বিদায়ি বার্তায় যা বললেন তামিম

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

চোটের সঙ্গে লড়াই আর নানা উত্থান-পতন পেরিয়ে বর্ণাঢ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন তামিম ইকবাল। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুলাই, হারারেতে অভিষেক আর ঘরের মাঠ চট্টগ্রামে শেষ উপস্থিতি। সব মিলিয়ে ৩৮৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে লাল সবুজের প্রতিনিধিত্ব করা তামিম ওয়ানডে ক্রিকেটে রান সংখ্যায় বাংলাদেশের সবার চেয়ে এগিয়ে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তামিম। তার বিদায়ি বক্তব্যে থাকল ধন্যবাদ পর্ব, থাকল ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার কথাও। কিছুটা অভিমানের সুরও ফুটে উঠল কোথাও কোথাও। সংবাদকর্মীদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানালেন এখনকার ক্রিকেটারদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করতেও। তামিমের বিদায়ী বক্তব্যে যা বললেন, ‘সাধারণত এরকম একটি পরিস্থিতিতে লোকে বক্তব্য লিখে নিয়ে আসে। আমি ওরকমভাবে প্রস্তুত নই। সারা জীবনই যখনই কোথাও আমি বক্তব্য দিয়েছি বা কিছু বলি, কোনো কিছু লিখে নিয়ে যাই না।’ তিনি বলেন, ‘আমি খুব বেশি বড় করব না। ছোট রাখার চেষ্টা করব। গত (বুধবার) আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিই আমার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এই মুহূর্তেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি।’ ‘এটার পেছনে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। এটা নিয়ে ভাবছিলাম আমি... এটার ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে, যেটা আমার মনে হয় না এখানে বলার দরকার আছে। এমন না যে হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বেশ কিছু দিন ধরেই কথা বলছিলাম, এমনকি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলছিলাম। আমার মনে হয়েছে, আমার সরে দাঁড়ানোর ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের উপযুক্ত সময় এটিই।’ তামিম বলেন, ‘আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে হবে আমার, যেটা আমার মনে হয় আপনাদের প্রাপ্য। আমি সবসময় একটা কথা বলেছি যে, খেলাটি আমি খেলেছি (কান্না) সবসময় বলেছি, ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য (আবার কান্না) সবসময় বলেছি, ক্রিকেট খেলি বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য। নিশ্চিত নই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই ১৬ বছরে আমি তাকে গর্বিত করতে পেরেছি কি না...।’ ‘আরো অনেককে ধন্যবাদ জানাতে হবে আমার। সবচেয়ে ছোট চাচা, যিনি ইন্তেকাল করেছেন, আকবর খান উনার হাত ধরেই আমার প্রথম ক্রিকেট বলের টুর্নামেন্ট খেলা। তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে তপন দা নামে একজন কোচ আছেন, যিনি ছোটবেলা থেকে (কান্না আবারও) তার কাছে ছোটবেলা থেকে অনুশীলন করেছি। তাকে ধন্যবাদ জানাই।’ তিনি বলেন, ‘সব খেলোয়াড়, যাদের সঙ্গে আমি খেলেছি অনূর্ধ্ব-১৩, ১৫, ১৭, ১৮, ১৯ প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় লিগ, জাতীয় দল, সব জায়গায় যাদের সঙ্গে খেলেছি, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে, জাতীয় দলে যারা সতীর্থ ছিল, তাদের। ক্রিকেট বোর্ড অবশ্যই, যারা আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে এতো লম্বা সময় ধরে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার, নেতৃত্বও দিয়েছি, তাদের ধন্যবাদ জানাই।’ ‘আমার আসলে বেশি কিছু বলার নেই। আমি চেষ্টা করেছি, সত্যিই নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি (কান্না) হয়তো আমি যথেষ্ট ভালো ছিলাম না, কিংবা ভালো ছিলাম না জানি না, তবে যখনই মাঠে নেমেছি, নিজের শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’ তামিম বলেন, ‘আরো অনেক কিছু আছে অনেক কিছু বলতে চাই আসলে। তবে আপনারা যেমন দেখছেন, কথা বলতে পারছি না। আশা করি, আপনারা এই পরিস্থিতিকে সম্মান করবেন (কান্না) কথা বলার জন্য পরিস্থিতিটা সহজ নয়। বিশেষ করে, এত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পর যখন ছেড়ে দিচ্ছি, কাজটা সহজ নয়। আশা করি, আপনারা তা অনুধাবন করবেন। আমি দুঃখিত যে এত শর্ট নোটিশে আপনাদের ডাকা হয়েছে। সব সংবাদমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানাই।’ ‘একটি ব্যাপারেই আমি অনুরোধ করব, যারা সামনে ক্রিকেট খেলবে, আপনারা তাদের ব্যাপারে ভালো লিখবেন, খারাপ লিখবেন, কিন্তু তা যেন ক্রিকেটেই থাকে। ক্রিকেটের সীমানার বাইরে যাবেন না। কেউ ভালো খেললে ভালো বলবেন, খারাপ করলে সমালোচনা করবেন। কিন্তু আশা করি, আপনারা বুঝতে পারবেন যে, কখনও কখনও আমরা সীমা ছাড়িয়ে যাই। আমি তাই স্রেফ অনুরোধ করব, যারা ক্রিকেট খেলছে এখন, বিশ্বকাপের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বছর, আশা করি, আপনারা দলের সঙ্গে থাকবেন দলের সদস্যের মতো হয়েই। এটা অনুরোধ করব যে, দলের পাশে থাকুন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ ‘আমার দিক থেকে, আবারও একটি কথা বলছি, নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, সবটুকু দিয়েছি। আবারও একটি কথা পুনরাবৃত্তি করি, আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করেছি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। জানি না কতটা পেরেছি, তবে চেষ্টা করেছি নিজের সেরাটা দিয়ে।’ ‘যাদের ধন্যবাদ জানানো উচিত, এমন কেউ বাদ পড়ে গেলে দুঃখিত। তবে ক্রিকেটার ও মানুষ হিসেবে আমাকে গড়ে তুলতে যারাই সহায়তা করেছেন, সবাইকে হৃদয়ের গভীর থেকে ধন্যবাদ জানাই। আমার মা ভুলে গিয়েছিলাম তার কথা বলতে, আমার ভাই, স্ত্রী, আমার দুই সস্তান আমার এই পথচলায় তাদের অনেক ভুগতে হয়েছে, পাশাপাশি তারা মনে রাখার মতোও অনেক কিছু পেয়েছে। তাদের ধন্যবাদ জানাই।’ ‘এর চেয়ে বেশি কিছু আর বলার নেই। এটাই অনুরোধ করব যে, আমার টপিক এখানেই শেষ করে দিন। অন্তত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য। এটাকে নিয়ে আর বেশি গুতোগুতি করবেন না, কেন বা কী, কী হতে পারত, না হতে পারত। এটার সমাপ্তি টেনে দিন। সবসময়ই বলেছি, যে কোনো ব্যক্তির চেয়ে দল সবসময়ই বড়। দলের দিকে মনোযোগ দিন। এই সিরিজে আরও দুটি ম্যাচ আছে, যে সিরিজ আমাদের জেতা উচিত বলেই বিশ্বাস আমার। এরপর বড় দুটি ট্রফি আছে (এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ)।’ ‘সবাইকে আবার ধন্যবাদ জানাই। আর কিছু বলার নেই। আশা করি অন্য কোথাও আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে। ধন্যবাদ।’