢাকায় ফিরছে। মুম্বাই ও হায়দ্রাবাদ হয়ে দুপুর ১টা ১০ মিনিটে প্রথম দল এবং ১টা ১৫ মিনিটে দ্বিতীয় দলটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।